বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:
ভ্যাকসিন নিয়ে সমস্যা কেটে যাবে। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও জেলাশাসকদের সঙ্গে ভারচুয়াল বৈঠকে এই আশ্বাসই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যদিও এই বৈঠক নিয়ে পরে সাংবাদিকদের কাছে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীদের কিছু বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। পাল্টা মুখ খুলেছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীও। মমতার বিরুদ্ধে তিনি রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন। ‘মমতার আচরণ লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদও।
এদিনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিন সরবরাহ করার সময়সীমা তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে ভ্যাকসিন পাওয়া নিয়ে সমস্ত অনিশ্চয়তা দূর হয়ে যাবে। এমনকী, এর ক্যালেন্ডার তৈরি করেও প্রচার করা হবে।’ তবে একই সঙ্গে তিনি এ কথাও বলেন, ‘টিকার অপচয় বন্ধ করতে হবে। ভ্যাকসিন নিয়ে রাজ্যগুলিকে ১৫ দিনের আগাম তথ্য দেবে কেন্দ্র। টিকা নীতিও তৈরি হবে। ঠিক উদ্যোগ নিতে হবে গ্রামাঞ্চলগুলিতে। পরীক্ষা বাড়াতে হবে। টিম তৈরি করে গ্রামে গিয়ে কাজ করতে হবে। ঠিক মতো কাজ করতে পারলে গ্রামগুলিতে করোনা রুখে দেওয়া যাবে।’ যদিও বৈঠক শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বৈঠকে কোনও মুখ্যমন্ত্রীকেই কথা বলতে দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রের কাছ থেকে পর্যাপ্ত টিকা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাংলায় সবাইকে টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া বারবার ধাক্কা খাচ্ছে। আমাকে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দেওয়া হলে তিনমাসের মধ্যে সবাইকে দিয়ে দেব।’
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পাল্টা সমালোচনা করেছেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। রীতিমতো চাঁছাছোলা ভাষায় তিনি বলেন, ‘প্রশাসন চালানোয় যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রুচি নেই, আজ তা ফের প্রমাণিত হল। স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের রাজনীতিকরণ করেছেন।’ শুভেন্দুর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আজ জেলাশাসকদের আলোচনা ছিল। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী যে কাজ করলেন, তা রীতিমতো আপত্তিকর এবং লজ্জাজনক। এর আগেও অনেকবার প্রায় সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেইসব বৈঠকের একটিতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির ছিলেন না। লক্ষ্য করার বিষয় হল, যে সাতজন জেলাশাসকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আজ বৈঠক করেছেন, সেই সাতজনের মধ্যে পাঁচজনই ছিলেন অ–বিজেপি রাজ্যের। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, আমাদের রাজ্যের কোনও জেলাশাসক ছিলেন না।’
মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদও। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, ‘করোনা মোকাবিলায় ভালো কাজ করার জন্য আজ প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন রাজ্যের জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু ওই বৈঠকে পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা করেছেন, তা অশোভনীয়। গোটা আলোচনাটিকেই মুখ্যমন্ত্রী ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। আজ উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসককে ওই বৈঠকে কথাই বলতে দেননি তিনি।’ তিনি বলেন, ‘এর আগে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক ডেকেছিলেন ১৭ মার্চ। কিন্তু ওই বৈঠকে তিনি যোগ দেননি। তার আগেও তিন–তিনটে বৈঠকে তিনি আসেনইনি। কিন্তু প্রশ্ন হল, করোনার মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে জেলাশাসকরা সত্যিই ভালো কাজ করছেন। তা হলে তাঁদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কি কোনও কথা বলতে পারেন না?’
অন্যদিকে, নারদ–তদন্ত মামলার শুনানি একদিন পিছিয়ে গিয়েছে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং মদন মিত্রের গ্রেফতার করা এবং ভিনরাজ্যে মামলা সরানো নিয়ে নারদ–মামলায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের ডিভিশন বেঞ্চে এদিন ছিল শুনানি। কিন্তু অনিবার্যকারণবশত এদিন বেঞ্চ বসেনি। বেঞ্চ যে বসবে না, তা সকালেই জানা যায়। তার পরই তৎপর হয়ে মদন মিত্র হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে নতুন ডিভিশন বেঞ্চ গড়ে শুনানির আবেদন জানান। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন, নতুন ডিভিশন বেঞ্চ গড়া হবে না। মামলার শুনানি হবে শুক্রবার।
সিবিআইয়ের জবাব কি সিআইডি দিয়ে? পাল্টা চাপের খেলা কি শুরু করল রাজ্যের তৃণমূল সরকার? প্রশ্ন উঠেছে, কারণ বৃহস্পতিবার সন্ধেয় বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের জগদ্দলের মেঘনা মোড়ের বাড়িতে হানা দেয় সিআইডি। কিন্তু সাংসদ তখন বাড়ি ছিলেন না। সেই সময় তাঁর বাড়িতে নোটিস লাগিয়ে দেন সিআইডি–র আধিকারিকরা। তাতে বলা হয়েছে, ২৫ মে সকাল ১১টার মধ্যে তাঁকে সিআইডি দফতর ভবানী ভবনে গিয়ে দেখা করতে হবে। সমবায় ব্যাঙ্ক দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছে সিআইডি। সেইজন্যই তাঁকে তলব করা হয়েছে বলে খবর। যদিও এ ব্যাপারে সাংসদের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।