চৌধুরী হারুনুর রশীদ, রাঙামাটি : ২২ মে ২০২০ ইং
বনবিভাগে লোকবল সংকটের কারণে পাহাড়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল বেদখল ও বন উজার করা হচ্ছে ।স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অসহযোগিতায় প্রশাসনিক ও প্রতিষ্ঠানের দন্ধের কারণে বনাঞ্চল ধংসের পাশাপাশি জীব বৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে ।
সম্প্রতি পার্বত্য অঞ্চলের গ্রামীণ সাধারণ বন রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী। তিনি বলেন, পাহাড়ে বিভিন্ন কারণে বন উজাড় হয়েছে এবং হচ্ছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে বন উজার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, বন রক্ষা, বন সৃষ্টি করা খুবই জরুরী। স্থানীয় হেডম্যান-কার্বারীদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সরকারের আইন অনুযায়ী মৌজা বন সংরক্ষণ বা বনায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বনের জমি দখল করে যেসব জায়গায় স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সে সব জমি উদ্ধার করা হবে।সম্প্রতি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে ।
সারাদেশে বনভুমি জবর দখলকারীদের মধ্যে ৮৮ হাজার ২১৫ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বন মন্ত্রনালয় । কিন্ত পাহাড়ে জবরদখলকারী কি ব্যবস্থা নেয়া হবে তা এখনো অনিশ্চিত ।
অনুসন্ধানে ও বনবিভাগ সুত্রে জানাগেছে, বনবিভাগের লোকবল অভাবে রির্জাভ ফরেষ্ট এ অবৈধ অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, বেদখল হয়ে বসতি স্থাপনের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিওসহ বহু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এসব বনাঞ্চলে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নতুন করে বৃক্ষ রোপন করা যাচ্ছে না –পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলোর বিরোধিতার কারণে। দেশে বনবিভাগের রেঞ্জকর্মকর্তার পদ ছিল প্রায় ৬০৬৮টি । ইতিমধ্যে অনেকেই সহকারী বনসংরক্ষক ও বিভাগীয় বনকর্মকর্তা পদন্নোতি পেয়েছে অবসরে গেছেন অনেক অভিজ্ঞ ও দক্ষ রেঞ্জ কর্মকর্তা । এর মধ্যে সারাদেশে রেঞ্জকর্মকর্তা কর্মরত ছিল প্রায় ৮২ জন ইতি মধ্যে অবসরে গিয়ে বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৬০ জন রেঞ্জকর্মকর্তা । প্রধান বনসংরক্ষক ,বনসংরক্ষক,রেঞ্জ কর্মকর্তা বিভাগীয় বনকর্মকর্তা পদোন্নতি হওয়ায় নন ক্যাডার দিয়ে পরিচালিত ডিভিশন অফিস। এতে অনেক পদ শুন্য হয়ে যাচ্ছে বলে বনঅধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে।
বনবিভাগ সুত্রে জানাগেছে,রাঙামাটির সীমান্তবর্তী রাঙ্গুনিয়া পাহাড়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল দখল করে একাধিক বৌদ্ধ ধর্ম প্রতিষ্টান নিমার্ণ গড়ে তুলেছে । বৌদ্ধ ধর্মকে পুজি করে শরণংকর থের (৩৫) বিরুদ্ধে অভিযোগ থানায় মামলা দেয়া হয়েছে । খুরুশিয়া রেঞ্জ সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে শতাধিক হেক্টর বনভুমি দখলে নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে।
ঘটনাস্থলে শিলক পুলিশ ফাড়ির এস আই মুজিবুর রহমান সংবাদকর্মীদের বলেন, বনবিভাগের লোকবল সংকটের কারণে কেউ বনভুমি দখল করতে গেলে বাধা দেয় বনবিভাগ । তিনি আরো বলেন,সরকারী বনভুমি দখলের কোন নিয়ম নেই । তাই বনবিভাগের লোকবলের সংকটের কারণে পুলিশের সহযোগিতা নেন। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অসুপ্রবেশ করত.নিমার্ণ কাজ বন্ধ করতে নির্দেশ দেয় বনবিভাগ ও পুলিশ । রির্জাভ ফরেষ্ট দখলের অভিযোগে শরণংকর থের (৩৫) বিরুদ্ধে এই পর্যন্ত ২টা থানায় মামলা দেন বনবিভাগ।
বনবিভাগ ও অনুসন্ধানে জানাগেছে,পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও খুন,অপহরন,চাদাবাজিসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরকার এবং যৌথ মালিকাধিন বনায়ন করতে পারছে না। যে কোন সংরক্ষিত বনে উন্নয়ন করতে গেলে চাদা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারী অস্ত্রের মহড়া দিয়ে বনাঞ্চলে আতংক সৃষ্ট্রি করে বনপ্রহরীদের । এই কারণে মুলত: বনাঞ্চলে রেঞ্জ অফিস করতে পারছে না বনবিভাগ ।
এ সব বিষয়ে রাঙামাটি সার্কেলের বনসংক্ষক সুবেদার ইসলাম প্রতিবেদককে লকডাউনের কারণে অফিস বন্দ তাই দু:খিত বলে কোন উত্তর দেননি।