সেলিম সানোয়ার পলাশ, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ ‘আমাদের খোঁজ এখন আর কেউ রাখে না, কেউ ভুল করেও দেখতে আসে না। আমি সকাল থেকে বেরিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুই এক মঠো করে যা দেই তাই দিয়ে চলছিলো আমার একার সংসার। কিন্তুু এখন যার বাড়িতেই যাচ্ছি তারাই আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। আমি কি খাবো কি ভাবে চলবো যানি না। শুনছি করোনা ভাইরাসের জন্য সরকার নাকি বাড়িতে বাড়িতে খাবার দিচ্ছে। কিন্তুু কয়েক দিন যাবত অসুস্থ হয়ে আমি বিছানয়া ছিলাম, কেউ আমাকে খাবার দিতে নিয়ে আসেনি।’ বস্তির বাসিন্দা মৃত লোকমান হোসেনের স্ত্রী-সানোয়ারা বেগম (৮০) আক্ষেপ করে এ কথা গুলো বলেন।
রাজশাহী মহানগরীর ৭০০ ছিন্নমূল পরিবার এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। করোনার প্রকোপের কারণে তাদের না আছে কাজ আর ঘরে না আছে খাবার।
রাজশাহী নগরীর জিয়ানগরের বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হলেও এখন সেই বস্তিবাসীদের দেখার কেউ নেই। সাতশ’ পরিবারের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। এসব উচ্ছেদ হওয়া লোকজন গত দুই বছর ধরে রাজশাহী পবা উপজেলার দক্ষিণ বালিয়া এলাকায় বসবাস করে আসছেন। সানোয়ারা বেগম (৮০) আরো বলেন, ‘লোকমুখে শুনেছি কমিশনার না কি বাড়িতে বাড়িতে রাতের আধারে চাল, ডাল, আলু দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের বস্তিতে ৩৩ পরিবার রয়েছে সবাই দিন আনে দিন খায়। এক পরিবার মাঝে সরকারি কোন খাবার পায়নি।’ একই এলাকার বিউটি বেগম (৩৮) বলেন আমার স্বামী ভ্যান চালক দিন আনে দিন খায়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। আমার এক ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে পড়েছি বিপাকে। ভোটের সময় কমিশনাদের দেখা পাওয়া গেলেও এখন আর দেখা পাওয়া যায় না।’
এ বিষয়ে রাসিক ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমীন টুনুর সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘শুধু ৩৩ পরিবার নয়, জিয়ানগর বস্তির প্রায় সাতশত পরিবার ছিন্নমূলভাবে বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছে। কেউ রাজশাহী পবা উপজেলার দক্ষিণ বালিয়া, কেউ মোল্লøাপাড়া, দারুশা, দামকুড়া, টুলটুলিপাড়া প্রভৃতি স্থানের সবাই আমাকে ভোটার আইডি কার্ড জমা দিয়ে গেছে। কিন্তু সরকারি অনুদান না থাকায় আমি দিতে পারছি না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন থেকে ৩০০ টন ও ডিসি অফিস থেকে ২০০ টন চাল দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু নগরীর কেশবপুর এলাকায় অসহায় মানুষের মাঝে দিতে গিয়ে শেষ হয়ে গেছে।’