ফাতেমা ফেরদৌস রেসিম,লন্ডন:
তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি, চট্রগ্রাম এয়ারফোর্সের ভিতরে আমাদের বাসা, ঘর থেকে সোজা তাকলে এয়ারপোর্ট দেখা যায়, বাসার অপর সাইডে থাকত কিছু ম্যাকানিকরা , এর মাঝে বেশ বয়সী একটা লোক ছিল, কালো লম্বা হালকা পাতলা, তবে স্বভাব ভাল ছিলনা, মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকতো,চৈত্রের কোনো এক গরম রাত, আমি আম্মুর রুমের জানালা খোলা বলে পাশের সিঙ্গেল একটা বেডে শুয়েছি, ছোট বোন আর আম্মু ডাবল বেডে, গভীর রাত হঠাৎ মনে হলো জানালা দিয়ে দুটো লম্বা হাত এসে আমার মুখে গোলাপী রং এর রাবার ঢুকিয়ে দিচ্ছে, আমি গোংগাচ্ছি, প্রাণ পণে চেষ্টা করছি কিন্তু সেই দুই হাত দুটোর এতো শক্তি যে আমার মুখ ভরে দিয়েছে রাবারে, আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মুখ দিয়ে ফেলা বের হচ্ছে, এর মাঝে ঘুম ভেঙ্গে গেলো,বুঝলাম আমার সমস্ত বালিশ ভেজা, মুখের চারপাশ দিয়ে তখনও ফেনা লেগে আছে, গলা ঘাড় বালিশ ভরা মুখের ফেনা, হঠাৎ চোখ পড়লো জানালার দিকে, তখন দেখি ঐ হাত দুটো জানালা দিয়ে আমার মশারীর বাইরে পর্যন্ত আছে
আর যে দাঁড়িয়ে আছে সে ঐ কালো ম্যাকানিকটা, সাদা দাঁত বের করে আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে হাত ছোট করে নিচ্ছে, প্রথমে ভাবলাম হয়তো ঘুমের ঘোর তখনওআছে তাই এমন হচ্ছে, এজন্য তাড়াতাড়ি মশারি তুললাম , কিন্তু না সত্যিই লোকটা দাঁড়িয়ে, বলে রাখি আমি কিন্তু প্রচন্ড সাহসী, সব কিছুর শেষ আমার দেখা চাই, সেজন্য মশারী তুলে বিছানা থেকে পা বের করে বসলাম, ততো সময়ে লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে উল্টোভাবেই হাঁটতে লাগলো, তখন মনকে বললাম না এটা হয়তো স্বপ্ন, উঠে দাঁড়ালাম দৌড়ে জানালা পর্যন্ত গেলাম আর দেখলাম লোকটা উল্টো হেটে কিছুটা গিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো, এর মাঝে বলে রাখি আমার বিছানা থেকে জানালা কম করেও ১০/১৫ ফুট দূরে ছিল, পরে আম্মুকে ডেকে তুললাম এবং বললাম সব ঘটনা, আম্মুও দেখলো আমার গলা মুখ ভেজা, বালিশ ভেজা, বললেন সেটা অশরীরি কিছু ছিল, জানালায় লোহার গ্রীল ছিল বলে আমাকে বের করে নিয়ে যেতে পারেনি, এমন কি আমাদের মেইন দরজাও স্টীলের ছিল, আম্মু বললো এরকম নাকি বহু মানুষকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায়, এদের লাশ পুকুরে বা জঙ্গলে পাওয়া যায়, আমার ভাগ্য ভাল তাকে দেখতে গিয়ে তার সাথে যে যাইনি !
সত্যি বললে যখন এই ঘটনা ঘটে তখন আমি ভূত মোটেও বিশ্বাস করতাম না কারন সাইন্সের স্টু্ডেন্ট আমি, কিন্তু আজোও ঐ রহস্যের সমাধান খুঁজে পাইনি ????
লেখিকা:ফাতেমা ফেরদৌস রেসিম,লন্ডন।