1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

প্যারিসের ভিলমিন পার্ক থেকে ইউরোপের শরণার্থী জীবনের বাস্তব গল্প

  • Update Time : রবিবার, ৬ জুন, ২০২১
  • ৩২২৬ Time View
রবিবার থেকে প্রায় ৩০০ অভিবাসী বাসস্থানের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। ছবিঃ ইনফোমাইগ্রেন্টস

প্রত্যয় ওয়েব ডেস্ক : রবিবার থেকে প্যারিসের ১০ নং ডিস্ট্রিক্ট এর ভিলমিন পার্ক দখল করে থাকা ৩০০ অভিবাসীর দায়িত্ব অবশেষে সরকার নিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন দেশের রাস্তায় রাত কাটিয়ে ক্লান্ত শরণার্থীদের জীবন যুদ্ধ ইউরোপে পৌঁছে আশ্রয় আবেদন করার পরেও শেষ হয়না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করে ব্যর্থ হয়ে জীবনের পথ খুজেঁ না পাওয়া শরণার্থীরা তাদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে।

৩০ মে রবিবার থেকে থেকে প্যারিসের ১০ং ডিস্ট্রিক্ট এর ভিলমিন পার্ক দখল করে বাসস্থান এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে প্রায় ৩০০ অভিবাসী। আন্দোলনটি কালেক্টিভ রিকুইজিশন নামক একটি সম্মিলিত প্লাটফর্ম থেকে করা হয়। অবশেষে ৩ জুন তাদের দায়িত্ব নেয় সরকার এবং তাদেরকে পার্ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। পার্ক দখল আন্দোলনে অংশ নেয়া অভিবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগ ছিল চাড, আফগানিস্তান ও সুদান থেকে আগত। অভিবাসীরা ইউরোপে আসার সংগ্রাম এবং তাদের জীবনের নানা দিক ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানায়।

২৭ বছর বয়েসি আফগান যুবক হোসেন: “আমার জীবন এখন নরক”

‘‘আমি ২০১৫ এর শেষে ফ্রান্সে আসি, আসার কয়েক মাস পরে আমার আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আমি ফ্রান্স ছেড়ে লুক্সেমবার্গ চলে যায় কিন্তু সেখানে আমি আশ্রয় আবেদন জমা করতে পারিনি। এসব দেশের ভাষা আমি জানি না এবং আমি নিজেকে তৈরি করতে কি করা উচিত, তা বুঝে উঠতে পারিনি৷ আমি স্পেনে গিয়েও আমার ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করি, তবে সেখানেও বেশ প্রশাসনিক জটিলতা ছিল” কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন হোসেন।

হোসেন বলেন, “২০ দিন হলো আমি আবার আমি ফ্রান্সে ফিরে এসেছি। আমি আবার আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছি, এখন আমি শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য ফরাসি দপ্তর (অফপ্রা) তে সাক্ষাৎকারের জন্য অপেক্ষা করছি”।

আমি প্যারিসে ফিরে আসার পর থেকে রাস্তায় বাস করছি। গত রবিবার বাসস্থানের দাবিতে প্যারিসের রিপাবলিক চত্বরে যে আন্দোলন হয়েছিল সেখানে যোগদান করি। পরে পুলিশ সমাবেশ ভঙ্গ করে দিলে এখন আন্দোলনকারীদের সাথে ভিলমিন পার্কে এসে রাত কাটাচ্ছি।

“আফগানিস্তান ছাড়ার পর ছয় বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেছে, কিন্তু আমি এখনও ইউরোপে বৈধ অভিবাসী বা রেসিডেন্ট কার্ড পায়নি। এটা চিন্তা করতেই খারাপ লাগে যে কিভাবে আমি এতগুলো বছর রাস্তায় কাটিয়ে দিয়েছি। আমি বুঝতে পারছি আমার অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে । আমার আশ্রয় আবেদন যদি গৃহীত না হয় এবং একটি থাকার জায়গা ব্যবস্থা করতে না পারি, তবে আমাকে আবার আফগানিস্থান ফিরে যেতে হবে। আমি বিশ্বাস করি যে শেষ পর্যন্ত আমি আফগানিস্তানে বেঁচে থাকার চেয়ে মারা যাব। আমার জীবন এখন নারকীয়”, জানান হোসেন ।

আন্দোলনরত অভিবাসীরা একটি বাসযোগ্য আবাসস্থালের দাবি জানিয়েছে। ছবিঃ : Solidarité migrants Wilson
আন্দোলনরত অভিবাসীরা একটি বাসযোগ্য আবাসস্থালের দাবি জানিয়েছে। ছবিঃ : Solidarité migrants Wilson

সোমালিয়া থেকে আসা ২৯ বছর বয়সী কামি: “আমি মানবতার উপর বিশ্বাস ফিরে পেতে চাই”

“আমার আশ্রয়ের আবেদন অফপ্রা প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং আমাকে আবার ইতালি ফিরে যেতে বলা হয়। তবে সেখানকার জীবনযাত্রার অবস্থা এখানে এর চেয়ে অনেক খারাপ, তাই আমি ফ্রান্সে থাকতে চাই”।

“আমি প্রায় দুই বছর ধরে প্যারিসে বাস করছি। আমাকে বেশ কয়েকবার আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত জরুরি বাসস্থানে পাঠানো হয়, তবে এটি একটি অস্থায়ী সমাধান। প্রতি বার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আমাকে আবার রাস্তায় ফিরে যেতে হয়। জীবনযাত্রার উন্নতির দাবি নিয়ে আমি রোববারের রিপাবলিক চত্ত্বরে আয়োজিত সমাবেশে অংশ নিয়েছি। আজ আমি আশ্রয় চাই৷ কোনো রোদ, বৃষ্টি, পুলিশ এবং ইঁদুরের উপদ্রব নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমি মানবতার প্রতি আমার বিশ্বাস ফিরে পেতে চাই”, বলেন কামি।

ইয়েমেন থেকে আগত ৩৮ বছর বয়সী আবদো: “আমি ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে রাস্তায় বাস করছি”

“২০০৪ সালে আমার ইউরোপে আসার পর থেকে আমি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় সবগুলো দেশে গিয়েছি। আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল নেদারল্যান্ডসে, সেখানে দেশটির কর্তৃপক্ষ আমার আঙুলের ছাপ রেখে দেয়। আমি তিন বছর ধরে আমস্টারডামের রাস্তায় বাস করেছি। সেখানে আমার বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনা ছিল না”।

“২০০৭ সালে আমি যুক্তরাজ্যে যাই। কিন্তু সেখান থেকে দু’বছর পরে আমাকে আবার নেদারল্যান্ডে ফেরত পাঠানো হয়। তার কয়েক বছর পরে আমি ফ্রান্সে, এরপর জার্মানি এবং নরওয়ে গিয়েছিলাম। যেখানেই যাই না কেন আমাকে আবার নেদারল্যান্ডস ফেরত পাঠানো হয় কিনা এই আতঙ্কে থাকতাম আমি। আমি আবার ফ্রান্সে ফিরে এসেছি। প্রায় ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি ইউরোপের রাস্তায় বসবাস করছি”।

আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অভিবাসীরা পার্কে অবস্থান করছিল। ছবিঃ ইনফোমাইগ্রেন্টস
আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অভিবাসীরা পার্কে অবস্থান করছিল। ছবিঃ ইনফোমাইগ্রেন্টস

“রবিবার রিপাবলিক চত্ত্বরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে আমি ছিলাম। তবে আমি মনে করি না রাতারাতি এই আন্দোলন আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে বদলে দেবে। আমি আশঙ্কা করছি কর্তৃপক্ষ হয়ত পরিস্থিতি শান্ত করতে কয়েক সপ্তাহের জন্য আমাদের একটি জিমনেসিয়াম বা অস্থায়ী হোটেলে রাখবে। তারপরে আবার আমাদের রাস্তায় পাঠিয়ে দিবে, এরকম বহুবার হয়েছে।

তবে বিভিন্ন এনজিও এবং সংস্থাগুলো দুর্দান্ত কাজ করছে, আমি তাদেরকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। তবে এনজিও কার্যক্রম যথেষ্ট নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের যে চোখে দেখে এবং আচরণ করে তাতে আমি হতবাক হয়েছি। এগুলোর কোন কিছুই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিচালিত হচ্ছে না’’।

এনজিও এবং সাহায্য সংস্থার কর্মীরা আন্দোলনরতদের শুকনো খাবার এবং কফি বিতরণ করে। ছবিঃইনফোমাইগ্রেন্টস
এনজিও এবং সাহায্য সংস্থার কর্মীরা আন্দোলনরতদের শুকনো খাবার এবং কফি বিতরণ করে। ছবিঃইনফোমাইগ্রেন্টস

৩৪ বছর বয়েসী সুদানের নাগরিক সাইয়েদ: “রাস্তা মানুষকে অনেক পরিবর্তন করে ফেলে”

“আমি ২০১৬ সালে সুদানের যুদ্ধ থেকে পালিয়ে এসেছি। আমি লিবিয়া এবং ইতালি পার হয়ে ফ্রান্সে এসেছি। ২০১৮ সালে শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার পরেও আমি বেশিরভাগ বছর রাস্তায় কাটিয়েছি।’’

“রাস্তা মানুষকে বদলে দেয়, আপনি যেই হন না কেন, আপনি নতুন একজন মানুষে পরিণত হবেন৷ আমি সংস্থাগুলিকে তাদের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই তবে তারা কেবলমাত্র রুটি এবং কফি সরবরাহ করতে পারে। আমি আশা করি যে কর্তৃপক্ষ আমাদের এবং আমাদের মত যাদের আশ্রয় আবেদন নাকচ হয়েছে তাদেরকে উপযুক্ত আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাবে। আমরা সকলেই মানুষ এবং আমরা সকলেই ভাল ব্যবহার এবং যত্ন পাওয়ার অধিকার রাখি৷’’

“ফ্রান্সে আসার পর থেকে আমার অনেক ভালো লোকের সাথে দেখা হয়েছে, যারা আমার প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অভিবাসন ইস্যু একটি রাজনৈতিক বিষয়৷ এটাই বাস্তবতা। তবে যেসব সমস্যায় আমাদের কোনো দায় বা ভূমিকা নেই, সেখানে কি আমাদের মূল্য দিতে হবে?”

সুত্র :ইনফোমাইগ্রেন্টস

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..