ওয়েব ডেস্ক: দেশের আলোচিত-সমালোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’র নতুন কমিটি ঘোষণা হতে যাচ্ছে আজ সোমবার। এদিন রাজধানীর খিলগাঁওয়ে মাখযানুল উলুম মাদরাসায় সংবাদ সম্মেলনে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। এই কমিটিতে কারা স্থান পাচ্ছেন, কী চমক থাকছে সেটা নিয়ে দেশজুড়ে আলেম-ওলামার মধ্যে এখন আলোচনা তুঙ্গে।
সূত্র জানিয়েছে, এবারের কমিটিতে অপেক্ষাকৃত ক্লিন ইমেজের অরাজনৈতিক লোকদের রাখার চেষ্টা করেছে দলটি। ইসলামি ধারার রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রভাব ও বলয়মুক্ত থাকবে নতুন কমিটি। এ ছাড়া আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া অর্ধশতাধিক নেতার কেউই নতুন কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
হেফাজতে ইসলামের একটি সূত্র জানায়, নতুন কমিটির একটি বড় চমক হলো আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফকে সহকারী মহাসচিব করা হতে পারে। এ ছাড়া আল্লামা শফীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল কুদ্দুসকে করা হতে পারে সহ-সভাপতি।
তবে হেফাজতে ইসলামের আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, নতুন কমিটিতে আমির পদে মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী এবং মহাসচিব পদে মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীই থাকছেন। প্রাথমিকভাবে ৩৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। পরবর্তী সময়ে কমিটিতে যুক্ত হতে পারে আরও সদস্য।
সোমবার (৭ জুন) রাজধানীর খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদরাসায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন সংগঠনের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস।
তিনি বলেন, ‘৪০ সদস্যের মধ্যেই এই কমিটি করা হচ্ছে।’
নতুন কমিটি ঘোষণার বিষয়ে সংগঠনের বিলুপ্ত কমিটির স্বেচ্ছাসেবা বিষয়ক সহ-সম্পাদক (খিলগাঁও) মাওলানা রাশেদ বিন নূর জানান, নতুন কমিটি ঘোষণার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
সূত্র জানায়, নতুন কমিটিতে অপেক্ষাকৃত ক্লিন ইমেজের অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। ইসলামি ধারার রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রভাব ও বলয়মুক্ত থাকবে নতুন কমিটি। এ জন্য বিগত কমিটিতে আধিপত্য বিস্তার করা জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও খেলাফত মজলিসের নেতারা নতুন কমিটিতে স্থান না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া অর্ধশতাধিক নেতার কেউই নতুন কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন না বলে নিশ্চিত করেছে হেফাজতের একাধিক সূত্র।
কমিটিতে মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, মাওলানা মুহিব্বুল হক (সিলেট), মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব (বরিশাল), মুফতি জসিমুদ্দিনসহ (হাটহাজারী) ১১ জনকে সহ-সভাপতি করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে মাওলানা সাজিদুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মাওলানা আবদুল আউয়াল (নারায়ণগঞ্জ), মাওলানা আরশাদ রহমানী (বসুন্ধরা), মাওলানা আনোয়ারুল করীমের (যশোর) নাম শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মাওলানা মীর ইদ্রিস (চট্টগ্রাম), অর্থ সম্পাদক পদে মুফতি মুহাম্মদ আলী মেখল, প্রচার সম্পাদক পদে মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানীর নাম শোনা যাচ্ছে।
এ ছাড়াও কমিটি থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মামুনুল হক, নাছির উদ্দিন মুনির, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, অর্থ সম্পাদক মনির হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, হাসান জামিল, মুফতি হারুন ইজহারসহ অর্ধশতাধিক আলোচিত অনেক নেতা।
আল্লামা শফীর ইন্তেকালের পর গত বছরের ১৫ নভেম্বর জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট হেফাজতের কমিটি ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনকে কেন্দ্র করে মার্চের ২৫, ২৬ ও ২৭ তারিখ রাজধানীসহ দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা ও তাণ্ডবের ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হেফাজতের অর্ধশতাধিক নেতা গ্রেফতার হন। প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে ২৫ এপ্রিল কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন হেফাজতের আমির জুনাইদ বাবুনগরী। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকেই আহ্বায়ক কমিটির প্রধান করা হয়। আগের কমিটির মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদীকে আহ্বায়ক কমিটির মহাসচিব আর সিনিয়র নায়েবে আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে করা হয় প্রধান উপদেষ্টা। সদস্য করা হয় আল্লামা সালাহউদ্দীন নানুপুরী ও মিজানুর রহমানকে (পীরসাহেব দেওনা)।
সূত্র: জাগো নিউজ