নিউজ ডেস্ক: একসময় বলা হতো, সকল রোগের মা হলো বহুমূত্র রোগ বা ডায়াবেটিস। এখন মনে হয়, সকল রোগের বাপ-মা দুটোই হবে ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা। ডিপ্রেশন হলো ইমোশনাল ইলনেস যেটি এমন একটি ভয়াবহ ব্যাপার যা আমাদের কখনোই সুস্থ থাকতে দেবে না, সুস্থ চিন্তা করতে দেবে না, বিনয়ী করবে না, তৃপ্ত করবে না। ঘন সবুজ বনেও সকালের নির্মল বাতাসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে দেবে না। বরং ডিপ্রেশন আমাদের জীবনের প্রাণময়তা ও সজীবতা নষ্ট করে ফেলবে।
ডিপ্রেশন কেবল আমাদের দুটি কমপ্লেক্সে ‘উপহার’ দিতে পারে। এক. ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স বা হীনম্মন্যতা। দুই. সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স বা নিজেকে অন্যের চেয়ে বড় মনে করা। দুটিই সাইকোলজিকাল সমস্যা। যেমন: একজন ভালো আছে, সুস্থ আছে, চলার উপযোগী অর্থ আছে। তারপরও অন্যের আপেক্ষিক সফলতা (কোনো সফলতাই চূড়ান্ত বা সার্বজনীন নয়) দেখে আমরা যে অযথায় হীনম্মন্যতায় ভুগী তাই হলো ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স।
অন্যদিকে সাময়িক সফলতা দেখে আমরা যে নিজেকে বড় মনে করি তাই হলো সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স। আমরা যে সফলতা অর্জন করে নিজেকে বড় মনে করি, সেটিও একসময় নিজের রঙ ও গ্ল্যামার হারিয়ে আমাদের কাছে তার আবেদন হারিয়ে ফ্যাকাশে ও বিবর্ণ হয়ে যায়। তখন আমরা আবার অন্যের সফলতা দেখে মরীচিকার পেছনে ছুটি। তার তুলনায় নিজেকে ছোট মনে করি। অন্যের আয়নায় নিজের সুন্দর প্রতিবিম্বকেও তখন ভীষণ কুৎষিত মনে করে অবসাদগ্রস্ত হই। এ অবসাদগ্রস্ততা সবকিছুর প্রতি অনীহা সৃষ্টি করে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, শিক্ষাগত, পেশাগত ও সামাজিক জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে জীবনের স্বতস্ফূর্ততা ও উচ্ছলতা ব্যাহত করে।
যেমন, একজন উদ্যোক্তা হলেন। পরবর্তীতে তার একজন নির্বাহী অফিসার বন্ধুর ক্ষমতার চর্চা দেখে নিজে হীনম্মন্যতায় ভুগে তিনিও নির্বাহী হলেন। এতেও তিনি তৃপ্ত হবেন না। তখন হয়তো আরও অধিক পাওয়ার ও অথরিটির আশায় তিনি এমপি বা মন্ত্রী হওয়ার পেছনে ছুটবেন। এ ছোটাছুটিতেই জীবন শেষ হয়ে যাবে। হয়তো সাময়িক সফলতা আমাদের কিছুদিন সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভোগাবে। কিন্তু জীবনের প্রকৃত যে অর্থ- ভালো মানুষ হওয়া, সেটি আর হওয়া হবে না।
অনেকেই হয়তো বলবেন, তাহলে জীবনে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকবে না। প্রতিযোগিতা না থাকলে তো সভ্যতা থেমে যাবে না। প্রতিযোগিতা থাকবে না। কারণ কোনো প্রতিযোগিতাই শেষ পর্যন্ত সুস্থ থাকে না। প্রতিযোগিতা সবসময় আপনাকে অন্যের ছায়া দেখে তার মতো হতে প্রলুব্ধ করবে। কিন্তু আপনি নিজের ছায়াকে অতিক্রম করে কখনো অন্যের ছায়ার মতো হতে পারবেন না। এ না-হতে পারার বেদনা আপনাকে কেবল তাড়িয়ে বেড়াবে। পাগলা ঘোড়ার মতো ছোটাছুটি করাবে। কখনো সৌম্য, শান্ত, প্রশান্ত ও স্থির হতে দেবে না। সমুদ্রের জলরাশি দেখে, পাখির কলরব শুনে ও ভোরের শিশির স্পর্শ করে মুগ্ধ হতে দেবে না।
অন্যদিকে আমরা যদি প্রতিযোগিতা থেকে মুক্ত হয়ে নিজের আকাশ নিজের মতো করে নির্মাণের চেষ্টা করি, তাহলে সে আকাশের বৃষ্টিতে ভেজার সুখ নিজের মতো করে উপভোগ করতে পারব। এ বৃষ্টির প্রতিটি ফোটা আমাদের মন থেকে হিংসা, দ্বেষ, অবসাদ ও বিষণ্নতা দূর করে আমাকে নির্মল ও উজ্জ্বল করবে। যে উজ্জ্বলতায় কেবল আমি নই, গোটিা পৃথিবীকেই আমি উজ্জ্বল করতে পারব।
বিল গেটসের ভাষায়,
Don’t compare yourself with anyone in this world.
If you do so, you are insulting yourself.
লেখক ; শিক্ষক, লোক প্রশাসন বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।