ফ্রান্সের একটি প্রশাসনিক আটক কেন্দ্রে (সিআরএ) এক মালিয়ান এবং তার চার মাস বয়সি মেয়েকে আটকে রাখাকে “সীমার বাইরে” বিবেচনা করে বৃহস্পতিবার তার নিন্দা জানিয়েছে ইইউ মানবাধিকার আদালত।
ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত (ইসিএইচআর) এর রায়ে বলা হয়েছে, প্যারিস ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশনের ধারা ৩ (অমানবিক ও অবমাননাকর আচরণের বিধিনিষেধ), ৫.১ (স্বাধীনতা ও সুরক্ষার অধিকার) এবং ৫.৪ (আটক রাখার বৈধতা সম্পর্কে রায় দেওয়ার অধিকার) লঙ্ঘন করেছে।
দেশটির স্ট্রাসবুর্গ শহরে অবস্থিত এই ইইউ আদালতের রায়ের ফলে ফ্রান্সকে উক্ত ভুক্তভোগী মহিলা ও তার সন্তানকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে মোট ১৬,৭৮০ ইউরো দিতে হবে।
“পালানো ঝুঁকি”
২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি ২৩ বছর বয়সি আলোচিত মালিয়ান অভিবাসী ইটালি থেকে ফ্রান্সে প্রবেশ করেন। আদালত তার রায়ে জানায়, ভুক্তভোগী নারী “যৌনাঙ্গচ্ছেদ” বা নারীদের খৎনা এবং জোরপূর্বক বিয়ে থেকে বাঁচতে মালি থেকে পালিয়ে এসেছিলেন।
সে বছরের জুলাই মাসে তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। নভেম্বরের শেষে ‘‘ডাবলিন বিধিমালা’’ অনুযায়ী তার আশ্রয়ের আবেদন যাচাই করার জন্য তাকে ইটালিতে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে তার শিশুসহ ৪৮ ঘন্টার জন্য প্যারিসের মেনিল-আমোলে নামক একটি সিআরএ আটকেন্দ্রে আটক রাখা হয়েছিল। সেসময় ফ্রান্সের লোয়ার-এ-সের প্রেফেকচুর উক্ত ভুকভোগী যেকোনোভাবে পালিয়ে যেতে পারে বলে মত দিয়েছিল।
মালিয়ান তরুণী তখন ইটালির উদ্দেশে বিমানে চড়তে অস্বীকার করে সেই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে আবেদন জানান৷ আদালত ফেরত পাঠানোর সময়সীমা আরও ২৮ দিন বাড়িয়ে দেয়।
অবশেষে ডিসেম্বরে তাঁর অস্থায়ী বসবাসের আবেদনের অনুরোধটি বৈধ ঘোষণা করে ইইউ মানবাধিকার আদালত বা ইসিএইচআর। যার ফলে আটককেন্দ্রে রাখার ১১ দিন পরে তাকে মুক্তি দিয়ে আটক প্রক্রিয়া শেষ করতে বাধ্য হয় ফরাসি সরকার।
পরবর্তীতে এই তরুণী মা এবং তার মেয়েকে সামাজিক সেবা এবং অস্থায়ী আবাসনের অনুমতির আওতায় আনা হয়।
সপ্তমবারের মত দোষী সাব্যস্ত ফ্রান্স
ইউরোপীয় কাউন্সিলের বিচারিক বিভাগ জানিয়েছে, শিশুটির খুব অল্প বয়স৷ ডিটেনশন সেন্টারে অভ্যর্থনার শর্ত এবং আটকের সময়কালের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে ফ্রান্স চার মাস বয়সি শিশু ও তার মাকে ডিটেনশন সেন্টারে আটক রেখেছে যা স্পষ্টত ইইউ মানবাধিকার কনভেনশনের ৩ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।
https://bit.ly/3BnLVDz
আদালত রায়ে আরও বলা হয়েছে যে ফরাসি বিচার বিভাগ আটকের মেয়াদ বাড়ানোর আগে নাবালিকা সন্তানের বিশেষ মর্যাদাকে মোটেই নিবেচনায় নেয়নি। ইইউ আদালত স্মরণ করিয়ে দেয়, ফরাসি আইন অনুযায়ী একজন অপ্রাপ্তবয়স্ককে কেবলমাত্র একটি প্রক্রিয়ার সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে এবং যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আটকে রাখা যেতে পারে।
ফরাসি ও ইউরোপীয় মানবাধিকার আইনজীবী নিকোলা হেরবিউ এই বিষয়ে টুইটারে লিখেছেন, “২০১২ সাল থেকে এ নিয়ে সপ্তমবারের মতো শিশুদের আটক রাখার দায়ে ফ্রান্স অভিযুক্ত হলো। ২০২০ সালেও একই আদালত দু’জন শিশুর বয়স বিবেচনায় না নিয়ে আটক রেখে মানবাধিকারের ব্যত্যয় ঘটনা হয়েছে বলে রায় দিয়েছিল।”