বিশেষ প্রতিবেদন:চতুর্থ দফার লকডাউনের কথা ঘোষণা করে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। এই লকডাউন চলবে ১৮ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত। সেই সঙ্গে কেন্দ্র এ কথাও জানিয়ে দেয়, এই লকডাউনে সারাদিন কী খোলা থাকবে, কী থাকবে না, গাড়ি–ঘোড়া চলবে কিনা, সে বিষয়ে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি রাত সাতটা থেকে পরের দিন সকাল সাতটা পর্যন্ত সারা দেশেই ‘নাইট কার্ফু’ জারি করে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়, খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাতের ওই ১২ ঘণ্টা সময় কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারবেন না।
কিন্তু সোমবার এই ‘কার্ফু’ শব্দতেই নিজের আপত্তির কথা জানিয়ে দিলেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে লকডাউন কড়া ভাবেই কার্যকর থাকবে বলেও তিনি জানান। অথচ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার যে সব বিষয়ে ছাড় দিয়েছে, রাজ্য সরকার ইচ্ছে করলে সেই ছাড় না দিয়ে আরও কঠোর হতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার যে সব বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তা কোনও মতেই কোনও রাজ্য সরকার লঘু করতে পারবে না। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের বক্তব্য বিতর্ককে উস্কে দেবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। স্বাভাবিক কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পরই সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে বিজেপি।
এদিন নবান্নে এক সাংবাদিক সম্মেলন মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার বলেন, ‘আমি এই নিয়মকে কার্ফু বলতে রাজি নই। আমার কথা হল, সন্ধের পর কেউ বাড়ি থেকে বের হবেন না। বাড়িতে থাকুন। আনন্দে থাকুন। মুক্ত মনে থাকুন।’ কিন্তু ‘কার্ফু’ শব্দে তাঁর আপত্তি কেন? মমতা জানান, এই শব্দের মধ্যে কেমন যেন একটা ভয়ের ব্যাপার আছে। তাই তাঁর সরকার যে সরকারি ভাবে কার্ফু ঘোষণা করছে না, সে কথাও তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘খুব ইমার্জেন্সি ছাড়া কার্ফু জারি করা যায় না। সাম্প্রদায়িক হানাহানির মতো ঘটনায় কার্ফু জারি করা যেতে পারে।’
তা হলে করোনার মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিকে কি তিনি ইমার্জেন্সি বলে মনে করছেন না? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে পাওয়া যায়নি। তবে রাজ্য জুড়ে কড়া ভাবেই যে লকডাউন কার্যকর থাকবে, সে কথা এদিন তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন। যদিও সোমবার কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করেছে, তাতে মাঝে মাঝে লকডাউন কতখানি কার্যকর রয়েছে, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। এমনকী, রাতের দিকেও শহরের রাস্তায় অনেক গাড়ি চলাচল করতে দেখা গিয়েছে। অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে এই ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্যই রাজ্য সরকারকে তা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
অবশ্য চতুর্থ দফার লকডাউনে মুখ্যমন্ত্রী কিছু ছাড় দিয়েছেন। জানিয়েছেন, কনটেনমেন্ট জোনকে এ, বি এবং সি —এই তিন ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। তিনি জানিয়ে দেন, ২১ মে থেকে কনটেনমেন্ট এ জোন ছাড়া রাজ্যের বাকি অংশে সব বড় দোকান খুলবে। ২৭ মে থেকে জোড়–বিজোড় নীতিতে খোলা হবে হকার্স মার্কেটের দোকান। শপিং মল খোলা না গেলেও সেখানে থাকা অফিস সরকারের নিয়ম মেনে খোলা যেতে পারে। সরকারের নিয়ম মেনে সেলুনও খোলা যাবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংবাদিক বৈঠকের পরই তাঁর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করা হয় বিজেপির তরফে। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী একটা নিয়ম করে ফেলেছেন। তা হল, কেন্দ্র যা বলবে, ঠিক তার উল্টোটা বলবেন তিনি। আর তা করতে গিয়েই এই করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যের মানুষকে তিনি চরম বিপদের মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন।’ কনটেনমেন্ট জোনকে তিন ভাগে ভাগ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এত জোন ভাগ করা উচিত নয়। এর ফলে মানুষ বিভ্রান্তই হবে বেশি।’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুও। তিনি বলেছেন, ‘কার্ফু আর নাইট কার্ফুর মধ্যে তফাত বোঝার ক্ষমতা আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর নেই। কার্ফু শব্দ ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় সরকার আরও কড়া ভাবে লকডাউন প্রয়োগ করতে চেয়েছে। কারণ, বাংলার পাশাপাশি বেশ কিছু রাজ্যের অনেক মহল্লায় দেখা যাচ্ছে, সন্ধে হলেই উৎশৃঙ্খল মানুষ জটলা করছেন। সে সব বন্ধ করার জন্য এই কার্ফু জারি করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু কার্ফুতে আপত্তি জানিয়ে সেই জটলাকেই কার্যত অক্সিজেন দিলেন।’