নিজস্ব প্রতিবেদক: সবুজ আহমেদ, ঢালিউড সিনেমা
জমকালো সূচনার পর হারিয়ে যাওয়ার গল্প তো ইন্ডাস্ট্রিতে বিস্তর শোনা যায়। এবার এমন একজনের কথা বলবো, যিনি নিজের বাজে সূচনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিপুল বিক্রমে ফিরে এসেছেন, নিজেকে নিয়ে গেছেন অনেক উচু কাতারে।
২০০২ সালের এক জুন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয় এক শিশু সন্তান। নাম রাখা হয় সবুজ আহমেদ।
ছোটবেলা থেকেই বাংলা সিনেমা দেখে বেড়ে ওঠার কারণে সিনেমার প্রতি উন্মাদতা ক্রমশ বাড়তেই থাকে। কোন বাঁধাই তাকে দমন করতে পারেনি। সিনেমার সাথে জড়িত হলেও মুসলিম পরিবারের রক্ষণশীল মনোভাব চায়নি সবুজের ক্যারিয়ার ও সিনেমায় দিয়ে হোক।
কিন্তু ছেলের পাগলামোর কাছে ধরাশায়ী হতে হয় বাবা আব্দুর রশিদের। অনেকটা জোর করেই বাবার নির্দেশনায় অভিনেতা হিসেবে আবির্ভাব ঘটে রূপালি পর্দায়। কিন্তু যথাপুযুক্ত অনুশীলনের অভাবে তাঁর ফ্যাকাসে অভিনয় স্পষ্টতর হয়ে উঠে সিনেমার মাঝে। ২০১২ সালে অভিষেক সিনেমা ‘খোদার পরে মা’ মুখ থুবড়ে পড়ে বক্স অফিসে।
অভিনয় জীবনের শুরুতে বড়সড় ধাক্কা খেয়ে শিক্ষা পেলেন। বুঝে গেলেন কেবল স্বপ্ন থাকলেই চলবে না, স্বপ্নপূরণের জন্য নিজেকে সেভাবে তৈরি করতে হবে। তাই সময়টা অভিনয় মনোনিবেশ করলো। মনে যদিও লালিত ছিলো অভিনেতা হিসেবে নিজের গড়ার, তার আগে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত মানুষ হিসেবে গড়তে মরিয়া হয়ে ওঠেন।
মাস কয়েক বিরতির পর, ‘ভালোবাসার রং’ এর মতো অসাধারণ গল্পের দারুণ চরিত্রে কাজের সুযোগ পান। তারই ধারাবাহিকতায় কিংবদন্তি অভিনেতা নায়ক রাজ রাজ্জাকের মতো প্রতিভাবান অভিনেতাদের সাথে অভিনয়ের সুযোগ তাঁকে প্রভাবিত করে নিজেকে পরিণত সাবলীল রূপে গড়ে তোলার। এরপর কালক্রমে তিনি কেবল নিজের ক্যারিয়ারই নয়, বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পালাবদলেও রাখলেন বিশাল ভূমিকা রাখে।
‘তবুও ভালোবাসি’ সিনেমায় নেগেটিভ ইমেজের চরিত্র তাঁকে বড্ড ভাবিয়ে তোলে। দর্শক কী তাকে এত সহজে মেনে নিবে নেগেটিভ ইমেজে? কিন্তু সেদিকে কর্ণপাত না করে চরিত্রটির প্রয়োজনে নিজেকে সেভাবে গড়ে নিয়েছে। টানা কয়েক মাস ধরে অনুশীলন চলে, চরিত্রের সাথে মিশে যেতে।
এমনকি সিনেমার সম্ভাব্য নায়িকা মাহিয়া মাহির সাথে প্রণয়ালাপ ব্যাপারটা মাহিকে আজো ভড়কে দেয় চিন্তা করতে, সে কি আদৌ তার সাথে সত্যি প্রেম করছিলো না! যখন গল্পটি সিনেমাতে গড়ালো, ফলাফল অবিসম্ভাবী দেখালো। প্রত্যেকেই মোহিত হলো সবুজের অভিনয়ে।
‘ইঞ্চি ইঞ্চি প্রেম’ সিনেমাতেও সবুজ আহমেদের নেগেটিভ শেডের চরিত্রটি নিয়ে তাঁর মনে প্রফুল্লতা বড্ড বেশি ছিলো। ববির সাথে সান্নিধ্যতা সেসময়ে মিডিয়া পাড়ায় গুজবের সৃষ্টি করে। কিন্তু চরিত্রানুযায়ী সবুজের ববির সাথে একাগ্রচিত্তে মিশে যাওয়া মিডিয়ার কাছে আগুনে হাওয়া দেওয়ার মতোই কাজে দিলো। ফলাফল অবিস্মরণীয়। দূর্দান্ত সাফল্যের পাশাপাশি সিনেমাটিতে অভূতপূর্ব অভিনয়ের দরুণ সেরা অভিনেতার পুরষ্কার সবুজের ঝুলিতে আসে।
সেরা অভিনেতার পুরষ্কার কেবল ফাহাদের কাজের প্রতি অনুপ্রেরণা বাড়ায়নি বরং অভিনয়ের প্রতি ক্ষুধা দিনকে দিন আরো বাড়িয়ে তুলেছে। কিন্তু বাঁধ দেখা দিলো ইন্ড্রাস্টি পাড়ায়। তাঁর ‘কিস্তিমাত’ সিনেমাটি যদিও তুমুল প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এই সিনেমাতেও তার চরিত্রটিতে নেগেটিভ ইমেজের ফলস্বরূপ সু-স্পষ্টতর।
যার ফলে একের পর এক একই ধরনের চরিত্রের গল্প ঘিরে ধরেছে সবুজকে ঘিরে। নিজেকে একবিন্দুতে একীভূত করতে চায়নি সবুজ। বরং মুখের উপরে অনেক ভালো মাপের পরিচালককেও না করে দিয়েছেন। যদিও এমন সিদ্ধান্তের দরুণ মনক্ষুন্ন হয়েছে অনেকের, কিন্তু ফাহাদ এগিয়ে গেল তার ব্যতিক্রমী চিন্তাচেতনায়।
‘এইতো প্রেম’ রোমান্টিক গল্পে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন একেবারে সাদামাটা প্রেমিক হিসেবে। অন্যদিকে স্যাটায়ারধর্মী ‘আমেন’ সিনেমাতে তাঁর সরলমনা চরিত্রটি দর্শকের প্রশংসায় মুখরিত হয়ে উঠে।
সবুজ তার এক সাক্ষাতকারে বলছিলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল নায়ক রাজ রাজ্জাক স্যারের সাথে ভালোবাসার রং সিনেমাতে স্ক্রিন শেয়ার করা। সেসময়ে যদিও আমি চলতি সময়ের পরিচিত মুখ ছিলাম৷ কিন্তু চরিত্রের প্রয়োজনে আমি যখন রাজ রাজ্জাক স্যারের কলার ধরে রাগীস্বরে কথা বলছিলাম। বিশ্বাস করবেন না ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছিলো। বারবার মনে হচ্ছিলো দৃশ্যটা কোনভাবে এড়িয়ে যাই। কিন্তু স্বয়ং রাজ্জাক স্যারই এগিয়ে আসলেন আমাকে স্বাভাবিক হতে। দৃশ্যটা স্বাভাবিক ভঙ্গিকে করতে পেরেছি দেখে আমি নিজেই হতবাক হয়েছি। রাজ্জাক স্যারের আমার কাজের প্রশংসা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আমি সবসময় উনাকে আমার আইডল ভেবেছি।’
সবুজ আহমেদ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে অনেকটা খুঁতখুঁতে। যদিও সূচিবায়ু টাইপ কিছু নয়। কিন্তু আশেপাশের পরিচ্ছন্নতা মুড রিফ্রেশ করে বলেই মানেন তিনি। ব্যস ‘তারকাটা’ সিনেমায় জার্মোফোবিক চরিত্রটি একেবারে খাপেখাপ হয়ে গেল। একজন সূচিবায়ু লোকের ভ্রমণকে ঘিরে চমৎকার জীবনধর্মী গল্পটিকে।
‘আয়নাবাজী’ পিরিয়ডিক ধাঁচের গল্পতে সবুজের চমৎকার লুক আর চরিত্রটি দারুণ ছাপ ফেলে দর্শকের মাঝে। এতদিনে দর্শকের মাঝে জনপ্রিয় অভিনেতা রূপে চারদিকে সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
‘রাজনীতি’ গল্পটি তিন কাজিনের জীবন ঘিরে নির্মিত হলেও ফাহাদের চরিত্রটি সিনেমায় অন্য মাত্রা যোগ করে। চরিত্রানুসারে তাঁকে লুকিয়ে করা রাখা হয় দীর্ঘ সময় ধরে। যার ফলে গুমোট স্বভাবের অনুভূতিগুলোকে ধামাচাপা দেওয়া অদ্ভুতুড়ে এক চরিত্রে ফুটে উঠেছে।
কেবল একজন অভিনেতা হিসেবে নয়, ব্যক্তি মানুষ হিসেবেও সবুজ আহমেদ খুবই সহজ সরল হাস্যোজ্জ্বল স্বভাবের মানুষ।চাইবো এভাবেই তিনি তাঁর অভিনয়ের জাদুতে জড়িয়ে রাখুক দর্শকদের।