ওয়েব ডেস্ক: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দলের নানা বিষয় উঠে এসেছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারনী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন।
জাহাঙ্গীরের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি
গুরুত্বপূর্ণ ওই সভায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির দায়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিতও এসেছে সভা থেকে।
কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মেয়র জাহাঙ্গীরের বিষয়টি উত্থাপন করলে শুরুতেই বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরকে কী ভাষায় শোকজ দেওয়া হয়েছে এবং উত্তর কী এসেছে আমরা জানতে চাই। পরে ওবায়দুল কাদের বৈঠকে উপস্থিত সবাইকে পড়ে শোনান।
এরপর নাছিম বলেন, জাহাঙ্গীর অমার্জনীয় অপরাধ করেছে। শোকজের কোথাও অপরাধ স্বীকার করেনি। এই কুলাঙ্গারের আওয়ামী লীগ করার কোনো অধিকার নেই।
এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস বলেন, জাহাঙ্গীর অপরাধের কথা স্বীকার করেননি। জাহাঙ্গীরের বক্তব্য জাতির অস্তিত্বে আঘাত হেনেছে। তার অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ। জাহাঙ্গীরকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, জাহাঙ্গীর আমাদের অস্তিত্বে আঘাত হেনেছে। আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ। এখানে বিএনপি-জামায়াত আঘাত করার সাহস দেখাতে পারেনি। জাহাঙ্গীর সেই সাহস দেখিয়েছে। তার আওয়ামী লীগ করার অধিকার নেই।
অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, এ ধরনের অপরাধীকে আওয়ামী লীগ করতে দেওয়া যায় না। জাহাঙ্গীরের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এরপর বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে বিতর্কিত করতে বিএনপি-জামায়াত যে সুরে কথা বলে জাহাঙ্গীরও সেই সুরে কথা বলেছে। জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে আমাদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ না হলে জাহাঙ্গীর জুট ব্যবসা কীভাবে করত, হাজার কোটি টাকার মালিক কীভাবে হতো। তাকে শুধু দল থেকে বহিষ্কারই নয়, গুরুতর এই অপরাধের জন্য মামলা করতে হবে। মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করতে হবে।
স্বাস্থ্য সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা বলেন, এই অবমাননা কোনোভাবেই সহ্য করার মত নয়।
তিনিও জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। বৈঠকে উপস্থিত প্রায় ৩৫ জন নেতাই জাহাঙ্গীরকে দল থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
আইনানুগ ব্যবস্থা
এর জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, বিএনপি-জামায়াত বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সমালোচনার সাহস এভাবে দেখায়নি, জাহাঙ্গীর যে ভাষায় কথা বলেছে। ভবিষ্যতে এই ধৃষ্টতাপূর্ণ অপরাধ যাতে কেউ করতে না পারে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে সে ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হবে।
এ সময় জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে উপস্থিত সবাইকে শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করেন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে। মেয়র পদ থেকে কীভাবে তাকে অব্যাহতি দেওয়া যায় সে ব্যাপারেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন বলে নেতাদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
নতুনদের নিয়ে দল সাজাব
এই পর্ব শেষে স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রসঙ্গে আলোচনা উঠলে ৮ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের রাজনীতি সম্পর্কে রিপোর্ট পেশ করেন শেখ হাসিনার কাছে। প্রায় সব বিভাগের ইউপি ভোটে বিদ্রোহীদের আধিপত্য, নিয়ম শৃঙ্খলা কেউ মানছেন না বলে রিপোর্টে তুলে ধরেন সাংগঠনিক সম্পাদকরা।
এ সময় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, কোন ইউনিয়নে কোথায় কারা বিদ্রোহীদের মদদ দিচ্ছে তাদের তালিকা তৈরি কর। আওয়ামী লীগের খেয়ে-পরে যারা আওয়ামী লীগের ক্ষতি করছে সেই নেতাদের আমি বাদ দিয়ে দেবো। দলের নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী ও ত্যাগীদের দিয়ে নতুন করে দল সাজাব।
অশনি সংকেত
পরে সময় ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম মাদারীপুরের কালকিনি ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে বিদ্রোহীদের কারণে নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে জানিয়ে বলেন, এটা আমাদের জন্য অশনি সংকেত। জবাবে প্রধানমন্ত্রীও বলেন, অবশ্যই অশনি সংকেত।
কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগ কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ
সভায় রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক তার উপস্থিতিতে কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের নেতারা জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের লাঞ্ছিত করার বিষয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করেন। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দিতে নির্দেশ প্রদান করেন।