ওয়েব ডেস্ক: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত (মৃদু বা মাঝারি মাত্রায়) রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি কিংবা মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনে করোনার মুখে খাওয়ার ওষুধ মলনুপিরাভির।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে বেক্সিমকো ফার্মা আয়োজিত এক সায়েন্টিফিক সেশনে চিকিৎসকরা এ তথ্য জানান।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় চিকিৎসকরা বলেন, মলনুপিরাভির কোভিড-১৯ চিকিত্সায় একটি ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারে; কারণ এটি মৃদু থেকে মাঝারি কোভিড-১৯ রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ হ্রাস করে। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় সময়োপযোগী চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আসায় বেক্সিমকো ফার্মার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন চিকিৎসকরা। তারা মলনুপিরাভিরের দাম সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে রাখার জন্য বেক্সিমকো ফার্মাকে ধন্যবাদ জানান (প্রতি ক্যাপসুল ৪৫ টাকা)।
“কারেন্ট সিনারিও অন কোভিড-১৯” পাওয়ার্ড বাই ইমোরিভির শীর্ষক এই সেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. বিল্লাল আলম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির।
ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ রিসার্চ সেন্টারের প্রধান অধ্যাপক ডা. রিদওয়ানুর রহমান “কারেন্ট সিনারিও অন কোভিড-১৯” এর উপর একটি প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন। এ সময় তিনি কোভিড-১৯ এর মৃদু থেকে মাঝারি ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য ওরাল অ্যান্টিভাইরাল থেরাপির গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং মলনুপিরাভির এখানে একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও জানান।
তিনি জানান, মৃদু থেকে মাঝারি পর্যায়ের কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিত্সায় মলনুপিরাভির বিশ্বের প্রথম ওরাল অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ, যা যুক্তরাজ্যের মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্ট রেগুলেটরি এজেন্সি দ্বারা ৪ নভেম্বর অনুমোদন পায়। মলনুপিরাভির বর্তমানে বেশ কয়েকটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দ্বারা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে; যার মধ্যে অন্যতম ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইউএস-এফডিএ)।
রিদওয়ানুর রহমান বলেন, মুখে সেবনের জন্য মলনুপিরাভির বাড়িতে ব্যবহার করা সম্ভব, যা কোভিড-১৯ চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এটি সংক্রমিত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করতে পারে, তাই অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও হ্রাস পায়।
এমএসডি (মেয়ার্ক শার্প অ্যান্ড ডহমি কর্পোরেশন) কর্তৃক প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, ২৯ দিন পর মলনুপিরাভির নেওয়া ৭.৩ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় যেখানে প্লেসেবো নেওয়া ১৪.১ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে জরুরিভিত্তিতে ভর্তি করাতে হয়েছে। মলনুপিরাভির ভাইরাসের প্রতিলিপির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া ঘটিয়ে কাজ করে। ফলে এটি ভাইরাসকে প্রতিলিপি সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে শরীরে ভাইরাসের মাত্রা কমিয়ে আনতে ও রোগের জটিলতা হ্রাস করতে সহায়তা করে।
ওষুধটির জেনেরিক ভার্সন বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বেক্সিমকো ফার্মা এই সম্ভাব্য জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা সুযোগটির প্রাপ্যতা ও ব্যয় কমিয়ে আনতে সাহায্য করছে যা দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ও টিকা পায়নি এমন ব্যক্তিদের জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
সমাপনী বক্তব্যে প্রফেসর ড. বিল্লাল আলম অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য সকল অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান এবং স্বল্পতম সময়ে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় সম্ভাবনাময় ওষুধ নিয়ে আসার জন্য বেক্সিমকো ফার্মাকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ডাক্তারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বেক্সিমকো ফার্মার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান বেক্সিমকোর মার্কেটিং ডিরেক্টর রিজভী উল কবির। তিনি বলেন, বেক্সিমকো মহামারি চলাকালীন সর্বদা চিকিৎসকদের পাশে ছিল এবং থাকবে। বেক্সিমকো ফার্মা ভবিষ্যতে সাশ্রয়ী মূল্যে সর্বাধুনিক থেরাপিউটিক বিকল্প এবং মানসম্পন্ন ওষুধ নিশ্চিত করবে এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।