প্রত্যয় ডেস্ক রিপোর্ট : আত্মহত্যা হচ্ছে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াবিশেষ।
প্রতিবছর প্রায় দশ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এর মতে প্রতি বছর সারা বিশ্বে যে সব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে আত্মহত্যা ত্রয়োদশতম প্রধান কারণ। কিশোর-কিশোরী আর যাদের বয়স পঁয়ত্রিশ বছরের নিচে, তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা। নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অনেক বেশি। পুরুষদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা নারীদের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ।
গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা নব্বই ভাগ আত্মহত্যার সাথেই কিছু না কিছু মানসিক রোগ যুক্ত থাকে। মন খারাপ বা ডিপ্রেশনের সমস্যা এদের মধ্যে অন্যতম। ডিপ্রেশন ছাড়াও আরো কিছু মানসিক রোগ যেমন বাইপোলার ডিসঅর্ডার, বিভিন্ন ধরনের নেশার প্রবণতা, পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, এটেনশন ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিসঅর্ডার ইত্যাদি আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।
অনেক সময় আপাত সুখী মানুষের মনেও হতাশার কালো অন্ধকার লুকিয়ে থাকে। আমরা তাঁকে হাসতে দেখি, গাইতে দেখি। কিন্তু হাসির শেষের নীরবতা আমাদের চোখে পড়ে না। আসলে বিভিন্ন মানুষের চাহিদা বিভিন্ন। আবার সময়ের সাথে সাথে চাহিদা পরিবর্তিত হয়। অনেক সময় আমরা বুঝি না যে সমস্ত চাহিদা সবসময় পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। এই চাওয়া ও পাওয়ার তারতম্য, খুব কাছের মানুষের মৃত্যু বা আলাদা হয়ে যাওয়া, একাকী থাকতে বাধ্য হওয়া, চাকরী চলে যাওয়া, উপার্জন বন্ধ হওয়া, দারিদ্র্য, ছোট বেলায় ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্থা ইত্যাদি আমাদের মস্তিষ্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেক মানুষ আছেন যারা এই সব সহ্য করেও জীবনপথে সামনের দিকে এগিয়ে যান। কিন্তু সবার মস্তিস্ক সেই চাপ সহ্য করতে পারে না এবং এই অতিরিক্ত চাপ মস্তিষ্কে কিছু রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণে তারতম্য সৃষ্টি করে। এরা ক্রমশ হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে থাকেন ও আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পড়েন।
আত্মহত্যা চিন্তা বা আত্মহত্যা মূলক আচরণ মূলত অত্যধিক মানসিক চাপের বহিঃপ্রকাশ। এটা স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। যদি কারো মধ্যে আত্মহত্যার লক্ষণ দেখা যায় তাহলে সেটা কোনোভাবেই অবহেলা বা উপেক্ষা করা উচিত নয়। যেকোনো ধরনের আত্মহত্যা সম্পর্কিত কথা অনেক গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে হলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শিশুদের বিকাশের সময় তাদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা সফলতার মতো ব্যর্থতাকেও মেনে নিতে পারে। পারিবারিক বন্ধনগুলো দৃঢ় করতে হবে আর পরিবারের প্রত্যেকের সঙ্গে সুন্দর ও আনন্দময় সময় কাটাতে হবে। বিষণ্নতা, মাদকাসক্তি, ব্যক্তিত্বের বিকার, সিজোফ্রেনিয়াসহ সকল মানসিক রোগের দ্রুত শনাক্তকরণ ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আত্মহত্যার উপকরণের সহজলভ্যতা কমাতে হবে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে। যেকোনো ধরনের মানসিক সমস্যা বা আত্মহত্যার ইঙ্গিত পেলে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে আত্মহত্যাকারী প্রায় শতকরা সত্তর ভাগ ক্ষেত্রে আত্মহত্যা করার ইচ্ছে কারো কাছে প্রকাশ করেন। এই রকম ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক সে ব্যাপারে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে।
যে ব্যক্তি একবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে তার ভবিষ্যতে আত্মহত্যা করার সম্ভাবনা খুব বেশী। তাই এদের সবসময় চোখে চোখে রাখা ভাল।
অনেক সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত আত্মহত্যার বিবরণ থেকে অনুকরণ করে অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। গণমাধ্যমে আত্মহত্যার বিশদ বিবরণ থাকলে বা আত্মহত্যাকে গৌরবান্বিত করে দেখানো হলে এই প্রবণতা বাড়ে। তাই আত্মহত্যার খবর প্রকাশের সময় গণমাধ্যমগুলোকেও যত্নশীল হতে হবে।
লেখকঃ রিমন বড়ুয়া, শিক্ষার্থী ও লেখক