হারব্যতীত যেকোনো ফলাফলই ভারতকে পৌঁছে দেবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে। তাই সমীকরণটা সহজ স্বাগতিক ভারতীয় দলের জন্য। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেকোনোভাবে হার এড়াতে পারলেই লর্ডসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনাল খেলবে ভারত। কিন্তু সে কাজটা যে অত সহজ হওয়ার নয়!
আহমেদাবাদে সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে ভারতের মনে ভয়ের সঞ্চার করেছিল ইংল্যান্ড। আগে ব্যাট করে ইংলিশরা অলআউট হয়েছে ২০৫ রানে। জবাবে ১৪৬ রানেই ভারতের ৬ উইকেট তুলে নিয়েছিল তারা। এমন শুরুতে ভর করে ম্যাচের দখল নেয়ার আশা জাগালেও, দ্বিতীয় দিন শেষে তা করতে পারেনি ইংল্যান্ড।
পারবেই বা কী করে? ছয় নম্বরে নেমে যে ম্যাচের মোড় পুরোপুরি ঘুরিয়ে দিয়েছেন ভারতের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান রিশাভ পান্ত। দলীয় ৮০ রানে চতুর্থ উইকেট পতনের পর ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন পান্ত। অল্প সময়ের ব্যবধানেই ফিরে যান রোহিত শর্মা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এরপরই শুরু হয় পান্তের লড়াই।
সপ্তম উইকেট জুটিতে ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে যোগ করেন ১১৩ রান। যা ইংল্যান্ডের করা ২০৫ রান টপকে ভারতকে এনে দেয় লিড। দিনের পাঁচ ওভার খেলা বাকি থাকতে আউট হন পান্ত। এর আগেই তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি, আউট হওয়ার আগে করেন ১০১ রান। তবে শুধু এটুকুতে পান্তের ইনিংসের মাহাত্ম্য বোঝানো সম্ভব নয়।
ব্যাটিংয়ে নামার পর সাহসী সব শটে প্রতিপক্ষ বোলারদের আত্মবিশ্বাস নিয়েই যেন খেলেছেন পান্ত। তার সেঞ্চুরিকে ভাগ করা যায় দুই ভাগে। যেখানে প্রথম ৫০ করতে খেলেন ৮২ বল, নেননি তেমন কোনো ঝুঁকি। কিন্তু উইকেটে থিতু হওয়ার পর দ্বিতীয় ৫০ রান করতে তিনি খরচ করেন মাত্র ৩৩ বল।
একপর্যায়ে ৯১ বলে ৫৫ রান ছিল পান্তের। এরপর বেন স্টোকস ও জো রুটের করা পরপর দুই ওভারে হাঁকান জোড়া বাউন্ডারি। তখন চলেয়াসে দ্বিতীয় নতুন বল। জেমস অ্যান্ডারসনের বিপক্ষে নতুন বলের সামনেও খেলেন আক্রমণাত্মক সব শট। প্রথমে অ্যান্ডারসনের ওভারে হাঁকান জোড়া বাউন্ডারি।
এর দুই ওভার পর সবচেয়ে সুন্দর ও অভূতপূর্ব ঘটনার জন্ম দেন পান্ত। নতুন বল হাতে আক্রমণে থাকা অ্যান্ডারসনের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে তিনি খেলেন রিভার্স ল্যাপ, স্লিপ কর্ডনের ওপর দিয়ে বল চলে যায় বাউন্ডারিতে, পান্ত পৌঁছে যান ব্যক্তিগত ৯০ রানে। আর এরপর ছক্কা হাঁকিয়ে তুলে নেন সেঞ্চুরি।
পান্তের এমন মন মাতানো ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ক্রিকেট বিশ্ব। তবে সবচেয়ে বড় প্রশংসাবাক্য তিনি পেয়েছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান বোর্ড সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলির কাছ থেকে। তার মতে, আগামী দিনে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই সর্বকালের সেরাদের একজন হবে পান্ত।
টুইটবার্তায় গাঙ্গুলি লিখেছেন, ‘সে আসলে কতটা ভালো? অবিশ্বাস্য! চাপের মুখে কী অসাধারণ ইনিংস। এবারই প্রথম নয়, অবশ্যই এটাই শেষবার নয়। সামনে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই সর্বকালের সেরাদের একজন হবে। এই একই আগ্রাসী মনোভাবে ব্যাটিং চালিয়ে নাও। যে কারণে তুমি স্পেশাল এবং ম্যাচ উইনার।’
শুধু পান্তের দেশের গাঙ্গুলি একাই নন, পান্তকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচিত অ্যাডাম গিলক্রিস্টও। তার চোখে, সত্যিকারের একজন ম্যাচ উইনার রিশাভ পান্ত। তার ওপর নজর রেখেছেন গিলক্রিস্ট।
গাঙ্গুলির মতো গিলক্রিস্টও টুইটারেই জানিয়েছেন অভিনন্দন। তিনি লিখেছেন, ‘বিষয়টা শুধু এমন না যে তুমি কত রান করলে, এটাও দেখতে হয় যে কখন করলে? আর যখন এ দুইটি বিষয়কে এক করা যায় অর্থাৎ দলের প্রয়োজনের সময় বেশি রান করা যায়, তাহলেই তুমি সত্যিকারের ম্যাচ উইনার। তোমার দিকে তাকিয়ে আছি রিশাভ পান্ত।’
ভারতের সাবেক মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ কাইফ টুইটবার্তায় লিখেছেন, ‘রিশাভ পান্তই প্রমাণ করে দিয়েছে যে, নিজের ওপর বিশ্বাস থাকলে, নিজের খেলার ধরন না বদলেই ম্যাচের পরিস্থিতি বদলে দেয়া যায়। পান্ত যখন আশপাশে থাকে, তখন নিষ্প্রাণ মুহূর্তের কোনো জায়গা নেই।’
নিজের ব্যাটিং সম্পর্কে পান্তের মূল্যায়ন, ‘আমি পরিস্থিতি বুঝে খেলতে পছন্দ করি। সাধারণত বল দেখি এবং সে মোতাবেক খেলতে চেষ্টা করি। এটাই আমার ক্রিকেটের বেসিক। পিচের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার পরই চিন্তা করেছিলাম যে আমি নিজের সব শট খেলব। তবে কখনও কখনও বোলাররা ভালো করলে তাদেরও কৃতিত্ব দিতে হয়। তখন ডিফেন্ড করতে হয় বা সিঙ্গেল নিয়ে খেলতে হয়।’