৩ ডিসেম্বর আইরিশ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরটিই জানায় যে, দেশে বাসরত ১৭ হাজার অনথিভুক্ত অভিবাসীদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে যুক্ত করতে একটি নতুন প্রকল্প চালু করছে কর্তৃপক্ষ।
জানুয়ারি মাসে এই প্রকল্পটি চালু হলে অভিবাসীরা এতে অংশগ্রহণ করবার জন্য আবেদন করতে ছয় মাস সময় পাবেন। আবেদন সফল হলে অভিবাসী ও তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরাও আইনি বাসিন্দা হবার সুযোগ পাবেন।
দেশের বিচারমন্ত্রী হেলেন ম্যাকএন্টির মতে, এমন সিদ্ধান্ত “যুগান্তকারী ও সমাজে স্থিতিশীলতা আনতে প্রয়োজনীয়”।
যদিও কতজন অনথিভুক্ত অভিবাসী দেশে রয়েছেন সে বিষয়ে স্পষ্ট পরিসংখ্যান নেই সরকারের কাছে। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণা থেকে তাদের অনুমান, এই সংখ্যার মধ্যে রয়েছে প্রায় তিন হাজার শিশু। রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত বাজারের বাইরে কালো বা ছায়া বাজারের সাথেই এই অনথিভুক্ত গোষ্ঠীর লেনদেন রয়েছে বলে মত বিচার মন্ত্রণালয়ের।
কারা যোগ্য এই প্রকল্পের অংশগ্রহণ করার?
অভিবাসনের অনুমতি ছাড়া অন্তত চার বছর ধরে যারা আয়ারল্যান্ডে বাস করছেন তারা এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারবেন। যাদের সন্তান রয়েছে, তাদের জন্য এই সময়সীমা তিন বছর।
পাশাপাশি, আবেদনকারীদের প্রমাণ করতে হবে যে রাষ্ট্রের জন্য তারা কোনো ঝুঁকি বয়ে আনবে না। আবেদনকারীদের সুচরিত্রের প্রমাণ দিতে হবে। তা করতে, পুলিশের কাছ থেকে নথি প্রয়োজন যাতে বলা থাকবে আবেদনকারীর কোনো অপরাধে যুক্ত না থাকার কথা। এক্ষেত্রে খুব ছোট কোনো অপরাধ, যা মাইনর অফেন্স হিসাবে গণ্য, তাতে যুক্ত থাকলে কোনো সমস্যা হবে না।
এর সাথে কর্তৃপক্ষ আরেকটি সমান্তরাল প্রকল্প চালু করছে, যার সাহায্যে আশ্রয়ের আবেদন প্রক্রিয়ায় অন্তত দু’বছর ধরে থাকা মানুষরাও এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
শুধু তাই নয়, যাদের বিরুদ্ধে দেশে ফেরত পাঠানোর নোটিশ জারি আছে, তারাও আবেদন করতে পারবেন যদি তারা তিন বা চার বছর ধরে সেখানে থাকেন।
স্টুডেন্ট ভিসায় এসে তার মেয়াদ ফুরাবার পরেও যারা দেশে ফিরে না যাওয়ায় অনথিভুক্ত হয়ে পড়েছেন, তারাও আবেদন করতে পারবেন।
প্রতি পরিবারপিছু সাতশ ইউরো করে প্রক্রিয়াকরণের ফি দিতে হবে। ২৩ বছর বয়েসি সন্তান, যারা পরিবারের সাথে থাকেন, তারাও পরিবারের সাথে একত্রে আবেদন করতে পারেন। পরিবারহীন, একা ব্যক্তিদের জন্য এই খরচ সাড়ে পাঁচশ ইউরো।
যে সকল ব্যক্তির আশ্রয় আবেদন এখনও প্রক্রিয়াধীন, তাদের জন্য এই ফি মওকুফ করা হয়েছে।
কী লাভ এই প্রকল্প থেকে?
এই প্রকল্পে আবেদন করে যারা সফল হবেন, তাদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে দেশের শ্রম বাজার। ঠিকঠাক নথি জোগাড় করতে পারলে সদ্য আইনি বাসিন্দা হওয়া অভিবাসীরা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি বা নাগরিকত্বের দিকে এগোতে পারবেন।
এই প্রকল্প ‘পারিবারিক সদস্যদের পুনর্মিলনের জন্য নতুন শর্তাবলী’ চালু করবে না। ফলে, যে সব পরিবারের সদস্যরা ইতিমধ্যে আয়ারল্যান্ডে রয়েছেন, শুধু তাদের জন্যেই আবেদন করার সুবিধাটি রয়েছে। তবে সরকারের বক্তব্য, ‘যারা এই প্রকল্পে সফলভাবে আবেদন করবেন, তারা পরিবর্তীতে হয়তো ইউরোপ-বহির্ভূত রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে পারিবারিক পুনর্মিলনের জন্য আবেদন করতে পারবেন’।
কমবে অত্যাচার ও অন্যায়
বিচারমন্ত্রী হেলেন ম্যাকএন্টি বলেন যে, বর্তমান আয়ারল্যান্ডে অনথিভুক্ত অভিবাসীরা ‘অসুস্থ হলে চিকিৎসা নিতে বা অপরাধের শিকার হলে পুলিশের দ্বারস্থ হতে বা অন্য যে কোনো রাষ্ট্রীয় সহায়তা নিতে দ্বিধা বোধ করেন’।
এক বিবৃতিতে মন্ত্রী জানান যে, তার আশা, এই প্রকল্প এসব দূর করার পাশাপাশি কাজ দেবার অজুহাতে অভিবাসীদের ওপর ঘটা অত্যাচার কমাতে সাহায্য করবে।
অভিবাসন আয়ারল্যান্ডের জন্য নতুন কোনো বিষয় নয়। ঐতিহাসিকভাবেই আইরিশ জনগণের একটি বড় অংশ যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াসহ বহু দেশে গিয়ে তাদের জীবন কাটিয়েছে।