1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

অনলাইন ক্লাস, পিছিয়ে গ্রামের শিক্ষার্থীরা

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০
  • ২৩৭ Time View

দৈনিক প্রত্যয় ডেস্কঃ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে মহামারি করোনাভাইরাস। বাংলাদেশও হু হু করে বাড়ছে এ ভাইরাসের আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। দেশে করোনা শনাক্তের পর মার্চের শেষ দিকে বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক পাঠদান কর্মসূচি চালু করা হয়। এই ক্লাসের অনলাইন প্রচার করা হয় এ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এ। তবে করোনাকালীন ঘরে থাকা এ সময়ে টিভি বা অনলাইন এই ক্লাসের মাধ্যমে কতটা শিখতে পারছে শিক্ষার্থীরা!

বাংলাদেশ জার্নালের অনুসন্ধানে উত্তরের সীমান্তবর্তী জয়পুরহাট জেলা ঘুরে জানা গেছে, করোনার এই মহামারীতে প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা যাতে পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য সরকার সংসদ টিভি ও অনলাইন এটুআই-এর মাধ্যমে ক্লাস চালু করে। সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সবাই। তবে টিভি ও অনলাইন ক্লাসের সুবিধা শহরের দিকে কিছুটা সুফল পেলেও অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষার্থীরা। প্রত্যন্ত গ্রামে এখনও অনেকে ব্যবহার করে না ইন্টারনেট, পৌঁছায়নি কোন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। গুটি কয়েকজন মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও নেটওয়ার্কের সমস্যায় তারা অনলাইনে কোন কাজই ভালভাবে দেখতে বা করতে পারে না।

তাছাড়া আবার অনেকের বাড়িতেই নেই টেলিভিশন। যেসব শিক্ষার্থীরা টিভিতে ক্লাস করছে তার মধ্যে অনেক শিশু শিক্ষার্থী আবার ক্লাসের চ্যানেল ফাঁকি দিয়ে দেখছে কার্টুনের চ্যানেল। এদিকে শহরে এ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এর মাধ্যমে হাতেগোনা কয়েকজনকে ক্লাস করতে দেখা গেলেও গ্রামের মধ্যে এই দৃশ্য কোথাও দেখা যায়নি।

আবার অন্যদিকে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে চলছে দিনে ৩/৪ বার লোডশেডিং। গ্রামে একবার বিদ্যুৎ গেলে ২/৩ ঘণ্টার মধ্যে আসার কোন নাম নেই। এতে ক্লাস ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি এই সুবিধা থেকে পিছিয়ে পড়ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। এর মধ্যে গ্রামের শিক্ষার্থীই অধিকাংশ।

অভিভাবকরা বলছেন, শুধুমাত্র কার্টুন দেখার নেশা থাকায় সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়ছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, জয়পুরহাট জেলা জুড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৪২৭টি। আর এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ৬৯ হাজারের বেশি। এর মধ্যে করোনাকালীন সময়ে সংসদ টিভির মাধ্যমে ক্লাস করছে ৩৯ হাজার ৭৮৬ জন শিক্ষার্থী। আর বাকি প্রায় ২১ হাজার শিক্ষার্থীরা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হওয়ায় ও অনেকের বাড়িতে টেলিভিশন না থাকায় এই ক্লাসের বাহিরে রয়েছে তারা।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বলছে, বাকিদেরও এই টিভির ক্লাসে আনা হচ্ছে।

সদর উপজেলার কোমরগ্রামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মিজানুর রহমান বলেন, সরকারের এই অনলাইন ও টিভিতে ক্লাসের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভাল। তবে আমার বাসায় কোন টিভিই নাই। আমি বাটন মোবাইল ব্যবহার করি। তাহলে আমার ছেলে কিভাবে এই ক্লাস থেকে শিক্ষা নেবে?

একই গ্রামের গোলাম সাকলাইন জানান, স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর নেন না। বাচ্চারা টিভির ক্লাসে একটানা মন দিতে না পেরে কার্টুন দেখছে। শিক্ষকরা যদি কোন সিলেবাসের ব্যবস্থা করত তাহলে আমরা অভিভাবকরা সেই অনুযায়ী বাসাতেই পড়াতে পারতাম।

সদরের ভেটি এলাকার রতন বলেন, আমার মেয়ে ৩য় শ্রেণিতে পড়ে। আগে স্কুলে গেলে যে শিক্ষা পেত আমার মেয়ে এখন টিভিতে তার ২৫ শতাংশও পাচ্ছে না।

জয়পুরহাট শহরের নতুনহাট এলাকার মোয়ান্নাফ হোসেন বলেন, বাচ্চাদের টিভির সামনে বসানো মানেই কার্টুনের সামনে বসা। যখনই কেউ ঘরের বাহিরে বের হয়ে যায় তখন কার্টুনের চ্যানেল দেখে তারা।

শহরের আনিসুর রহমান জানান, আমার মেয়ে ৩য় শ্রেণির ছাত্রী। সংসদ টিভি দেখে ক্লাস করে। তবে মাঝেই মাঝেই দেখি সে ক্লাসের সময় কার্টুন দেখে। এছাড়া মোবাইল হাতে পেলেই সে গেমস খেলে।

জয়পুরহাট শহরের সরদার পাড়ার জুয়েল হোসেন বলেন, আমার ছেলে জয়পুরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। করোনাকালীন সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় আমার ছেলে টিভির মাধ্যমে ক্লাস করছে। এতে কিছুটা হলেও সে শিখতে পারছে। শিক্ষকরাও মাঝে মাঝে ফোন করে খোঁজ নেয়। এছাড়াও যেসব ক্লাস মিস করে সেই ক্লাস এটুআই এর ফেসবুক পেইজে দেখা যায়।

সদর উপজেলার কোমরগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী বিদিতা বলেন, আমাদের স্কুল এখন বন্ধ আছে। তাই আমি টিভি দেখে ক্লাস করি। এই ক্লাস চালু না হলে আমার পড়াশুনার ক্ষতি হতো।

জয়পুরহাট শহরের নতুনহাট শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র হাবিব বলেন, আমার বাড়িতে বড় মোবাইল না থাকায় অনলাইনে কোন ক্লাস দেখতে পাই না। তাই আমি টিভিতে ক্লাস দেখি। স্কুলের স্যার ম্যাডামরা কিছু দিনপর পর ফোন দিয়ে ঠিকমত পড়াশুনা করি কিনা সেজন্য ফোন দেয় এবং কোনদিন কোনদিন ক্লাস হবে সেটা জানিয়ে দেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫ম শ্রেণির এক ছাত্র বলেন, আমার বাবা দিনমজুরের কাজ করে। আমাদের বাড়িতে কোন টিভি, এ্যান্ড্রয়েড মোবাইল কিছুই নেই। এজন্য আমি এ ক্লাস করতে পারছি না।

জয়পুরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজার রহমান জানান, আমরা শিক্ষা অফিসের নির্দেশে করোনার এই সময়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি। ফোন করে শিক্ষার্থীদের পড়া বুঝিয়ে দেই। সেই পড়া শেষ হলে আবার তাদের নতুন পড়া দেওয়া হয়। যাদের বাড়িতে টিভি নেই তাদের প্রতি বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে এবং প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে তাদের টিভিতে ক্লাস করতে বলা হয়েছে।

জয়পুরহাট পৌরসভার কাশিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম নবী বলেন, আমরা প্রতি ক্লাসের ৬ জনকে প্রতিদিন পড়া বুঝিয়ে দেই এবং পরের দিন একজন শিক্ষক পাঠিয়ে সেই পড়া বুঝিয়ে নেই। এছাড়াও আমার স্কুলের সব শিক্ষকরা অভিভাবকদের কাছে ফোন করে নিয়মিত খোঁজখবর নেয়।

কালাই উপজেলার হারুঞ্জা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহাবুল হক বলেন, আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীর প্রতিটি অভিভাবকের নাম্বার আমাদের কাছে আছে। শিক্ষার্থীরা ঠিকমত ক্লাস করছে কিনা, প্রতি সপ্তাহে আমরা অভিভাবকদের ফোন দিয়ে খোঁজখবর নেই।

এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে গেলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ অফিসের বড় কোন কর্মকর্তাকেই পাওয়া যায়নি। পরে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং পরে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে মুঠোফোনে বলেন, শিক্ষার্থীরা টিভির মাধ্যমে ক্লাস সঠিকভাবে করছে কিনা এজন্য শিক্ষকদের মনিটরিং করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর যেসব শিক্ষার্থীরা এসব ক্লাসের বাহিরে রয়েছে তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলা হচ্ছে। যেসব শিক্ষার্থীদের বাড়িতে টিভি নেই তারা যেন পাশের বাড়িতে গিয়ে টিভি দেখে ক্লাস করে। আর গ্রামে ইন্টারনেটের ব্যবহার কম থাকায় এটুআই-এর মাধ্যমে কেউ ক্লাস করছে না। তবে শহরে দুই একজন করছে।

তিনি জানান, গত ২৮ জুন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আমাদের কাছে একটি নির্দেশনা এসেছে। নির্দেশনায় করোনা বিষয়ক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও ব্র্যাক আইইডি সমন্বয়ে ‘পাশে আছি’ নামক ঘরে বসে ফোনালাপের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার জন্য বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫ জুলাই থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক এবং শিক্ষা ও আইটি) মোঃ মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্লাস যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ডিপিআর/ জাহিরুল মিলন

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..