1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

আব্বাকে হারানো শোকাতুর পাঁচটি বছর

  • Update Time : শনিবার, ১৬ মে, ২০২০
  • ২৪৩ Time View
মোঃ হাবিবুর রহমান সাদীঃ আব্বাকে নিয়ে লিখিনা আজ
অনেকদিন হয়। কতোকিছুই স্মৃতির পাতায় উঁকি মারে, কতকিছু রোমন্থন করতে মন চায় কিন্তু সব কথা কি আর কলম দিয়ে লিখে বুঝানো যায়। আব্বা আমাদের আবেগের একটি জায়গার নাম। বলতে গেলে এই একটি জায়গায় আমি এবং আমার ভাই দু টোও মারাত্মকরকমের দুর্বল। তাই আব্বাকে নিয়ে কিছু লিখতে গিয়েও পারিনা। অনেকের সাথে কথা বলতে গিয়ে আব্বার প্রসঙ্গটি চলে আসলে কেমন যেন গলা আটকে যায়,ভেতরে প্রচন্ডরকমের কষ্ট অনুভূত হয়। প্রচন্ড শূন্যতা অনুভব করি। কেন যেন নিজেকে অস্তিত্বহীন মনে হয়। সে কারণেই হয়ত আব্বাকে নিয়ে বলতে গিয়েও বলা হয়না।
আমার আব্বা মরহুম দুদু মিয়া,হিমালয়ের মতো শান্তশিষ্ট এবং প্রচুর ধৈর্য্যক্ষমতা সম্পন্ন এক মানুষের নাম। আজ আব্বাকে হারানোর ঠিক পাঁচ বছর হলো আমাদের। এই পাঁচটি বছরের ভেতরে পাঁচ সেকেন্ডের জন্যেও ভুলে থাকতে পারিনি আমরা আমাদের পরম শ্রদ্ধার আব্বাকে। আব্বা আমাদের এমন একজন শিক্ষক ছিলেন যাঁকে সারাটিজীবন দেখেছি বিনয়ের মানদন্ডের উচ্চস্থরে থেকে মানুষের সাথে চালাফেরা করতে। অসম্ভব ধরণের সময়জ্ঞানসম্পন্ন একজন মানুষ ছিলেন তিনি। কোথাও যেতে হলে অগ্রীম রেডি হওয়া,হাতে কমপক্ষে ১ ঘন্টা সময় রেখে বের হওয়া ছিলো আব্বার নিত্যদিনকার কাজ। আমি অনেকসময় বলতাম আব্বা আরেকটু পরে বের হলেই  হতো,এতসকাল শুধু আমরাই চলে আসলাম অথচ আর কেউ আসেনি। আব্বা ধীরস্থিরে বলতেন, যারা জাস্ট টাইমে কোথাও যাওয়ার চেষ্টা করে তাদের টাইম ধরার একটি স্নায়ু প্রেশার কাজ করে থাকে মস্তিষ্কে, যে প্রেশারটি আমাদের নেই সুতরাং সময়ের পেছনে দৌঁড়াতে নেই। আব্বা তোমার তো সময়ের কোন তাড়া ছিলো না,তাহলে তুমি কেন এতো তাড়াতাড়ি করে দ্রুত চলে গেলে না ফেরার দেশে? জানি এর উত্তর পাওয়ার রাস্থা আমাদের চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে।
সময়জ্ঞান,শিষ্টাচার,নম্রতা,ভদ্ররতা আমাদের  এগুলো শিখিয়েছেন, বুঝিয়েছেন হাতে ধরে ধরে। আব্বা আমাদের এমন এক শিক্ষা প্রতিষ্টান ছিলেন যে রাস্তা কীভাবে পার হতে হয় সেটা পর্যন্ত শিখেছি হাতে-কলমে। আব্বা স্পষ্ট কথা বলতে খুব পছন্দ করতেন কিন্তু সেটা খুবই হৃদয়গ্রাহী করে। মনের মধ্যে কথা পুষে রাখতেন না,উদারচিত্ত নিয়ে চলতে ভারি পছন্দ করতেন মানুষটি।
আব্বা ছোট কিংবা বড়ো যে কাউকেই আগে থেকেই সালাম দিতেন। যেকোন গোরস্থানের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে আব্বা বলতেন ধীরে হাঁটো, তিনবার সূরা এখলাস পড়ে পড়ে যাও। বিশ্বাস করুন এমন একটি দিন নাই যে দিনটি আমার আব্বার কবরের পাশ দিয়ে আমি যাই আর আব্বার শিখানো এই আমলটি করিনা।
মাঝেমধ্যে খুব ফিল করি আব্বাকে যদি আরো কিছুটা দিন আমরা পেতাম তাহলে হয়ত পথ চলার অনেক পাথেয়ই সঞ্চার করতে পারতাম। বাবা নামক আল্লাহর রহমতটির প্রয়োজন একজন মানুষের সারাজীবনের  কিন্তু এমন এক সময় আমরা আমাদের আব্বাকে হারিয়ে ফেলেছি যখন একজন সন্তানের জন্য তার বাবার দিক নির্দেশনা প্রচন্ডরকমের প্রয়োজন ছিলো। তারপরেও আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করি আমরাতো আমাদের আব্বাকে নিজ হাতে কবরে রাখতে পেরেছি। আব্বাকে জড়িয়ে ধরে অন্তত কাঁদতে পেরেছি। আব্বার শেষ দু টি দিনে সময়করে আব্বাকে মুখে তুলে খাওয়াতে পেরেছি। একদম পাশে থেকে আব্বার চলে যাওয়া দেখেছি। কিন্তু কতো সন্তানইতো আছে যারা জন্মের আগেই তাদের বাবাকে হারিয়ে ফেলেছে। বাবা নামের সেই বটবৃক্ষের ছায়া পায়নি কতো অভাগা সন্তানেরা।
সামাজিক উন্নয়নে আব্বা ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ। সেই ১৯৯৮ সালে আমাদের পাড়ায় প্রথম বিদ্যুৎ লাইন আনতে গিয়ে আব্বার অক্লান্ত শ্রমের কথা অনুধাবন করতে পারি এখন পর্যন্ত সেই বৈদ্যুতিক খুটিগুলিতে আব্বার হাতের লেখা সেই দিন তারিখগুলো দেখে। খুব সম্ভবত তখন ২০০৬ সালে আমাদের পুরোগ্রামে গ্যাস লাইন স্থাপন করা হচ্ছে তখনো আমাদের পাঁকা রাস্থা হয়নি,তো গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলেছে তাদেরকে ১৪ ফুট রাস্থার জায়গা বের করে দিলে তারা গ্যাস দিবে এবং যেদিকে লাইন যাবে সেদিকে গ্রাহক থাকতে হবে নতুবা এক্সট্রাভাবে লাইন ফেলে রাখা যাবেনা। সেই ১৪ ফুট রাস্তা বের করতে গিয়ে আব্বাকে কত কষ্ট করতে হয়েছে সেটা নিজের চোখে দেখেছি এবং শুধুমাত্র  আমরাই একমাত্র গ্রাহক হয়েই খুব সম্ভবত ৪৫০ ফুট গ্যাস লাইন তখন  পুরো পাড়া জুড়ে স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। আমার স্পষ্ট মনে আছে আম্মা বলেছিলেন আমাদের কাঁচা ঘরে গ্যাস আনার কি দরকার,তাছাড়া রান্নার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছ এবং বাঁশের লাকড়ি রয়েছে। আব্বা তখন বলেছিলেন এই গ্যাসলাইন যদি এখন না আসে তবে পরবর্তীতে এদিকে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। আব্বার কথাটি আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তখনকার সময়ে যদি এই সামাজিক উন্নয়নগুলো না হতো তাহলে আজকের এই দিনে এসে হয়ত ইচ্ছা থাকলেও তা করানো সম্ভবপর হতো কি না আল্লাহ মালুম।  অবশ্য সময়ের প্রয়োজনে পরবর্তীতে অনেকেই গ্যাস সংযোগ নিয়েছেন।
 আমাদের চাতল শাহী জামে মসজিদের দীর্ঘদিনের ক্যাশিয়ার ছিলেন আব্বা। শুক্রবার গুলোতে সকল মুসল্লিদের সামনে মাইক্রফোনে ধাপে ধাপে জানিয়ে দিতেন বিভিন্ন খাতে মসজিদের আয় এবং ব্যায়ের ফিরিস্তি ,জানিয়ে রাখতেন এখন পর্যন্ত মসজিদের ক্যাশে থাকা টাকার পরিমাণ। এরকম জবাবদিহিতামূলক মনোভাব নিয়ে পালন করে গেছেন আল্লাহর ঘরের দায়িত্ব। আল্লাহ যেন এসবের উসিলায় আমার আব্বার জিম্মাদার হয়ে তাঁকে বেহেস্ত নসিব করেন,আমিন।
দীর্ঘশ্বাসগুলো এখন ফুসফুসের বেঁচে থাকার প্রাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার বাবা নেই তার দীর্ঘশ্বাসগুলো কেমন তা বাবা আছেন এমন মানুষগুলোর বুঝার কথা না। একজন বাবা একদিকে আর পুরো দুনিয়া অন্যদিকে। এক দুনিয়ার সকল চাপ একদিকে আর আপনার বাবার ঘামে ভেজা শার্টের ঘ্রাণ একদিকে রাখবেন দেখবেন কীসের চাপ কিসের চিন্তা,সবে উড়ে গিয়ে ভেনিস। একজন বাবা মানে সন্তানের বুক প্রস্বস্থ  থাকা,সকল ঢর-ভয়হীন সম্মুখপানে পথচলা। ছোটরা অনেক সময় বলে না আব্বাকে সব বলে দিব, বিশ্বাস করুন এই সব বলে দেওয়ার মধ্যে কতো তৃপ্তি যারা অনেকদিন তাদের বাবাকে চোখের পানি ছাড়া আর মুখ দিয়ে একটি বাক্য বলতে পারেনি একমাত্র সেই বেদনা তারা ছাড়া আর কারো বুঝার ক্ষমতা নাই। মাবুদ সবাইকে এই ক্ষমতা দেননি।
মাত্র দুই দিন মেডিকেলের বিছানায় থেকে আমাদেরকে এই দুটি দিন উনাকে পরম মমতাভরে সেবা করার একটি সুযোগ মাবুদ দান করে তাঁর বান্দাকে নিয়ে নিলেন আখেরাতের অনন্তকালের এক জিন্দেগীতে। সেই শেষ না হওয়া আখেরাতের জীবনে আল্লাহ আমাদের আব্বাকে পরম সুখের স্থান জান্নাতুল ফেরদাউসের অধিবাসী করুন,আমাদেরকে আব্বার নেক উত্তরসূরী হিসেবে উনার সদকায়ে জারিয়া হিসেবে আল্লাহ আমাদের কবুল করুন, সর্বপোরি আব্বার সারাজীবনের চাওয়া ভালো মানুষ যেন হতে পারি আল্লাহ যেন তাওফিক দান করুন,আমাদের উপরে আব্বার রুহ তৃপ্ত রাখুন, খুশি রাখুন,আমিন ইয়া রব।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..