1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

ইয়াস–পর্যালোচনা: সম্মুখ সমরে বাংলা–কেন্দ্র, মমতার আক্রমণের সোজাসাপটা জবাব শুভেন্দুর

  • Update Time : শনিবার, ২৯ মে, ২০২১
  • ২৫০ Time View

আমাকে মোদির পা ছুঁতে বললে বাংলার জন্য তাই করব: মমতা

পা ছুঁতে হবে না, বরং তিনি সংবিধান মেনে চলুন: শুভেন্দু

বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:

‘ইয়াস’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর্যালোচনা বৈঠকে পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয় শুক্রবার, তা অব্যাহত রইল শনিবারও। বরং এদিন মুখ খুলে বিতর্ককে নতুন মাত্রা দেন মমতা। পালটা ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলন করে কড়া ভাষায় মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে জবাব দেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও।

মোদির পর্যালোচনা বৈঠকে ছিলেন না মমতা। আর তার কারণ নিয়েই এখন ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তৈরি করেছেন স্বয়ং মমতাই। এক–এক সময় তিনি এক–এক রকম কারণ বলছেন। প্রথমে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় নাকি জানিয়েছিল তাঁর বিমান দেরি করে আসবে। মমতার হেলিকপ্টারকে নাকি আকাশে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করানো হয়। এর পর তিনি বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। আর এদিন শুভেন্দু অধিকারীর বৈঠকে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, ঠিক কী কারণে তিনি ওই বৈঠকে যোগ দেননি? সঠিক উত্তরটা যদিও পাওয়া যায়নি। বরং এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে রীতিমতো তোপ দাগেন মমতা। বাঙালি–অবাঙালি সম্পর্ক টেনে আনেন। বিজেপির প্রতিহিংসা তত্ত্বের কথাও উল্লেখ করেন। পালটা আক্রমণে গিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীও। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিটি প্রশ্নেরই জবাব দিয়েছেন। এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের তলব করার বিষয়টিও। মমতা–শুভেন্দুর বক্তব্যেও সেই প্রসঙ্গ এসেছে।

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলি প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মুখ্যসচিব বাঙালি। তাই তাঁর ওপর এত রাগ। এই জন্যই কি তাঁকে বদলি করা হচ্ছে? আমার মুখ্যসচিব কখনও বাঙালি হয়, কখনও অবাঙালি। এর আগে আমার মুখ্যসচিব ছিলেন রাজীব সিনহা। আমরা কিন্তু এমন বৈষম্য করি না! তা হলে কেন্দ্র কেন এই রকম বৈষম্য করছে?’ সেই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, ‘কেন্দ্র কাজ করতে দিচ্ছে না রাজ্যকে। বাংলার ওপর এত রাগ কেন প্রধানমন্ত্রীর? দিল্লিতেও অনেক বাংলার আধিকারিক রয়েছেন। তা হলে আমিও যদি তাদের ফেরত চেয়ে পাঠাই? আমি দেশের সব মুখ্যসচিব এবং আইএএস অফিসারদের প্রতি আমার সমবেদনা ব্যক্ত করছি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারকে বলছি, আপনাদের কি মনে হয়, আইএএস অফিসারদের লবি নেই?’ এ কথার মধ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আইএএস অফিসারদের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে উসকে দিতে চেয়েছেন বলে মনে করছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল।

জবাবে মুখ খুলেছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ১৫–২০ মিনিট অপেক্ষা করার পরে মুখ্যমন্ত্রী আসছেন কিনা আধিকারিকদের জানতে বলেন। মুখ্যমন্ত্রী অনেক পরে এলে আমরা সবাই উঠে দাঁড়াই। কিন্তু তিনি কিছু কাগজপত্র দিয়েই চলে যান। তখন তাঁকে তাতে সঙ্গ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। হয়তো বাধ্য হয়েই দিয়েছেন।’‌ শুভেন্দু অভিযোগ করেন, ‘এই রাজ্যের আমলারা অসহায় অবস্থার মধ্যে কাজ করছেন। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাঙালি হিসেবে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর আচরণে গোটা দেশের কাছে বাংলার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে বলছি, আপনি যে ভাবে প্রশাসনকে চালাচ্ছেন সেটা ঠিক নয়।’ সেই সঙ্গে শুভেন্দু এ কথাও বলেন, ‘এর আগেও প্রধানমন্ত্রীকে অনেকবার অপমান করেছেন মমতা। গঙ্গা সংস্কার থেকে কোভিড মোকাবিলার বৈঠকেও ছিলেন না তিনি।’

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা বৈঠকে বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থাকার জন্যই যে মমতা সেখানে ছিলেন না, তা এদিন তাঁর কথায় স্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠকে বিরোধী দলনেতাকে ডাকা হয়। তবে আগের সপ্তাহে যখন প্রধানমন্ত্রী তাউট ঝড়ের পর গুজরাটে প্রশাসনিক বৈঠক করেন, তখন কেন কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতাকে ডাকা হয়নি? যাঁদের সেই বৈঠকে থাকার কথা ছিল না, তাঁরা কেন সেখানে ছিলেন?’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগেরও জবাব দিয়েছেন শুভেন্দু। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রীতিমতো তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘এখন মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী দলনেতাকে ডাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজনীতি করছেন। ওডিশাতেও বিরোধী দলনেতাকে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। তিনি কি এই তথ্য জানেন না? কই, মানুষকে তো তা বলছেন না। আসলে সেই সত্য তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন। এই রাজ্যেও পর্যালোচনা বৈঠকে ডাক পেয়েছিলেন সাংসদ তথা লোকসভায় বিরোধী দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। ব্যস্ততা থাকায় তিনি আসতে পারেননি।’
শুভেন্দু এদিন স্পষ্ট বলেন, ‘আসল কথা হল, নন্দীগ্রামে আমার কাছে তিনি হেরে গিয়েছেন। তাই আমায় বিরোধী দলনেতা হিসেবে মানতে চান না মাননীয়া। কিন্তু কথা হল, একজন অনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী মানুষের ভোটে নির্বাচিত বিরোধী দলনেতাকে অস্বীকার করতে পারেন না। আগে তিনি ফিশ ফ্রাই খাইয়ে বিরোধীদের ম্যানেজ করে ফেলতেন। কিন্তু এখন সেটা আর হবে না। আমাদের সেটা করা যাবে না।’‌

এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, ‘আমাকে প্রথমে বলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী–মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক হবে। তাই আমরা সফরসূচি কাটছাঁট করি। আমাকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে বলা হয়। তা ছাড়া সবসময় যে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে মুখ্যমন্ত্রীকে যেতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। ভুল খবর ছড়িয়ে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে সেখান থেকে আমার মুখ্যসচিবের সঙ্গে দিঘা যাই। প্রধানমন্ত্রী আমাকে পা ছুঁতে বললে বাংলার জন্য তাই করব।’ জবাবে মুখ খুলেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘বৈঠকের আগের দিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়। এর পর বৈঠকে যোগ দিতে মুখ্যমন্ত্রী নিজের শুক্রবারের সফরসূচি বদল করেছিলেন। সূচি অনুসারে শুক্রবার দুপুর ১.৫৫ মিনিটে কলাইকুণ্ডায় প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার নামার কথা ছিল। আর মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার নামার কথা ছিল ২.০৫ মিনিটে। নিজেই প্রধানমন্ত্রীর পরে সেখানে পৌঁছতে চান বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে যোগ দিয়ে দেড় মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে নিজের কথা বলে মুখ্যসচিবকে নিয়ে বেরিয়ে যান তিনি।’ পাশাপাশি শুভেন্দু এ কথাও বলেন, ‘আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, প্রধানমন্ত্রীর পা ধরতে হবে না। তিনি শুধু সংবিধান মেনে চলুন। আমি যেমন তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সম্মান করি, তেমনই তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান করুন। তাঁর মনে রাখা উচিত, পশ্চিমবঙ্গ কোনও সার্বভৌম রাষ্ট্র নয়।’

এদিন মমতা অভিযোগ করেন, ‘কাল কনফারেন্স রুমে গিয়ে দেখি, ওখানে রাজ্যপাল, বিধায়ক, বিরোধী দলনেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা রয়েছেন। বিজপি নেতাদের মাঝে আমি একা। তাই প্রধানমন্ত্রীকে আমি বলি, আমাদের দিঘা যেতে হবে। আমরা রিপোর্ট দিতে চাই। আমি প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট দিই। তার পর তাঁর অনুমতি নিয়ে দিঘায় চলে যাই। তা হলে আমাদের দোষ কোথায়?’ পালটা এদিন শুভেন্দু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগের পরে বাংলায় এসেছেন। আকাশ পথে সব ঘুরে দেখার পর কলাইকুন্ডায় একটি পর্যালোচনা বৈঠক করতে চেয়েছিলেন। কী ভাবে মানুষের সমস্যার সমাধান করা যায়, সেই পরিকল্পনা করতেই তিনি বাংলায় এসেছিলেন। ২০১৯ সালে ফণী ঘূর্ণিঝড়ের পরে এবং ২০২০ সালে আমফানের পরেও তিনি বসিরহাটে এসেছিলেন। প্রথমে ১০ হাজার ও পরে ২,৭৫০ কোটি টাকা দিয়ে সাহায্যও করেছিলেন। বৈঠকে মমতা যে ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করেছেন, তার প্রতিবাদ করার মতো কোনও ভাষা নেই। তিনি তাঁর ইচ্ছেমতো চলতে চান। এখন বিপাকে পড়ে নানা কারণ দেখাচ্ছেন। আসলে দিঘার বৈঠকের কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক এড়িয়েছেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী।’

পাশাপাশি পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক অবস্থার কথাও টেনে আনেন শুভেন্দু। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ভোটের পর থেকে বিজেপি কর্মীদের ওপরে আক্রমণ চলছেই। ভোটারদের পরেও সমানে অত্যাচার চালানো হচ্ছে। আজই ডায়মন্ড হারবারে একটি বুথ এলাকার বিজেপি সভাপতিকে খুন করা হয়েছে। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা এটা করেছে। পুলিশ পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। ভোটের রেজাল্ট বের হওয়ার পর এ নিয়ে ৩৬ জন বিজেপি কর্মী, সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে।’ তবে এদিন আলাপন–বদলি নিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন আমলাদের অনেকে, যেমন বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর সরকার, অর্ধেন্দু সেন রাজ্যের পাশে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন। যদিও এ বিষয়ে রাজ্য বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ রসিকতা করে বলেছেন, এর পেছনে রহস্যটা কী?

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..