বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
ফের পশ্চিমবাংলার রাজনীতি নিয়ে কড়া মন্তব্য করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। জানালেন, বাংলায় এখন রাজনৈতিক হিংসা ভয়ঙ্কর ভাবেই বেড়ে চলেছে। আর সেইজন্য তিনি দায়ী করলেন শাসক দল তৃণমূলকেই। তাই একুশ সালে বাংলার ক্ষমতায় বিজেপি আসবে বলে দাবি করেছেন তিনি। যদিও পাল্টা মন্তব্য করতে ছাড়েননি তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তিনি রীতিমতো তোপ দেগে বলেছেন, এই স্বপ্ন অমিত শাহর অধরাই থেকে যাবে।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তীব্র আক্রমণ শানান রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রীকে। বলেন, ‘বাংলায় রাজনৈতিক হিংসা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এ কথা কারও অজানা নেই। আর এ কথাও সত্য, এই হিংসায় মদত দিয়ে চলেছে কোনও কোনও রাজনৈতিক দল।’ বলা বাহুল্য, তাঁর নিশানায় ছিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসই। শুধু এ কথা বলেই অমিত শাহ থেমে যাননি। একই সঙ্গে তিনি এ কথাও বলেছেন, ‘এখন এই হিংসার পুরো বিষয়টি বাংলার সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। তাঁরা জানেন, কারা এই হিংসা ছড়াচ্ছে। তাই তাঁরাই রাজ্যের রাজনৈতিক পালাবদল ঘটানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।’
এর পরই তিনি সরাসরি নিজের দলের নাম করে বলেন, ‘রাজ্যের মানুষ বিজেপিকেই বাংলার ক্ষমতায় আনবে। আর সেটা হবে ২০২১ সালেই। কারণ, পরিস্থিতি এখন সাধারণ মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে। তাঁরা এই পরিস্থিতির বদল চাইছেন।’ অমিত শাহ এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে শ্রমিক স্পেশ্যাল নয়, করোনা স্পেশ্যাল ট্রেন পাঠিয়েছে। এই প্রসঙ্গের কথা উল্লেখ করে অমিত বলেন, ‘এই মন্তব্য করে ভিনরাজ্যে কর্মরত বাংলার শ্রমিকদের অপমান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্য রাজ্যগুলি যেখানে সম্মান দিয়ে তাদের শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে, সেখানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ভিনরাজ্যে কর্মরত এ রাজ্যের শ্রমিকদেরই অপমান করছেন!’
অমিত শাহর এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরই মুখ খুলতে দ্বিধা করেননি তৃণমূল নেতারা। মুখ খোলেন সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, ‘কোন হিংসার কথা বলছেন অমিত শাহ? কয়েকদিন আগে দিল্লিতে যে হিংসা হয়েছে, সে কথা কি তিনি ভুলে গিয়েছেন? লোকসভায় তো আমি সরাসরি অমিত শাহর ইস্তফা দাবি করেছিলাম। কিন্তু তাঁর কোনও লজ্জাবোধও নেই। তাই ইস্তফা তো দেনইনি, বরং এখন বাংলা সম্পর্কে উল্টোপাল্টা কথা বলছেন।’ এখানেই থেমে যাননি সৌগতবাবু। তিনি আরও বলেছেন, ‘লোকসভা ভোটে বিজেপির জনপ্রিয়তা যে উচ্চতায় ছিল, সেই মাত্রা এখন নিম্নগামী। কারণ, করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তাই অমিত শাহর উচিত, নিজের দলের ভবিষ্যতের কথা ভাবা, বাংলার নয়।’
সৌগত রায় এদিন তীব্র আক্রমণাত্মক ছিলেন। তিনি বলেন, ‘পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে আমরা যথেষ্ট আন্তরিক। তা অমিত শাহর কাছ থেকে শিখব না। পরিযায়ী শ্রমিকদের বর্তমান দুরবস্থার জন্য দায়ী পুরোপুরি কেন্দ্রীয় সরকার। দায়ী অমিত শাহই। এখন নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে বাংলার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’ শাহর বিরুদ্ধে রীতিমতো তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘বাংলার ক্ষমতায় বিজেপি আসছে বলে স্বপ্ন দেখছেন অমিত শাহ। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন কোনও দিন সফল হবে না।’