প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক : দীর্ঘ এক যুগ পর আগামী বছরের প্রথমার্ধে লন্ডন-ঢাকা রুটে ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। ইউকে এভিয়েশন নিউজ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে এই রুটে ফ্লাইট শুরু করার অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে ব্রিটিশ এয়ারলাইন্সটি। পৃথক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারও এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এই খবরে খুশি হয়ে উঠেছে ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটি।
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আগামী বছরের প্রথমার্ধে লন্ডন-ঢাকা রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। তবে সপ্তাহে এ রুটে কতটি ফ্লাইট চলাচল করবে সে বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি। বর্তমানে এই রুটে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করছে কেবলমাত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে লন্ডন-ঢাকা রুটে নিজেদের প্রথম নিয়মিত ফ্লাইট চালু করে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। ভিসি টেন এয়ারক্রাফট দিয়ে সপ্তাহে একটি ফ্লাইট দিয়ে রুটটি চালু করা হয়। টানা ৩৪ বছর ফ্লাইট পরিচালনার পর লাভজনক না হওয়ার কারণে ২০০৯ সালের মার্চে রুটটি বন্ধ করে দেয় ব্রিটিশ এয়ারলাইন্সটি।
নতুন করে রুটটিতে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইট চালুর খবরে খুশি ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষেরা। বর্তমানে এই রুটের যাত্রীদের একমাত্র ভরসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তাদের অভিযোগ টার্কিশ, এমিরেটস, ইত্তেহাদ, এয়ার ইন্ডিয়ার মতো এয়ারলাইন্সগুলোর তুলনায় এই রুটে বিমানের ভাড়া বেশি। বছরের সব সময় প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয় যাত্রীদের। তারপরও মান সম্পন্ন সেবা না পাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
করোনা মহামারিতে এমনিতেই সংকুচিত হয়ে গেছে বিমান বাংলাদেশের গন্তব্য তালিকা। বহু রুটে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশের সরকারি এয়ারলাইন্সটি। যুক্তরাজ্যে কয়েক লাখ বাংলাদেশির বসবাস। করোনা মহামারির সময়েও লন্ডন-ঢাকা রুটেই বিমানের সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট চলাচল করে। যুক্তরাজ্যের দুইটি গন্তব্য লন্ডন ও ম্যানচেস্টারে ফ্লাইট পরিচালনা করলেও করোনাভাইরাসে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ম্যানচেস্টার রুটে ফ্লাইট স্থগিত রয়েছে। বর্তমানে লন্ডনে বিমানের সাপ্তাহিক কেবল দুটি ফ্লাইট আসা-যাওয়া করছে।
যাত্রীদের দীর্ঘদিনের চাহিদার প্রেক্ষিতে এর আগে এ বছরের ৪ অক্টোবর লন্ডন থেকে সরাসরি সিলেটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে বিমান বাংলাদেশ। ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফেডারেশন অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সভাপতি ও স্কটল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক কনসাল জেনারেল ড. ওয়ালি তসর উদ্দীন এমবিই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ বাংলাদেশে ফ্লাইট চালু করলে ব্রিটেনের যাত্রীরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন। কেননা, ব্রিটেনের প্রতিটি শহরের এয়ারপোর্ট থেকে ব্রিটিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট রয়েছে। এই কানেকটিং সুবিধা থাকায় ব্রিটেনের সব শহর থেকে বাংলাদেশগামী যাত্রীরা সহজে ভ্রমণের সুবিধা পাবেন। এই মুহূর্তে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সন্তোষজনক সেবা দিতে না পারলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এ রুটে যাত্রী হারাবে বলে মনে করেন তিনি।
ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটির জনপ্রিয় কবি ও গদ্যকার আতাউর রহমান মিলাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ দেশে আসার পর থেকে বন্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমি ব্রিটিশ এয়ার ওয়েজ-এ ভ্রমণ করেছি। বাংলাদেশের বাইরেও ভ্রমণকালে এই এয়ারলাইন্স ব্যবহার করে থাকি। তাদের সাথে ভ্রমণ অত্যন্ত আরামদায়ক হয়। খাবারের মান যেমন অত্যন্ত উন্নত, তেমনি যাত্রী সেবার মানও। বিমানগুলো অত্যাধুনিক, সবধরনের সুযোগ সুবিধা থাকে। ভাড়া তুলনামূলক সহনীয় পর্যায়ের। এগুলো দীর্ঘদিন থেকে তারা বজায় রেখেছে।
নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে আতাউর রহমান মিলাদ বলেন, ২০০৩ সালে আমার পরিবার নিয়ে ব্রিটিশ এয়ারে ঢাকায় যাই। ফেরার আগে হঠাৎ করে মায়ের শরীর খারাপ করে, তখন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে ঢাকা পর্যন্ত গাড়ি করে তাকে নিয়ে আসা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। তখন ঢাকার ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জিএমজি’র মাধ্যমে সিলেট থেকে ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করি। তখন সিলেটে যাত্রীদের বহন করার জন্য জিএমজি’র সঙ্গে তাদের চুক্তি ছিল। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ তখন সব ব্যবস্থা করে দেয়। তাদের নিজস্ব তত্বাবধানে সিলেট থেকে ফ্লাইট ও ঢাকায় আমাদেরকে যাতায়াত, হোটেলের ব্যবস্থাসহ সবকিছু তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পালন করে। তিনি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজকে লন্ডন থেকে সরাসরি সিলেটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরুর অনুরোধ করেন।
সময় টেলিভিশনের যুক্তরাজ্যের বিশেষ প্রতিনিধি সোয়েব কবীর বলেন, ভ্রমণ অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের সেবার মান বেশ উন্নত ও আধুনিক। নতুন করে ঢাকা রুটে তাদের ফ্লাইট সংযোজন মানেই বৃটেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর। পাশাপাশি বিমানের জন্য হলেও খানিকটা প্রতিযোগী হিসেবে এই এয়ারওয়েজের আগমন দুশ্চিন্তায় ফেলবে। বৃটেনের বিভিন্ন শহর থেকে ট্রানজিট নিয়ে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ঢাকায় আসলে যাত্রী সংকটে ভুগতে পারে বাংলাদেশ বিমান। আর তাই এখন থেকেই বাজার তথা যাত্রী ধরে রাখার প্রস্তুতি নিতে হবে বিমানের।
বিমান বাংলাদেশের লন্ডনে নিযুক্ত কান্ট্রি ম্যানেজার দেবব্রত মন্ডল বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে ব্রিটিশ এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করলে তারা কোনও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।