নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ছোবলেও থেমে নেই জঙ্গিরা। সবার দৃষ্টি যখন করোনা মোকাবিলার দিকে তখন গোপনে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন উগ্রপন্থি সংগঠনের জঙ্গিরা। তারা রাজধানী ঢাকার বাইরেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেতা বা সদস্যরা নানা গ্রুপ বা উপগ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করছে। লক্ষ্য বাস্তবায়নে ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব পালন করছে তারা। অনেক এলাকায় কথিত ‘ইসলামি খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার নামে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে মানুষের তৈরি নীতি নয়, আল্লাহর আইনে সবকিছু চলবে। এমনকি কেউ সরকারকে কোনো কর দেবে না। এরই মধ্যে বাংলাদেশে ‘মুসলিম ভিলেজ’ নামে একটি গ্রাম থেকে নিজেদের কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা করছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরা। গত ৩০ মে পাবনা শহর থেকে আব্দুল্লাহ আকাশ নামে আনসার আল ইসলামের এক সদস্যকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য জানতে পেরেছে র্যাব-২ ব্যাটালিয়ন। অন্যদিকে সোমবারও ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানাধীন নালিখালী এলাকা থেকে নাশকতার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠকের সময় উগ্রবাদী বই ও লিফলেটসহ জেএমবির পাঁচ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারোয়ার-বিন-কাশেম জানান, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে র্যাব সর্বদাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যেও বিচ্ছিন্নভাবে অনেক সময় জঙ্গিরা তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করে থাকে। তবে সেভাবে আর তারা সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে না। জঙ্গিবাদের বিষয়ে র্যাব কখনই দৃষ্টি সরিয়ে নেয় না। র্যাবের গোয়েন্দারা সার্বক্ষণিক জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি করে যাচ্ছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গিরা বর্তমানে অনলাইনেই বেশি তৎপর। নতুন নতুন অ্যাপস ও নানা মাধ্যমে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করছে। তারা আলোচনার নানা ধরনের সাঙ্কেতিক শব্দ ব্যবহার করছে, যাতে করে কেবল তারা নিজেরাই এই সাঙ্কেতিক ভাষা বুঝতে পারে। তবে এতসব কৌশলের মধ্যেও অনেক ক্ষেত্রেই গোয়েন্দাদের জালে আটকে যাচ্ছে জঙ্গিরা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার উপপরিচালক মেজর হুসাইন রইসুল আজম মনি জানান, করোনার এই সময়ের মধ্যেই র্যাবের অভিযানে বিভিন্ন সংগঠনের অন্তত অর্ধশতাধিক জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে জেএমবি ও আনসার আল ইসলামসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের নেতা ও সদস্য রয়েছে। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই র্যাব জঙ্গিবিরোধী কঠোর অভিযান চালিয়ে আসছে। এ ধারাবাহিকতা চলবেই।
পুলিশ ও র্যাবের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গিরা সদস্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ধর্মভীরু একশ্রেণীর যুবক বা কিশোরকে টার্গেট করে থাকে। তারা দেশ বা সমাজে ইসলামী শরিয়াহ চালুর বিষয়ে নানা উসকানিমূলক তথ্য প্রচার করতে থাকে। তবে এসব কাজ করতে গিয়ে যাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হতে না হয় সে কারণে সশস্ত্র প্রতিরোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য অস্ত্র, বিস্ফোরক সংগ্রহ করে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করে থাকে জঙ্গিরা। সম্প্রতি যেক’জন জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের পর তারা প্রায় একই তথ্য জানিয়েছে।