1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

করোনায় আক্রান্তদের সাথে অমানবিক আচরণ করছে পরিবার ও স্বজনরা

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০
  • ১৬৯ Time View
করোনায় আক্রান্তদের সাথে অমানবিক আচরণ করছে পরিবার ও স্বজনরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের থাবায় বিশে^র বহু দেশের মতো বাংলাদেশও বর্তমানে এক সঙ্কটকাল মুহূর্ত অতিক্রম করছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে করোনা রোগীদের প্রতি সহনশীল ও মানবিক আচরণ করা হলেও ঠিক উল্টোটা ঘটছে বাংলাদেশে। এখানে করোনা রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের দেখা হচ্ছে ভিন্ন চোখে। একশ্রেণির মোড়লরা এসব মানুষদের ওপর নানা অপবাদ বা স্টিগমা চাপিয়ে দিয়ে প্রতিনিয়ত অপমান ও লাঞ্ছিত করে যাচ্ছে। এর বাইরে করোনায় আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেলেও তাদের সৎকারে তৈরি করা হচ্ছে নানা জটিলতা। শুধু তাই নয়, করোনা রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীর প্রতি অমানবিক আচরণ করছে খোদ পরিবারের সদস্য ও স্বজনরাও। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে- করোনায় কোথাও যেন কারও করুণা মিলছে না।

চিকিৎসকরা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত বা মৃতদের প্রতি ঘৃণা বা নেতিবাচক আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আক্রান্তদের চিকিৎসা ও মৃতদের সৎকার করা হলে সংক্রমণের সম্ভাবনা খুবই কম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার করতে যে তিন-চার ঘণ্টা সময় লাগে তাতে ভাইরাসের কার্যকারিতা থাকে না।

করোনা সংক্রমণ শুরুর পর দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজন ছাড়াও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া পরিবার ও সমাজের কাছেও তারা অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ায় বাড়িওয়ালারা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। স্থানীয়রাও আক্রান্ত রোগীসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অমানবিক আচরণ করছে। এতে এলাকায় ঢুকতে-বের হতে বাধার মুখে পড়ছেন চিকিৎসা সেবায় জড়িত এসব মানুষরা। এর বাইরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা না দিয়েই ফেলে যাচ্ছেন পরিবার ও স্বজনরা। করোনা ভীতি এমন নেতিবাচক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে- আদদের সন্তান ফেলে যাচ্ছে মা-বাবাকে। আবার স্ত্রী বা স্বামীও একে অপরের চিকিৎসা নিশ্চিত না করে সঙ্কটকালে ত্যাগ করে চলে যাচ্ছেন।

চিকিৎসা ও সমাজ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুর্যোগকালীন সময়ে একশ্রেণির মানুষ সর্বদা সমাজের অন্যদের নেতিবাচক ও বিরূপ মন্তব্য করে থাকে। হঠাৎ করে কোনো নতুন মহামারি দেখা দিলে এসব মানুষরা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক ফখরুল হাসান বলেন, শুধু চিকিৎসক হওয়ার কারণে বাড়িওয়ালারা বাঁকা চোখে দেখেন। তাদের দৃষ্টিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়াটা যেন অপরাধ। এ ছাড়া একই বাড়িতে থাকা অন্যান্য ভাড়াটিয়ারাও বাঁকা চোখে দেখেন। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে এক ডাক্তার পরিবারের ১৭ সদস্য করোনা পজিটিভ হওয়ার সংবাদে এলাকাবাসী তাদের প্রতি সহমর্মিতা না দেখিয়ে উল্টো ওই পরিবারের ওপর অবজ্ঞা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন কোনো রোগে কেউ আক্রান্ত হলে তাদের প্রতি সামাজিক অপবাদ বা স্টিগমা দেওয়ার রীতি বহু দেশে চালু আছে। করোনা শুরুর পর প্রবাসীরা দেশে ফিরতে শুরু করলে এ দেশেও স্টিগমার কালচার চালু হয়। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ তাদের এক প্রতিবেদনে এমন ৭৫টি সামাজিক স্টিগমা বা অপবাদের ঘটনার উল্লেখ করেছে।

সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, দুটো কারণে করোনায় আক্রান্তদের প্রতি এমন নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এর কারণ হিসাবে তিনি মানুষকে ভীতি সন্তস্ত্র করে তুলেছে এমন প্রচার-প্রচারণার কথা বলেছেন। এ ছাড়া মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ না থাকায় সবাই স্বার্থপর হয়ে উঠেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, রোববার করোনার উপসর্গ নিয়ে বোনের সঙ্গে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে আসেন চা বিক্রেতা আল আমিন। একপর্যায়ে পরীক্ষা না করেই তাকে হাসপাতালের সামনে ফেলে চলে যায় ওই বোন। একইদিন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় করোনার উপসর্গ নিয়ে সোহরাফ হোসেন হাওলাদার নামে এক বৃদ্ধ মারা গেলে ঘরের ভেতরে লাশ রেখে পালিয়ে যায় পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম গোসল ও জানাজা পড়িয়ে দাফনের ব্যবস্থা করেন। শনিবার করোনা সন্দেহে মনিরা বেগম নামে ৫৫ বছর বয়সি এক মাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ফেলে যায় সন্তানরা। সেখানে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে পুলিশ। এর আগে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগায়ে করোনার উপসর্গ নিয়ে আউলিয়া বেগম নামের এক নারী মারা স্বজনরা কেউ লাশ দাফনে কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে স্থানীয় করোনা স্বেচ্ছাসেবক টিম লাশ দাফন করে।

আক্রান্তদের মতো করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের নিয়েও তৈরি হয় নানা বিড়ম্বনা ও জটিলতা। অনেক জায়গায় সাইনবোর্ড বা ব্যানার টাঙিয়ে করোনা রোগীদের দাফন না করার ঘোষাণা দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মারকাজুল ইসলামীর পরিচালনা পরিষদের সদস্য মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একটা মৃতদেহ নিয়ে পাঁচ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। তবুও মৃত ব্যক্তির পরিবারের কেউ আসেনি। পরে আমরা তালতলা কবরস্থানে নিয়ে তাকে দাফন করি। এমন বহু লাশ পরিবার ও স্বজনরা গ্রহণ না করায় পুলিশসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিয়ে সৎকার করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা রোগীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ প্রত্যাশিত নয়। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তারা পরিবার ও সমাজেরই অংশ। এ সময় তাদের প্রতি মানবিক আচরণের পরিবর্তে অমানবিক আচরণ কোনোভাবে কাম্য নয়। অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে চলতে তিনি পরামর্শ দেন।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, মৃতদেহ সৎকার এবং মৃত ব্যক্তিকে কবর দিতে গিয়ে পুলিশ এবং সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন স্থানে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছেন। যদিও এ বিষয়ে সঠিক তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে বিষগুলোর সুরাহা করা হয়। তিনি করোনায় আক্রান্ত রোগী ও মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রকাশ করতে বলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..