পশ্চিমবঙ্গ: ভারতের পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উৎসবে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রস্তুত রয়েছে লালবাজার।
কলকাতার প্রত্যেকটি পূজামণ্ডপে এ বছর মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। আগে মূলত বড় মণ্ডপগুলোতে পুলিশের নজরদারি থাকতো ও এলাকার বারোয়ারি ছোট মণ্ডপগুলোতেও থানার পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হতো। কিন্তু এ বছর লালবাজারের নির্দেশ, প্রত্যেকটি মণ্ডপে অন্তত দুজন পুলিশ ডিউটিতে থাকবেন। কলকাতার দুই হাজার ৭০১টি মণ্ডপে মোট দুই হাজার ৫৪৫ জন অফিসার ও ১২ হাজার ৯৪৭ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর বাইরে পূজার দিনগুলোতে সড়কে থাকবে প্রায় ২০ হাজার পুলিশ সদস্য।
এছাড়া পূজার সময় কলকাতায় যানজট এড়াতে যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশ ও প্রত্যেক থানাকে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র। বৃহস্পতিবার আলিপুর বডিগার্ড লাইনে পুলিশকর্তা ও থানার ওসিদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকও করেন তিনি।
বৈঠকে তিনি জানান, পুলিশের কোনো গাড়িও যদি নিয়ম না মানে তবে সেই গাড়ির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাইকোর্ট ও রাজ্য সরকারের নির্দেশনা মেনে দুর্গোৎসব করতে হবে। পূজার সময় রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ যাতে গাড়ির গতি কম থাকে সে ব্যাপারে কড়া নজর রাখবে। পূজার সময় বাইরে থেকে অনেক মানুষ কলকাতায় আসেন। তাই শহরের হোটেল ও রেস্তোরাঁর ওপরও কড়া নজরদারি রাখতে পুলিশকে নির্দেশ দেন তিনি।
সূত্রে জানা যায়, তৃতীয়াতেই সড়কে কিছু সংখ্যক পুলিশ নামানো হবে। এরপর চতুর্থী থেকে পুরোদমে শুরু হবে পুলিশি পাহারা। এ বছর পূজায় ৩১টি নতুন সিটি পেট্রল টহল দেবে, যাতে অস্ত্র নিয়ে থাকবেন পুলিশ আধিকারিক ও পুলিশ সদস্যরা।
লালবাজারের নির্দেশ, বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ভোর ৫টা, রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা ও সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা এই তিন শিফটে মণ্ডপ ও সড়কে পুলিশ দায়িত্বপালন করবে। ঠাকুর দেখতে এসে অনেক তরুণ-তরুণী রাতে সরকারি বাসের ভাড়া দিতে চান না। তাই গভীর রাতে বাস চালাতে ভয় পান বাস চালকরা। চালকরা যাতে কোনো হেনস্তার শিকার না হন, সেজন্য রাত ১০টার পর ওয়্যারলেস পেট্রল গাড়ি বাসের ওপর নজর রাখবে।
লালবাজার থানা বলছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেহেতু নাশকতার ঘটনা ঘটেছে তাই পুলিশকে পূজার সময় অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। মণ্ডপে ছিনতাইকারী, উত্ত্যক্তকারীদের ওপর নজর রাখতে থাকবে সাদা পোশাকের পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় থানার কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাহায্য নেবে পুলিশ সদস্যরা। এছাড়া মণ্ডপের কাছে ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর সংযোগস্থলে পথচারী ও গাড়িদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য কোনো ফুডস্টল বসতে দেওয়া হবে না। নিরাপত্তার জন্য মণ্ডপের কাছে থাকবেন না কোনো গ্যাস বেলুন বিক্রেতা। প্রত্যেকটি পিকেটের ওপর নজর থাকবে পুলিশকর্তাদের।
লালবাজারের নির্দেশ, ডিউটিতে থাকা প্রত্যেক পুলিশ সদস্য ও আধিকারিককে পরিষ্কার ও স্মার্ট ইউনিফর্ম পরে থাকতে হবে। ক্রাউড সার্কুলেশন সামলাতে পুলিশ অফিসাররা মাইক ব্যবহার করবে।
কলকাতার ৩৮টি জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা রাখবে। যেহেতু দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী ক্রসিং থেকে সাতটি মণ্ডপে যাওয়া যায় তাই ওই জায়গায় থাকবে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ। বড় মণ্ডপগুলোর আশপাশে ভিড় ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে স্কেচও তৈরি করবে পুলিশ। ভিড়ের মধ্যে কোনো বস্তু ঘিরে আতঙ্ক তৈরি হলে যাতে পদদলিত হওয়ার মতো ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারেও নজর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কলকাতায় দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তায় থাকবে- পিসিআর গাড়ি ২৬টি, বিশেষ হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড ১৩টি, হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড ২২টি, বিশেষ সিটি পেট্রল ৩১টি, কুইক রেসপন্স টিম ১৩টি, ওয়াচ টাওয়ার ৫৪টি, সিসিটিভি ৮৯টি, মোবাইল পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট ভ্যান ৭টি, ট্রাফিক পুলিশ সহায়তা বুথ ৬টি, দমকলের এসকর্ট ভ্যান ১৩টি, পুলিশ অ্যাম্বুলেন্স ও ট্রমা কেয়ার ২৮টি, মিসিং পারসন স্কোয়াডের গাড়ি ৬টি, মোট স্ট্যাইকিং ফোর্স ২০টি, ডিভিশনাল রিজার্ভ ৯টি, দূষণ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের টিম ৯টি।