1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

কল্যাণের বক্তব্যে ক্ষোভ শিশিরের, শুভেন্দুকে কটাক্ষ অভিষেকের, বাংলায় জল্পনা

  • Update Time : সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০
  • ২০০ Time View

বিশেষ প্রতিনিধি,কলকাতা : শুভেন্দু–বিতর্ক অব্যাহত পশ্চিমবাংলায়। শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রিত্ব এবং সরকারি পদ ছেড়ে দিলেও বিধায়ক পদ ছাড়েননি। ত্যাগ করেননি দলের প্রাথমিক সদস্য পদও। তাই তিনি তৃণমূলে যে নেই, সে কথা কেউ বলতে পারছেন না। আবার তিনি তৃণমূলেই থাকবেন, সে কথাও কেউ নিশ্চিত ভাবে দাবি করতে পারেন না। কারণ, তিনি যদি তৃণমূলেই থাকবেন, তা হলে মন্ত্রিত্ব বা সরকারি পদগুলি ছেড়ে দিতেন না।

তাই তৃণমূলের তরফে তাঁর মোকাবিলায় দ্বিমুখী কৌশল নেওয়া হয়েছে। এক পক্ষ রীতিমতো তোপ দেগে চলেছে তাঁর বিরুদ্ধে। আরেক পক্ষ এখনও সমঝোতা চালানোর চেষ্টা করে চলেছে। অনেকের ধারণা, এই কৌশল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের পরিকল্পনা এবং নির্দেশেই নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে শুভেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তৃণমূল ব্যর্থ হয়েছে। প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে কথা বলতে তিনি রাজি হননি। সৌগত রায়ের সঙ্গে তৃতীয়বার বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু মায়ের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে শুভেন্দু বৈঠক বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে অনেকেই যোগাযোগ করেছেন শুভেন্দু অধিকারীর বাবা তথা সাংসদ শিশির অধিকারীর সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে শিশিরবাবু সকলকেই পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল ছাড়ার কোনও পরিকল্পনাই তাঁর নেই। রবিবার শিশিরবাবু স্পষ্ট বলেন, ‘‌আমি তৃণমূলে ছিলাম, আছি। থাকবও। এখন তো আমার বয়স কম হয়নি। এই সময়ের মধ্যে অনেক কিছু দেখেছি। শিখেছি। অনেক অভিজ্ঞতাও হয়েছে। এই বয়সে নতুন করে অন্য কোনও সিদ্ধান্ত নিতে আমি রাজি নই। সেই মানসিকতাও আমার নেই।’

স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, শুভেন্দু কী করবেন? এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন কিনা! শিশিরবাবু পরিষ্কার বলে দিলেন, ‘শুভেন্দু মন্ত্রিত্ব ছেড়েছে। ‌সরকারি পদের দায়িত্বও ছেড়ে দিয়েছে। এর কারণ নিশ্চয়ই আছে। না হলে এমন সিদ্ধান্ত সে নিত না। তাই ওর ক্ষোভ, অভিমান থাকাটাই স্বাভাবিক।’ কিন্তু সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্রমাগত অশালীন আক্রমণ যে অধিকারী পরিবার ভালো ভাবে নেয়নি, সে কথাও এদিন পরিষ্কার বুঝিয়ে দেন। সরাসরি তাঁর নাম করেই বলেন, ‘আমাদের দলেরই কয়েকজন জোর করে ওকে বিজেপিতে পাঠিয়ে দিতে চাইছে। জানি না তাঁরা কেন এমন করছেন? হয়তো তাঁদের কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রতিদিনই তো দেখছি, শুভেন্দু সম্পর্কে যা নয়, তা–ই বলে যাচ্ছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ–সব ঠিক নয়। তিনি যা বলছেন, তা ঠিক করছেন না।’ কিন্তু শুভেন্দু? সেই একই প্রশ্ন ওঠে। তিনি কি দলে থাকবেন?‌ শিশিরবাবু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দেন, ‘‌দেখুন কী হয়! আমি জানি না।’

যদিও শুভেন্দুকে নিয়ে এখনও আশা ছাড়েননি তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। রবিবারও তিনি বলেছেন, ‘দলনেত্রী আমাকে শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনা করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি সেই দায়িত্ব পালন করেছি। শুভেন্দুর সঙ্গে আমি খোলাখুলিই আলোচনা করেছি। সেই আলোচনায় শুভেন্দু অধিকারী একবারও আমার কাছে দল ছাড়ার কথা বলেননি। তাই আমি কখনওই বলতে পারব না যে, তিনি দল ছেড়ে চলে যাবেন। আমি এখনও বিশ্বাস করি, তিনি যেমন তৃণমূলে ছিলেন, তেমনই থাকবেন। তা ছাড়া আলোচনার রাস্তা তো বন্ধ হয়ে যায়নি। দলনেত্রী বললে আমি আবার শুভেন্দুর সঙ্গে বসতে পারি। কথা বলতে পারি।’‌ কিন্তু দলনেত্রী কী ভাবছেন, তার হদিশ এদিনও পাওয়া যায়নি। তবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক কিন্তু এদিন রীতিমতো নাম না করে আক্রমণ করেন শুভেন্দুকে। ডায়মন্ড হারবারের রবিবাসরীয় সভা থেকে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‌কেউ তৃণমূলে রাতারাতি নেতা হয়নি। কর্মী বা নেতা, কেউ প্যারাশুটে নামেননি। লিফটেও ওঠেননি।’ এ কথা যে তিনি শুভেন্দুকে কটাক্ষ করেই বলেছেন, তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি কারও।

এদিন অভিষেক আরও বলেন, ‘‌লিফটে উঠলে কেউ একটা বিধানসভার সদস্য হয়ে থাকতেন না। কেউ কেউ অনেক কিছু বলে। আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক। বলতেই পারেন। আমি প্যারাশুটে নামলে ৩৫টা পদের অধিকারী হতাম। যেখানে আমি থাকি, সেই দক্ষিণ কলকাতায় লড়তাম। আমি ২০১৪ সালে প্রার্থী হয়েছি এই ডায়মন্ড হারবারের।’ উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে নন্দীগ্রামে এক বিজয়া সম্মিলনীতে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‌আমি প্যারাশুটে নামিনি। লিফটেও উঠিনি। সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে উঠেছি।’ অভিষেকের এই মন্তব্য শুভেন্দু–বিতর্কে আরও জটিলতা বাড়াতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্রমাগত বিষোদ্গার যে অধিকারী পরিবার ভালো ভাবে গ্রহণ করেনি, সে কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী। তাই অভিষেকের মন্তব্যও তাঁরা কতখানি খোলা মনে গ্রহণ করবেন, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কেন না, এখনও শুভেন্দু কোনও সভা–সমিতিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সে ভাবে আক্রমণাত্মক হননি।

তবে এদিন পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক মহলের সকলের দৃষ্টি ছিল মহিষাদলের একটি অরাজনৈতিক সভার দিকে। কারণ, ওই সভাটি ছিল সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর। সভাটি আয়তনে ছোট হলেও সেখানে বহু মানুষের উপস্থিতি কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর জনপ্রিয়তা নিয়ে তৃণমূলের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা হতে পারে। তাই এদিন সভায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, পূর্ব মেদিনীপুরের বিপুল সমর্থন রয়েছে তাঁরই দিকে। যদিও সেই সভায় নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য পেশ করেননি। তাঁর বক্তব্যের প্রায় পুরোটাই ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে পূর্ব মেদিনীপুরের অবদান প্রসঙ্গে। উল্লেখ করেন তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গড়ার কথা। ডিসেম্বর মাসে তিনি সঙ্গীদের নিয়ে ক্ষুদিরাম বসুর জন্মদিন ও তাম্রলিপ্ত সরকার গঠনের বর্ষপূর্তি পালন করবেন বলেও এদিন জানিয়ে দেন। অবশ্য এ–সব বিষয় নিয়ে বহুদিন ধরেই শুভেন্দুর আবেগ রয়েছে। তার প্রমাণও বহুবার দিয়েছেন। এখন তিনি সেই আবেগের কাজই করে যাচ্ছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাঙালি অস্মিতা ও আবেগ নিয়ে নিজের যত্নশীল হওয়ার কথা এদিন তিনি ঘুরিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে জাতীয়তাবাদের কথা বলে বিশেষ বার্তাও দিয়েছেন। উল্লেখ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এখন বাঙালি আবেগের কথা বলছেন। নেতাজির জন্মদিনকে জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন। তাই বাঙালি আবেগ মমতার দিকে ঝুঁকতে পারে ভেবেও সেই আবেগে ভাগ বসাতেই শুভেন্দু এখন ক্রমাগত জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেম এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালির অবদানকে নিজের বক্তব্যে নিয়ে আসছেন। পাশাপাশি এদিনের সভায় তিনি এ কথাও মানুষকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভোটের মুখেই তিনি জাতীয়তাবাদের কথা বলছেন না, এ কথা তিনি বলেন সারা বছর ধরেই। এই বার্তা কি তা হলে সরাসরি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই? প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও বিষয়টি নিয়ে কোনও রকম আলোকপাত করেনি অধিকারী পরিবার। চুপ সাংসদ শিশির অধিকারী বা দিব্যেন্দু অধিকারী।

এদিনও সভাস্থলের আশেপাশে বহু পোস্টার এবং ব্যানার দেখা গিয়েছে ‘দাদার অনুগামীদের’। সেখানে বলা হয়, ‘পদের প্রতি শুভেন্দুর কোনও মোহই নেই। বরং শুভেন্দুর পিছনে সমস্ত ধরনের পদই ছুটে বেড়ায়।’ তৃণমূল তথা দলের কিছু নেতাকে বার্তা দিতেই এই ব্যানার বা পোস্টারগুলি লাগানো হয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এদিকে, উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষালও শুভেন্দুর পক্ষে মুখ খোলায় তৃণমূলে নেতৃত্বের ওপর চাপ বেড়েছে। প্রবীরবাবু পরিষ্কার বলেছেন, ‘শুভেন্দু অনেক দক্ষ নেতা। তিনি চলে গেলে দলের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’ প্রবীরবাবুর এই বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে এদিন আজব ঘটনাও দেখেছে পূর্ব মেদিনীপুর। শুভেন্দুকে নিয়ে এতদিন যিনি একের পর এক তোপ দেগে গিয়েছেন, রামনগরের সেই বিধায়ক অখিল গিরি সকলকে চমকে দিয়ে উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করেছেন। এবার তাঁর মুখেই শোনা গিয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর প্রশংসা৷ আর সে কথা শুনে পূর্ব মেদিনীপুরে রীতিমতো জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

এদিন অখিল গিরি বলেন, ‘শুভেন্দুবাবু এখনও তৃণমূলেই রয়েছেন৷ তিনি তৃণমূলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা৷ এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। মহিষাদলে তাঁর অরাজনৈতিক সভায় শুনলাম শিবসেনা নাকি তাদের পতাকা লাগিয়েছে৷ এমনকী, শুভেন্দু অধিকারীর ছবিও বাদ দেয়নি। তাঁর ছবির ওপরও নাকি তারা পতাকা লাগিয়েছে৷ আমার ছবির ওপর কেউ যদি বিজেপি‌র পতাকা লাগিয়ে দেয়, তা হলে আমি কি বিজেপি হয়ে গেলাম? না সকলে আমাকে বিজেপি নেতা বা কর্মী বলবেন?’ বরাবরই শুভেন্দু অধিকারীর বিরোধী বলেই পূর্ব মেদিনীপুরে পরিচিত তিনি৷ তা হলে তাঁর এই ভোল বদল কেন? এমন প্রশ্নও উঠেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের কয়েকজন সাংসদকে নির্দেশ দিয়েছেন শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে। তাই অখিল গিরির মুখে এখন শুভেন্দু অধিকারীর প্রশংসা শোনা যাচ্ছে। তবে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কিন্তু থেমে যায়নি।

দলের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের তীব্র সমালোচনা করে হাওড়ার শিবপুরের বিধায়ক জটু লাহিড়ী বলেছেন, ‘হঠাৎ শুনলাম, পিকে (প্রশান্ত কিশোর), না কে যেন একজনকে দল পরিচালনার জন্য আনা হচ্ছে। আমার ধারণা, তিনি আসার পর দলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমিও তাঁর দলের লোকেদের কাছে অপমানিত হয়েছি। তাঁরা এসে বলছেন, এটা করতে হবে, সেটা করবেন না। বলি, এ–সব হচ্ছেটা কী? প্রশান্ত কিশোর কে? একজন ভাড়াটে ছাড়া আর কেউ নন। তাঁর কথা মানব কেন?’ কেউ কেউ বলছেন, দলনেত্রী এবং তাঁর ভাইপো হয়তো দলের ভালোর জন্যেই প্রশান্ত কিশোরকে এনেছিলেন। কিন্তু, এখন দেখা যাচ্ছে, প্রশান্ত কিশোরের জন্যে দলেরই ক্ষতি হতে শুরু করেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..