বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : কাঁথির পুরপ্রশাসকের পদ থেকে সৌমেন্দু অধিকারীকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে আখ্যা দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই ঘটনায় রাজ্যের শাসক দলের মুখ পুড়ল বলে মনে করা হচ্ছে। শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর আচমকাই কাঁথির পুরপ্রশাসকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সৌমেন্দুকে। এদিকে, বৃহস্পতিবারই শুভেন্দু অধিকারীকে জুট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার দিন পনেরোর মধ্যে শুভেন্দুকে এই পদ দেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত ইঙ্গিতবহ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরই শুভেন্দুর পাশাপাশি অধিকারী পরিবারকেই নিশানা করেন তৃণমূলের শীর্ষনেতারা। অথচ দুই সাংসদ যথাক্রমে শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী ও ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী এবং কাঁথির পুর প্রশাসক সৌমেন্দু অধিকারী তৃণমূলেই রয়েছেন। তাঁরা তৃণমূলে থাকবেন বলেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও তাঁদের ওপর তৃণমূলের শীর্ষস্তরের নেতাদের আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি অধিকারী পরিবারে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ঘনিষ্ঠ মহলে এ নিয়ে তীব্র অস্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন স্বয়ং শিশিরবাবুও। তবু তাঁদের ওপর তৃণমূল নেতাদের আক্রমণ এতটুকু কমেনি।
এরই মধ্যে খড়দহের সভায় শুভেন্দু আচমকাই বলে দেন, রামনবমীতে অধিকারী পরিবারে পদ্ম ফুটবে। কী কারণে এ কথা শুভেন্দু বলেছেন, তা জানা যায়নি। তবে বুধবার তাঁর ওই মন্তব্যের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই কাঁথির পুরপ্রশাসকের পদ থেকে সৌমেন্দু অধিকারীকে সরিয়ে দেয় তৃণমূল। পুরপ্রশাসক পদে নিযুক্ত করা হয় শাসক দল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ এক নেতাকে। ঘটনায় অধিকারী পরিবারে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। স্বয়ং দিব্যেন্দু অধিকারী প্রশ্ন তোলেন, কোন ঘটনার শাস্তি হিসেবে সৌমেন্দু অধিকারীকে পুরপ্রশাসকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল? শুধু তাই নয়, বিষয়টির ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চিঠি দেন।
যদিও চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার যেমন শাসক দল বা সরকারের তরফে করা হয়নি, তেমনই দিব্যেন্দুও চিঠির জবাব পেয়েছেন বলে কোনও তথ্য সংবাদ মাধ্যমে জানাননি। ওই ঘটনায় এতটাই ক্ষুব্ধ হন দিব্যেন্দু যে, তিনি বৃহস্পতিবার কাঁথি পুরসভা নিজের দফতরের পথও মাড়াননি। তৃণমূলের এই সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক কারণেই মানতে পারেননি স্বয়ং সৌমেন্দু। কাঁথির পুরপ্রশাসক পদ থেকে তাঁর অপসারণকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি কলকাতাই হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলা গ্রহণ করলেও হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, এই ঘটনার ওপর হস্তক্ষেপ করবে না আদালত। তবে, পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী দত্তের ডিভিশন বেঞ্চ এ কথাও দ্বিধাহীন ভাবে জানিয়ে দেয়, পুরপ্রশাসক পদ থেকে সৌমেন্দু অধিকারীর অপসারণ পুরোপুরি বেআইনি এবং অবৈধ।
হাইকোর্টের এই নির্দেশ তৃণমূলকে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অন্যদিকে, এই ঘটনার পর আচমকাই রটে যায় সৌমেন্দু অধিকারী নাকি শুক্রবার শুভেন্দুর সভাতেই বিজেপিতে যোগ দেবেন। যদিও প্রকাশ্যে সৌমেন্দু এ ব্যাপারে কোনও রকম ইঙ্গিতও দেননি। ২৭ নভেম্বর হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেন শুভেন্দু। তাঁর সেই ক্ষত এবার মুছিয়ে দিল বিজেপি। তাঁকে কার্যত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মর্যাদাই দেওয়া হচ্ছে। জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান করা হচ্ছে তাঁকে।
শোনা যাচ্ছে, নতুন বছরেই শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়োগ করা হবে। সৌমেন্দুকে নিয়ে হাইকোর্টে মুখ পোড়ার পর এবং শুভেন্দুকে কার্যত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ায় পাল্টা রাজনৈতিক চাল দিল তৃণমূল। বৃহস্পতিবারই হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের কমিটি তৈরি হয়। সেই কমিটিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাখা হয়েছে শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীকে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর দিব্যেন্দু অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের ধারণা, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দিব্যেন্দুর ক্ষোভে মলম লাগানোর চেষ্টা করল তৃণমূল।