বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:এক কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে রীতিমতো রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে বাংলার উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই কিশোরীকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধারের পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন সেখানকার মানুষ। তাঁরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ অবরোধ সরাতে গেলে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ওই অঞ্চল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে চোপড়ার সোনাপুরের বসলামপুর গ্রামে এক কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ওই কিশোরীর মৃতদেহ দেখে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, তাকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। মৃতার পরিবারের তরফে বলা হয়েছে, ওই নির্যাতিতা কয়েকদিন আগেই বের হওয়া মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে। তারা অভিযোগ করেছে, কিশোরীকে নাকি বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এর পরই ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে সোনাপুরে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিশাল জনতা। রাস্তায় গাড়ির টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। খবর পেয়ে সেখানে চোপড়া থানার পুলিশ ছুটে যায়। তারা উত্তেজিত জনতাকে অবরোধ তুলে নিতে বলে। কিন্তু ক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ করেই রাখে। তখন পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেল মারমুখি হয়ে ওঠে তারা।
অভিযোগ, পুলিশ তখন লাঠিচার্জ করে। পাল্টা আক্রমণ চালায় জনতাও। তারা ইট–পাটকেল ছুড়তে শুরু করে পুলিশকে লক্ষ্য করে। ফলে দুই পক্ষে গোলমাল শুরু হয়ে যায়। উত্তেজিত জনতা তখন রাস্তায় থাকা সরকারি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন পুলিশ গুলি চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও পুলিশ সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশের অনমনীয় মনোভাব দেখে জনতা আরও ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে। তারা আরও বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়। পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্রুদ্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারগ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। তবুও জনতাকে শান্ত করা যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে প্রশাসনের তরফে ওই অঞ্চলে ইসলামপুর পুলিশ জেলার কমব্যাট ফোর্স এবং র্যাফ নামানো হয়। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ছুটে যান পুলিশের পদস্থ কর্তারাও।
এদিকে, জানা গিয়েছে, ঘটনার পর পুলিশের উদ্যোগে মৃতার দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। তার পর পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, রিপোর্টে নাকি ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তার মৃত্যুর কারণ বিষক্রিয়া বলে তারা আরও দাবি করেছে। যদিও স্থানীয়দের অধিকাংশই পুলিশের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা পুলিশের বক্তব্যকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে ঘটনায় রাজনীতির রংও লাগছে শুরু করেছে। এই হিংসা নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
রাজ্য বিজেপি টুইট করে অভিযোগ করেছে, মৃত কিশোরীর দাদা তাদের দলের বুথ সভাপতি। সেইজন্যই কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নও তুলেছে তারা। পাশাপাশি ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে ফিরোজ আলি নামে এক যুবকের নাম টুইটে উল্লেখ করেছে বিজেপি। এ ছাড়া দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতার ও কড়া সাজার দাবি জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘এই রাজ্যে নারীদের যে কোনও নিরাপত্তা নেই, এই ঘটনা সেই অভিযোগই প্রমাণ করছে।’