গাজী তাহের লিটন, ভোলা: দেশ-বিদেশের পর্যটকদের দেখার, শেখার ও জানার একটি দৃশ্যপট নিয়ে এ লেখাটি। দেখেছি সেই ২০০৩ এ প্রথম, ১৭ বছর পর আবার দেখতে এলাম। কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি চট্টগ্রামের দামপাড়া এলাকায়, ১৯ নং বাদশা মিয়া চৌধুরী সড়কে অবস্থিত। এটি মেডিকেল কলেজের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে, চট্টেশ্বরী সড়কের চারুকলা ইনস্টিটিউটের কাছাকাছি এবং ফিনলে গেস্ট হাউসের নিকটবর্তী পাহাড়ি ঢালু আর সমতল ভূমিতে গড়ে উঠেছে।
এটি শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে ২২ কিমি উত্তরে এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৮ কিমি দূরে অবস্থিত। সমাধি এলাকা সবুজ বৃক্ষ আর পাতাবাহারের বেষ্টনী দিয়ে ঘেরা।ওয়ার সিমেট্রির প্রতিষ্ঠাকালে এলাকাটি বিশাল ধানক্ষেত ছিলো, যদিও বর্তমানে এটি বেশ উন্নত এলাকা এবং শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত। পঞ্চাশের দশকের প্রথমার্ধে নির্মিত এ সিমেট্রির বাইরের অংশে খোলা মাঠ রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২ টা এবং বিকেল ৩ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্যে প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত, তবে শীতকালীন মৌসুমে এ সময়সূচির কিছুটা পরিবর্তন ঘটে থাকে।কোলাহলমুক্ত এই সমাধি এলাকায় দর্শনার্থীদের উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার থাকলেও এখানে বসা নিষেধ।
ইতিহাসের পাতায় যেভাবে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এই সমাধিসেৌধ প্রতিষ্ঠা করে। সূচনালগ্নে এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈন্যদের প্রায় ৪০০টি সমাধি ছিলো। তবে বর্তমানে এখানে ৭৩১টি সমাধি বিদ্যমান যার ১৭টি অজানা ব্যক্তির। এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত জাতীয় বিদেশী সৈন্যদের প্রায় ২০টি (১জন ওলন্দাজ এবং ১৯জন জাপানি) সমাধি বিদ্যমান। এছাড়াও এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) চট্টগ্রাম-বোম্বের একটি স্মারক বিদ্যমান।
যুদ্ধ চলাকালীন সময় সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ এবং ১৫২ নং ব্রিটিশ জেনারেল হাসপাতালের সুবিধার কারণে চট্টগ্রামে মিত্র বাহিনী চতুর্দশ সেনাবাহিনীর এই পথিকৃৎ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। হাসপাতালটি ডিসেম্বর ১৯৪৪ থেকে অক্টোবর ১৯৪৫ পর্যন্ত সক্রিয় ছিলো। প্রাথমিকভাবে এই সমাধিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রায় ৪০০ মৃতদেহ সমাহিত করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও যুদ্ধ শেষে অতিরিক্ত মৃতদেহ লুসাই, ঢাকা, খুলনা, যশোর, কক্সবাজার, ধোয়া পালং, দোহাজারি, রাঙ্গামাটি, পটিয়া এবং অন্যান্য অস্থায়ী সমাধিস্থান থেকে এই সমাধিস্থানে স্থানান্তর করা হয়।
সৌন্দর্যের রানী চট্টগ্রামের ছায়াসুনিবিড় সবুজে ঘেরা ওয়ারসিমেট্রি সত্যি নান্দনিক দৃশ্যপট।যাঁরা অপরূপ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ইতিহাস খুঁজে বেড়ান তাঁদের জন্যও এ স্থানটি গুরুত্বপূর্ণ।