কলকাতা সংবাদদাতা:বাংলায় অঙ্ককে যিনি সাহিত্যের পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছিলেন, তিনি কে সি নাগ (কেশবচন্দ্র নাগ)। অঙ্কের বাঙালি ছাত্রছাত্রীদের কাছে অতিপরিচিত তিনি। ঠিক তেমনই, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সকলের অঙ্ক ভীতি কাটিয়ে উঠতে বাংলার শিক্ষাজগতে যিনি আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন, তিনি এস এন দে। পুরো নাম সৌরেন্দ্রনাথ দে। সেই এস এন দে আর নেই। সম্প্রতি সেরিব্রাল অ্যাটাকে প্রয়াত হয়েছেন তিনি।
অঙ্ককে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছে জলের মতো তরল করে দিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও থেকে গিয়েছেন অসংখ্য জটিল অঙ্ক আর উদাহরণের আড়ালে। খাতা–কলমের সাহায্য ছাড়াই মুখে মুখে অঙ্কের জটিল সমস্যার সমাধান করে দিতে পারতেন। কলেজের অধ্যাপনা করার সময়েই তিনি বুঝে যান, অঙ্ক শেখার শুরুটা হওয়া উচিত মাধ্যমিক স্তরের পর থেকেই। তাই একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের সহজে অঙ্ক বুঝতে এবং অঙ্ককে ভালবাসতে বাংলা ও ইংরেজিতে বই লিখতে শুরু করেন। প্রকাশের পরই সেই বইগুলি বেস্ট সেলার হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, অনেক পড়ুয়াকে পড়াতেনও। বিশেষ করে মেধাবী ও গরিব পড়ুয়াদের কাছ থেকে কোনও পারিশ্রমিক নিতেন না। ফলে বৈদ্যবাটি শহরের সাধারণ মানুষের আপনজন হয়ে উঠেছিলেন।
স্ত্রীর মৃত্যুর পর ব্যক্তিগত জীবনে একা হয়ে যান তিনি। খাদ্যনালিতে তাঁর ক্যানসার ধরা পড়েছিল। যদিও তাঁর মৃত্যু হয় হৃদরোগে। বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। এস এন দে’র জন্ম ১৯৪৪ সালে শ্রীরামপুরের কালীতলা এলাকায়। ছেলেবেলা কেটেছিল প্রবল দারিদ্রে। তবে ছোট থেকেই তাঁর অঙ্কের প্রতি ছিল তীব্র আকর্ষণ। নিজের অসম্ভব মেধার জোরেই অঙ্ক নিয়ে পড়াশুনো করেন। ভবিষ্যতে অধ্যাপনা শুরু করেন। দক্ষিণ কলকাতার হেরম্বচন্দ্র কলেজে (সিটি কলেজ) অঙ্ক ও স্ট্যাটিসটিকসের অধ্যাপক ছিলেন। এ ছাড়া শিবনাথ শাস্ত্রী কলেজ এবং ব্যারাকপুরের মহাদেবানন্দ কলেজে আংশিক সময়ের জন্যও অধ্যাপনা করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে নিরহঙ্কারী ছিলেন। কোনও রকম আড়ম্বর পছন্দ করতেন না। সাদামাঠা জীবন কাটাতে পছন্দ করতেন। অঙ্কে ডুবে থাকাটাই ছিল তাঁর একমাত্র নেশা। আর, সাধারণ মানুষকেও খুব ভালবাসতেন। এমনকী, পাড়ার দুর্গাপুজোয় প্রত্যেকের ভুরিভোজের আয়োজনও করেছেন। তাঁর প্রয়াণে অঙ্কের শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সকলেরই একটাই বক্তব্য, এস এন দে’র লেখা অঙ্কের বইগুলি আগামিদিনেও পড়ুয়াদের কাছে আশ্রয় হয়ে থেকে যাবে। আর সেই সূত্রেই সকলের মনের মণিকোঠায় থেকে যাবেন এস এন দে’ও।