বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:‘কাটমানির টাকা কোথায়?’ এমন প্রশ্ন কোনও রাজনৈতিক নেতার নয়, পশ্চিমবাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের। নিশানায় অবশ্যই রাজ্যের তৃণমূল সরকার। অতিমারি পরিস্থিতিতে এমন মন্তব্য যে রীতিমতো অসংবেদনশীল, তা যে কোনও ব্যক্তিই স্বীকার করবেন। বলা বাহুল্য, এই টুইট শনিবার রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন তৈরি করে। অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন। অবশ্য চুপ করে থাকেনি রাজ্য সরকারও। নাম না করে টুইট করে রাজ্যপালের এই মন্তব্যের ঘুরিয়ে সমালোচনা করেছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরও। টুইটে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে রাজ্যবাসীকে নিরাপদে রাখতে প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছে প্রশাসন। সেই সময় এমন মন্তব্য কাম্য নয়।
উল্লেখ্য, শুক্রবারই টুইট করে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম কেনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে পশ্চিমবাংলার সরকারকে আক্রমণ করেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘এই সরঞ্জাম কেনার কাটমানি কোথায় গেল? কে বা কারা লাভবান হলেন? সেইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজাই এখন তদন্ত করে দেখা উচিত। চিকিৎসার সরঞ্জাম কোথা থেকে কেনা হয়েছে, কারা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা শ্বেতপত্র প্রকাশ করে সাধারণ মানুষকে জানানো হোক।’ পাশাপাশি স্বচ্ছতার অভাবেই যে দুর্নীতির জন্ম, সে কথাও তিনি সরকারকে ওই টুইটে মনে করিয়ে দেন। প্রসঙ্গত, কোভিড মোকাবিলায় রাজ্য সরকার প্রায় ২ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনেছে। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে তা কিনতে নিয়ম মানা হয়নি বলে নানা অভিযোগ উঠেছে। তার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে কড়া হন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তার পর রাজ্যপালের এই টুইট সরকারকে অনেকটাই বিস্মিত করেছে।
এই টুইট প্রকাশ্যে এলেই নড়েচড়ে বসে স্বরাষ্ট্র দফতর। এই দফতরও পাল্টা টুইট করে। তবে না নাম করে তা করা হয়। টুইটে দফতর লিখেছে, এই ধরনের আক্রমণ আক্রমণ প্রত্যাশিত নয়। রাজ্য প্রশাসনের সাধু উদ্যোগকে অনেকটাই পিছিয়ে দিতে পারে এই ধরনের টুইট। পর পর দুটি বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। একদিকে করোনা সংক্রমণ, অন্যদিকে আমফান তাণ্ডবে অনেক ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের। একটা কঠিন সময় আমরা পার হচ্ছি। এই সময় আমাদের কাজে প্রেরণা দেওয়া উচিত। লড়াই করতে আমাদের উৎসাহিত করা উচিত। এই সময় সমস্ত বিতর্ক ভুলে সকলের সার্বিক শান্তি বজায় রাখা প্রত্যাশিত। কিন্তু অনেকেই তা চাইছেন না। তাঁরা চাইছেন সরকারের উদ্যোগে বিঘ্ন তৈরি করতে। সরাসরি নাম করা না হলেও স্বরাষ্ট্র দফতরের নিশানায় যে রয়েছেন স্বয়ং রাজ্যপাল, তা সহজবোধ্য।
অবশ্য এদিন রাত পর্যন্ত রাজভবনের তরফে স্বরাষ্ট্র দফতরের এই টুইট প্রসঙ্গে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বিষয়টি নিয়ে আর বিতর্কে যেতে নাও পারে তারা। কারণ, এমন বিষয় নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে তা রাজভবনের গরিমার পক্ষে মানানসই হবে না।