বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:অদ্ভুত ঘটনা ঘটল চোপড়ায়। যে কিশোরীকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে তার পরিবারের দাবি এবং সেইজন্য চোপড়ায় তুমুল বিক্ষোভ দেখান সেখানকার বাসিন্দারা, সেই কিশোরীরই বাবা, দাদা এবং এক কাকা–সহ পাঁচজনকে আটক করে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। যদিও পুলিশের বক্তব্য, জিজ্ঞাসাবাদ করেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, ঘটনা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতেই তাঁদের আটক করেছে পুলিশ। আর সেই অভিযোগ তুলেই সোমবার ফের চোপড়ায় বিক্ষোভ দেখান বিজেপির কর্মী–সমর্থকরা। ঘটনায় চোপড়া এখনও ফুঁসছে। তাই কড়া অবস্থান নিয়েছে পুলিশও।
রবিবার সকালে চোপড়ায় নিজেদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে সোনাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে একটি ফাঁকা জায়গা থেকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার হয় চোপড়াগজের বিজেপি বুথ সভাপতির বোন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। মৃতার পরিবারের দাবি, তাকে অপহরণ করে ধর্ষণ করা হয়। তার পর তাকে খুন করা হয়েছে। ঘটনায় তৃণমূল নেতা–কর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ তোলা হয়। রবিবারই ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় চোপড়া। যদিও পুলিশ দাবি করে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়নি। বিষক্রিয়াতে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পুলিশের বক্তব্য মানতে রাজি হয়নি কিশোরীর পরিবার। বরং বিজেপি নেতা–কর্মীদের নেতৃত্বে কিশোরীর মৃতদেহ নিয়ে মিছিল করে দেহের সৎকার করা হয়।
অভিযোগ, দেহ সৎকার করে ফেরার পর মৃত কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেব–সহ তৃণমূলের অন্য নেতারা। গৌতম দেব মৃতার পরিবারকে জানান, দোষীরা শাস্তি পাবেই। কিন্তু তার পরই কিশোরীর পরিবারের পাঁচজনকে ডেকে থানায় নিয়ে গিয়ে আটক করে পুলিশ। এদিকে, চোপড়ায় কিশোরীর দেহ যেখান থেকে উদ্ধার হয়, তার প্রায় ৫০ মিটার দূর থেকে এক যুবকের দেহ উদ্ধার হয়। ওই যুবকের বিরুদ্ধেই কিশোরীর পরিবার তাকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ তুলেছিল। তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই জানা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে এর মধ্যে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বক্তব্যে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেছেন, ‘ওই কিশোরী এবং যুবক একই গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ত। তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। পরিবার মেনে না নেওয়ার আশঙ্কায় তারা আত্মহত্যা করেছে।’
যদিও তৃণমূল নেতাদের এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন মৃত কিশোরীর বাবা। তিনি পুলিশের কাছে যে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, সেই অভিযোগেই এখনও অনড় রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ওই যুবক কিশোরীকে নিয়মিত বিরক্ত করত। কিশোরী তাকে পছন্দ করত না। তাই তাকে অপহরণ ও ধর্ষণ করে খুন করেছে। এ ব্যাপারে মুখ খুলেছে স্থানীয় বিজেপিও। জেলার বিজেপি সহসভাপতি সুরজিৎ সেন বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনাকে বিকৃত করতেই এই কাল্পনিক সম্পর্কের কথা টেনে আনছে তৃণমূল এবং পুলিশ। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষও আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তদন্তের অভিমুখ অন্যদিকে ঘোরাতে ওই যুবককে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। তিনি দুটি ঘটনারই পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, এদিন বিকেলে চোপড়ায় কিশোরীকে কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ জানিয়ে কলকাতায় মিছিল করল বিজেপির মহিলা মোর্চা। যদিও ওই মোর্চা গড়িয়াহাট থেকে দেশপ্রিয় পার্ক পর্যন্ত মিছিল করার কর্মসূচি নিলেও পুলিশ অনুমতি দেয়নি। প্রতিবাদে অগ্নিমিত্র পলের নেতৃত্বে বিজেপির মহিলা সদস্যরা মিছিল শুরু করতে গেলে আটকে দেয় পুলিশ। ফলে গড়িয়াহাট মোড়েই প্রতিবাদ–বিক্ষোভে শামিল হন বিজেপির নেত্রী ও সদস্যারা। সেখানেই অগ্নিমিত্রা অভিযোগ করেন, ‘প্রতিদিনই রাজ্যজুড়ে মহিলাদের ওপর অত্যাচার চলছে। ছোট বাচ্চা থেকে বৃদ্ধা, কেউই ছাড় পাচ্ছে না।’ এ ছাড়া প্রশাসনের ব্যর্থতাতেই চোপড়ার মতো ঘটনা ঘটছে বলে এদিন দাবি করেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। তিনি জানান, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তায় অপরাধীরা গ্রেফতার হচ্ছে না। তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে।