বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:ফের কি বাংলার রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়? মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি ভবনের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গোয়ার রাজ্যপাল সত্যপাল মালিককে মেঘালয়ের রাজ্যপাল করা হয়েছে। সত্যপাল মালিক এক সময় জম্মু ও কাশ্মীরেরও রাজ্যপাল ছিলেন। কিন্তু মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়কে অন্য কোন রাজ্যে রাজ্যপাল করে পাঠানো হচ্ছে, সে ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি ওই বিবৃতিতে। তাতেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি তথাগত রায়কে আর রাজ্যপাল করা হচ্ছে না? তিনি কি তা হলে সত্যিই বাংলার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠছেন?
এই জল্পনা তীব্র হয়ে উঠেছে তথাগত রায়ের মন্তব্যেই। কিছুদিন আগে তিনি নাম না করে একটু ঘুরিয়ে বাংলায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে তিনি ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চান বলেও ইঙ্গিত দেন। মঙ্গলবার তাঁর একটি টুইটে সেই জল্পনা আরও গভীর হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘সত্যপাল মালিককে শিলংয়ে স্বাগত। তাঁর সঙ্গে আমার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ২০ মে আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা ছিল। এবার যেন রাস্তার শেষ দেখতে পাচ্ছি।’ তার পরই জল্পনা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতে বিজেপি সরকার গড়ার পরই ২০১৫ সালে ত্রিপুরার রাজ্যপাল করা হয় তথাগত রায়কে। তার পর তাঁকে রাজ্যপাল করে পাঠানো হয় মেঘালয়ে। সত্যপাল মালিক রাজ্যপাল হিসেবে মেঘালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার আগে পর্যন্ত ওই রাজ্যের রাজ্যপাল থাকছেন তথাগত রায়ই।
এদিকে, বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে ফেরার আগ্রহ রয়েছে তাঁর। দলের একাংশের ধারণা, তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে পারেন। কিন্তু এ ব্যাপারে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। কেন না, এর আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা বিসিসিআই–এর প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা স্বপন দাশগুপ্ত, অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে বিজেপি তুলে ধরতে পারে বলে শোনা গিয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কোনও সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেনি। তাই সেই নামগুলি নিয়ে শুধু জল্পনাই হয়েছে, সঠিক জবাব পাওয়া যায়নি। অনেকেই মনে করছেন, এখন সেই জল্পনায় নতুন করে যুক্ত হতে চলেছে তথাগত রায়ের নাম।
কিন্তু প্রশ্ন হল, তথাগত রায় যদি রাজ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন, তা হলে সেই বিষয়টিকে দিলীপ ঘোষ কী ভাবে দেখবেন? আর সেই প্রশ্ন এমন সময় দেখা দিয়েছে, যখন দলেরই একাংশ দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে গোষ্ঠী রাজনীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে সরব হয়েছেন। গোপনে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, নিজে মুখমন্ত্রী হতে চান দিলীপ ঘোষ। তাই দলে দক্ষ ও অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতাদের কোণঠাসা করে রাখার চক্রান্ত চলছে। অনেক সময়ই তাঁদের অসম্মানও করা হচ্ছে, যাতে হয় তাঁরা দল ছেড়ে চলে যান, অথবা নিষ্ক্রিয় হয়ে যান।
এ ছাড়াও তাঁর জন্যই দলে অনেক উপদল গড়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এর ফলেই নাকি প্রতিদিন হাজারে হাজারে দলীয় কর্মী–সমর্থক বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে চলে যাচ্ছেন। বিষয়টি জানতে পেরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিলীপবাবুকে দিল্লিতে ডেকে সতর্ক করে দিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। তবে তথাগতবাবু যদি বাস্তবিকই বাংলার রাজনীতিতে ফিরে আসেন, তা হলে তাঁর আগমনকে কী ভাবে দেখবেন দিলীপবাবু? উঠছে সেই প্রশ্নও।