বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা ;
বিজেপি নাকি একা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতা থেকে সরাতে সব কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে এসেছে বাংলায়। সে কথা জনসভাগুলিতে অনেকবারই উল্লেখ করেছেন তৃণমূল দলনেত্রী। এমনকী, কংগ্রেস–সহ ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতাদের চিঠিও লিখেছেন। উদ্দেশ্য একটাই, তাঁরা যেন সরাসরি তাঁকে সমর্থন করতে এগিয়ে আসেন। দিনকয়েক আগেই কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকেও মমতা চিঠি লিখেছেন। বিষয়টি নিয়ে এবার মুখ খুললেন পশ্চিমবাংলার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি। তিনি জানালেন, প্রদেশ কংগ্রেস তৃণমূলকে সাহায্য করতে তৈরি। তবে একটা শর্তও তিনি দিয়েছেন। মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিতে হবে তাঁকে।
এদিন বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি নিজের বক্তব্য জানিয়ে দিয়েছেন অধীর। বহরমপুরের একটি নির্বাচনী জনসভায় তিনি পরিষ্কার বলেছেন, ‘মমতা অনুধাবন করেছেন, এবার হেরে যাবেন। নন্দীগ্রামও হাতছাড়া হওয়ার ভয় চেপে বসেছে তাঁর মনে। রাজ্যপাট হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন তিনি। তাই এখন নিজের কুর্সি বাঁচাতে উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি। তাই কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের শরণাপন্ন হয়েছেন। এ ভাবেই চাইছেন নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে।’ উল্লেখ্য, মমতা পশ্চিমবাংলা থেকে ৩৪ বছরের বাম জমানার অবসান ঘটিয়েছিলেন কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেই। সরকারও গঠিত হয়েছিল জোট বেঁধে। কিন্তু জোট শরিক কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, তাদের সঙ্গে সুব্যবহার করেননি মমতা। এমনকী, কংগ্রেস বিধায়কদের ভাঙিয়ে নিজের দলে টেনে নিয়েছেন। তাই জোট ভেঙে বেরিয়ে যায় কংগ্রেস। তাতে অবশ্য রাজ্যের ক্ষমতা থেকে ছিটকে যায়নি তৃণমূল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করেছিল কংগ্রেস। এবারও তারা বামেদের সঙ্গেই জোট বেঁধেছে।
উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনেও কংগ্রেসকে ভাঙিয়েছে তৃণমূল। বীরভূমের মুরারইয়ে তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন আবদুর রহমান। আর কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন মোশারফ হোসেন। কিন্তু আবদুর রহমান করোনা আক্রান্ত হলে বিকল্প প্রার্থীর কথা ভাবতে শুরু করে তৃণমূল। এই সময়েই মোশারফ হোসেনের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করে। তাঁকে তারা প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেয়। মোশারফ রাজি হলে তাঁকেই প্রার্থী করে দেয় তৃণমূল। ঘটনায় হতবাক কংগ্রেস। এদিকে, অনেক তৃণমূল নেতাই ভেবেছিলেন, আবদুর রহমান করোনা আক্রান্ত হলে দলের অন্যতম নেতা আলি মোর্তাজা খান প্রার্থী হবেন। তাই মোশারফ হোসেন প্রার্থী হওয়ায় তাঁরা বিস্মিত হন। ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আলি মোর্তাজা খান তৃণমূল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন মঙ্গলবার। তবে এখনও তিনি অন্য কোনও দলে যোগ দেননি। শোনা যাচ্ছে, তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন মুরারই কেন্দ্রে।
এদিন বহরমপুরের জনসভায় অধীর চৌধুরি চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন তৃণমূল নেত্রীকে। আক্রমণের পাশাপাশি কংগ্রেসকে পাশে পেতে হলে কী শর্ত মানতে হবে, সে কথাও মমতাকে মনে করিয়ে দেন তিনি। বলেন, ‘মুর্শিদাবাদের ২২টি আসন থেকেই তৃণমূলকে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিতে হবে। নেত্রীর দলের সমস্ত কর্মী–সমর্থককে বলতে হবে, তাঁরা যেন কংগ্রেসকে ভোট দেন। ভোটের আগে কংগ্রেসের হয়ে প্রচারও করতে হবে তাঁর দলের প্রত্যেক নেতা ও কর্মীকে।’ রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূল নেত্রীর পক্ষে অধীরের এই শর্ত মানা সম্ভব নয়। তাই বিজেপিকে রুখতে কংগ্রেসকে পাশে পাওয়া তাঁর পক্ষে এখনও অসম্ভবই।