শিক্ষা: প্রতি বছর নভেম্বরের শুরুতে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া হয়। করোনার কারণে রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা আয়োজনের কোনো প্রস্তুতি নেই শিক্ষাবোর্ডগুলোর। শ্রেণিকক্ষে ও অনলাইনে পাঠদান শেষে অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে। প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা আয়োজনেরও নেই কোনো প্রস্তুতি।
গতবারের মতো এবারও দুই শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেবেন। যে কারণে সংশ্লিষ্ট কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে সম্মত নন। অন্যদিকে, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড আগামী ১১ নভেম্বর এসএসসি ও সমমান এবং ২ ডিসেম্বর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ঐচ্ছিক বিষয়ে পরীক্ষা হবে।
শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর নভেম্বরের শুরুতে জেএসসি ও জেডিসি এবং একই মাসের শেষের দিকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া হয়। ২০১১ সাল থেকে এই দুই পরীক্ষা চালু করা হয়। পরীক্ষা নিতে কয়েক মাস আগেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, কেন্দ্র নির্ধারণ করে ঘোষণা দেয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ড। করোনার কারণে গত বছর এই দুই শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল করে অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়। যদিও শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর পরিবর্তন করা হয়নি।
পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে যে রোল নম্বর ছিল সেটাই পরের শ্রেণিতে নির্ধারণ করা হয়। করোনার কারণে দীর্ঘ দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলেও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে প্রতিদিন সরাসরি পাঠদান করা হচ্ছে না। তাদের সপ্তাহে একদিন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করা হচ্ছে। তবে অনলাইনে অনেক প্রতিষ্ঠান ক্লাস নিচ্ছে। শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান না করায় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছে না। এছাড়া আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে যথাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার আয়োজন করায় বোর্ডগুলো জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নিতে পারছে না।
এদিকে, গত ১৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় শিক্ষাক্রমের খসড়া রূপরেখার অনুমোদন দিয়েছেন। ওই রূপরেখা অনুযায়ী নতুন কারিকুলামে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
জেএসসি পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড আইন অনুযায়ী আমাদের দুটি মাত্র পাবলিক (এসএসসি ও এইচএসসি) পরীক্ষা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। যে কারণে এটি আমাদের জন্য বাধ্যবাধকতার বিষয়। কিন্তু জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়ে আমরা ‘বাউন্ড’ (বাধ্য) নই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সেটি (জেএসসি পরীক্ষা) আমরা আয়োজন করি। প্রতি বছর সাধারণত সেপ্টেম্বরের দিকে আমরা এর প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। এই পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি এবং আমাদের এ সংক্রান্ত কোনো প্রস্তুতিও নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি পরীক্ষা না হয় সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কীভাবে মূল্যায়ন করে পরবর্তী শ্রেণিতে তুলে দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্তও মন্ত্রণালয় আমাদের চিঠির মাধ্যমে জানাবে। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
অপরদিকে, প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এ পরীক্ষার আয়োজন করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। গত বছর প্রাথমিক স্তরের কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়। সূত্র জানিয়েছে, গতকাল (১৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা আয়োজনের কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। এমনকি ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা আয়োজনের জন্য মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিলেও তারা রাজি হয়নি। তাদের পক্ষে ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব নয় বলে লিখিতভাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) রতন চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, সমাপনী পরীক্ষার বিষয়ে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এর বাইরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।