বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:মহালয়ার ভোরেই বাজবে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। পরিষ্কার জানিয়ে দিল আকাশবাণী। উল্লেখ্য, এবার তিথি ও নক্ষত্রের মহাগেরোয় পড়েছে বাঙালির শারদোৎসব। এবার পিতৃপক্ষের শেষেই শুরু হচ্ছে না দেবীপক্ষ। কোনও মাসে দু’টি অমাবস্যা হলে পরের মাসটি ‘মল মাস’ হয়ে যায়। এবারের ভাদ্র মাসে দুটি অমাবস্যা পড়েছে। একটি পড়েছিল ২ ভাদ্র (কৌশিকী অমাবস্যা) বা ১৯ অগস্ট, অন্যটি ৩১ ভাদ্র, মানে ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মার পুজোর দিন। ফলে আশ্বিন মাস মল মাস হয়ে যাচ্ছে। হিন্দু ধর্মের দর্শন অনুযায়ী মল মাসে কোনও শুভ কাজ বা পুজো হয় না। তাই আশ্বিন মাসে এবার দুর্গাপুজো বা শারদোৎসব হচ্ছে না। হচ্ছে কার্তিক মাসে।
আর দুর্গাপুজো মানেই তার সাতদিন আগের অমাবস্যায় হয় মহালয়া। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর যুগেও এই একটি মাত্র দিনেই ভোরের আলো ফোটার আগেই বাঙালি ঘরগুলিতে বেজে ওঠে রেডিও। শোনা যায় অন্ধকার ভেদ করা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর চণ্ডীপাঠ। এ বছর মহালয়া পড়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর (৩১ ভাদ্র) বিশ্বকর্মা পুজোর দিন। তাই নিয়ম মেনে ১৭ সেপ্টেম্বর, মহালয়ার দিনই সেই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান সম্প্রচার হওয়ার কথা। আকাশবাণী সেই নিয়মই অনুসরণ করছে।
কিন্তু অন্যবারগুলির মতো এবারও পুজোর সাতদিন আগে মানে ১৬ অক্টোবর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর চণ্ডীপাঠ সম্প্রচারের অনুরোধ জানানো হয়েছিল আকাশবাণীর কাছে। ২০০১ সালেও এই রকম ঘটনা আরও একবার ঘটে। সেবারও মহালয়ার একমাস পর দুর্গাপুজো পড়ে। পুরোহিতদের একাংশ তখন আকাশবাণী কর্তৃপক্ষকে পুজোর ৭ দিন আগে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের প্রভাতী অনুষ্ঠান সম্প্রচারের অনুরোধ করেন।
এবারও সেই অনুরোধ রেখেছিল বৈদিক পণ্ডিত ও পুরোহিত মহামিলন কেন্দ্র। কিন্তু রাজি হয়নি আকাশবাণী কলকাতা। পুরোহিতদের মতে, পুজোর ৭ দিন আগেই বাঙালি মহালয়া শুনতে বাঙালি অভ্যস্ত। কারণ, মহালয়ার পরেই সূচনা হয় দেবীপক্ষের। বহু জায়গায় প্রতিপদে ঘট বসে। শাস্ত্র মেনে পুজোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাই সাতদিন আগে প্রভাতী অনুষ্ঠান হওয়া উচিত। তবে এ বিষয়ে ভিন্নমতও আছে। অনেকে বলছেন, চণ্ডীপাঠ শুনেই পিতৃপুরুষের উদ্দেশে তর্পণ করা প্রথায় পরিণত হয়েছে। তা বদলানো ঠিক নয়। তবে মানুষের ইচ্ছেকে মর্যাদা দিতে পুজোর ৭ দিন আগে দ্বিতীয়বারও ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ সম্প্রচার করা যেতে পারে।
একটা সময় পর্যন্ত বাণীকুমার, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের যুগলবন্দি প্রতি বছর লাইভ সম্প্রচার করত মহিষাসুরমর্দিনী। ভোর চারটের অনেক আগে শিল্পীরা আকাশবাণী পৌঁছে যেতেন সকলে। নির্ধারিত সময়ে শুরু হত লাইভ সম্প্রচার। কিন্তু পরে এই চণ্ডীপাঠের শিল্পীদের কণ্ঠ ধরে রাখার প্রয়োজন অনুভব করেন সকলেই। তা রেকর্ড হয়। যা পরে এইচএমভি কিনে নেয়। সেটিই এখন অন্যান্য রেডিও স্টেশন সম্প্রচার করে। কিন্তু এখানে বলে রাখা দরকার, রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে একাধিকবার তাতে পরিবর্তন করেন বাণীকুমার। সেই রেকর্ডই সম্প্রচারিত হয় মহালয়ায়। চলতি বছরেও বিশ্বকর্মা পুজোয় মহালয় পড়ায় সেদিন ভোরেই বাজবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ।
আকাশবাণী কলকাতার প্রোগ্রাম হেড সুব্রত মজুমদার বলেছেন, ‘মহিষাসুরমর্দিনী আজ একটা মিথ। প্রথম থেকেই একটা নির্দিষ্ট রীতি মেনে, নিষ্ঠা নিয়ে এই চণ্ডীপাঠের সম্প্রচার হয়ে আসছে। এক সময় লাইভ হত। পরে রেকর্ড হয়। সেই রেকর্ডই বাজানো হতে শুরু করে। সেই রীতি মেনেই এবারও মহালয়ার ভোরেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর চণ্ডীপাঠ সম্প্রচারিত হবে।’ পরে ২২ অক্টোবর অর্থাৎ ষষ্ঠীর দিন ভোর পাঁচটায় মহানায়ক উত্তমকুমারের কণ্ঠে ‘দেবীদুর্গতিহারিনী’ সম্প্রচারিত হবে। ২০০১ সালের মতো।