প্রত্যয় পশ্চিমবঙ্গ ডেস্ক: সামনেই শারদোৎসব। একদিকে করোনা, অন্যদিকে দুর্গার বোধন। মাতৃপক্ষের সূচনায় এমন পরিস্থিতিতে নিজে দুর্গা সেজে অভয় দিতে চেয়েছিলেন অনুরাগীদের। তেমনই একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলেন ইনস্টাগ্রামে। সকলকে জানিয়েছিলেন শুভেচ্ছা। তাঁর সেই বার্তায় অনেকেই পাল্টা শুভ কামনা জানিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু মানুষের তা পছন্দ হয়নি। মুসলিম হয়ে কেন তিনি দুর্গা সাজবেন, কেন তিনি ত্রিশূল ধরবেন, ইসলামে এ–সব নিষেধ বলে অভিযোগ তুলে তারা তাঁর সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে। এমনকী, কেউ কেউ তাঁকে খুনের হুমকিও দিচ্ছে! এই অভিযোগ স্বয়ং নুসরত জাহানের। শুধু তাই নয়, নিজের শুটিংয়ের সময় অতিরিক্ত নিরাপত্তার আর্জি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও।
এ কথা ঠিক, অতীতের মতো নুসরত জাহানের ভিডিও পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় বহু মানুষ ‘লাইক’ করেছেন। অনেকে সমালোচনাও করেছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, এটা কি বিজ্ঞাপনী প্রচার? কেউ কেউ বলেছেন, মা দুর্গার এমন লাস্যময়ী রূপ আগে দেখা যায়নি! এই ধরনের সমালোচনা বা মন্তব্য অভিনেত্রী–সাংসদের কাছে অপ্রত্যাশিত নয়। এর আগেও বহুবার হয়েছে। তিনি জবাবও দিয়েছেন সচেতন ও কড়া ভাবেই। কিন্তু কিছু কট্টরপন্থীর আক্রমণে এবং হুমকিতে তিনি হতবাক হয়ে গিয়েছেন। তারা সরাসরি তাঁকে খুনের হুমকিও দিয়েছে! একজন মন্তব্য করেছে, ‘তোমার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। আল্লাহকে ভয় করো। নিজের শরীর ঢেকে রাখতে পারো না?’ কেউ লিখেছে, ‘তুমি ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ করেছ। তুমি কি জানো না ইসলামে এ–সবে নিষেধ রয়েছে?’ অনেকেই লিখেছে, তাঁকে নাকি এর পরিণাম ভুগতে হবে। কয়েকজন তাঁকে খুনের হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ।
সেইসব লেখা পড়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ অভিনেত্রী–সাংসদ নুসরত জাহান। ঘটনার পরই তিনি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে সব কথা জানিয়েছেন। দুই সরকারের কাছেই তিনি অতিরিক্ত নিরাপত্তা চেয়েছেন। তবে কোথাও তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। কেন্দ্রের বিদেশ মন্ত্রকের কাছেও পুরো বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, শুটিংয়ের প্রয়োজনে তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। শুধু রাজ্য বা দেশ নয়, বিভিন্ন দেশেও তাঁকে যেতে হয়। এর অর্থ, কট্টরপন্থীদের হুমকিকে তিনি হাল্কা ভাবে নিচ্ছেন না। উল্লেখ্য, তিনি একটি সিনেমার শুটিংয়ের জন্য এদিন লন্ডন পৌঁছেছেন। সূত্রের খবর, তাঁর অনুরোধ মেনে লন্ডনের ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলেছে দিল্লি। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে আশ্বস্ত করেছে, তাঁর কোনও ভয় নেই।
উল্লেখ্য, গত বছরও বিজয়া দশমীতে কলকাতার চালতাবাগানে সিঁদুর খেলে মৌলবাদীদের তোপের মুখে পড়েছিলেন তিনি। রথযাত্রায় কলকাতার ইসকন মন্দিরের রথের রশি টানায়ও কিছু কট্টরপন্থী আক্রোশ উগরে দিয়েছিল তাঁর ওপর। কিন্তু এবার যেন পরিস্থিতি আরও জটিল। সরাসরি তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন এই তৃণমূল সাংসদ। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে মৌখিক ভাবে জানালেও নিজে ভাবলেশহীন রয়েছেন। বলেছেন, ‘আমার কাছে সব ধর্ম সমান। সব উৎসবই আনন্দের। সব ধর্মকেই আমি সম্মান করি। শ্রদ্ধা করি। তাই কে কী বলল, তাতে আমার কিছু এসে–যায় না। আমি আমার মতোই থাকব।’