মমতার আহত হওয়া নাটক কিনা জানতে তদন্তের দাবি রাজীবের
বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:অসংখ্য কর্মী–সমর্থকের স্রোতে ভেসে গিয়ে নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন শুভেন্দু অধিকারি। শুক্রবার বাবা–মাকে প্রণাম করে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। তার পর চলে যান হলদিয়ার ক্ষুদিরাম মোড়ে। সেখান থেকে শুরু হয় মিছিল। জনজোয়ারে ভেসে এগিয়ে যান হলদিয়ায় মহকুমা শাসকের দফতরের দিকে। পথেই মঞ্জুশ্রী মোড়ে পৌঁছে জনসভা করেন। সেখানেও উপচে পড়ে জনতা। তার পরই তিনি ঢুকে যান এসডিও দফতরে। এদিন তাঁর সঙ্গে তিনজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, বাবুল সুপ্রিয় এবং ধর্মেন্দ্র প্রধানও উপস্থিত ছিলেন।
মনোনয় পত্র জমা দেওয়ার পর নিজের জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী মনোভাবের কথা জানিয়ে দেন শুভেন্দু। বলেন, ‘২ মে আমার বাড়িতে এসে মিষ্টি খেয়ে যাবেন।’ যদিও তাঁর বক্তব্য মানতে রাজি হননি তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘ভোটে শুভেন্দুর জামানত জব্দ হবে।’ এদিন শুভেন্দুর সঙ্গে হলদিয়ার বিজেপি প্রার্থী তাপসী মণ্ডলও মহকুমা শাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দেন। শুভেন্দু অধিকারির সঙ্গেই তিনি ১৯ ডিসেম্বর গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। মনোনয়ন পত্র জমা দেন নন্দীগ্রামের সিপিএম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ও। মনোনয়ন পেশের পর মীনাক্ষী দাবি করেন, যতই তৃণমূল এবং বিজেপি প্রচার পাক না কেন, মানুষ তাদের চিনে ফেলেছেন। তাঁরা তাদের ভোট দেবেন না। এই নির্বাচনে তিনিই জয়ী হবেন। এখন এই নন্দীগ্রামে কে জিতবেন, তা নিয়ে উত্তেজনায় ফুটছে রাজনীতির ময়দান। উত্তর জানা যাবে মে মাসের ২ তারিখে।
এদিন সকালে প্রথমে নন্দীগ্রামের সোনাচুড়ার তেখালিয়া সেতুর পাশে সিংহবাহিনী মন্দিরে শুভেন্দু পুজো দেন। তার পর নন্দীগ্রাম বাজারের জানকীনাথ মন্দিরেও যান তিনি। সেখানে পুজো দিয়ে বলেন, ‘আমি প্রতিবারই মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে এখানে পুজো দিতে আসি। এটা তো আমার প্রথম মনোনয়ন নয়। এটা আমার আস্থার জায়গা।’ পরে হলদিয়ার মঞ্জুশ্রী রোডেও জনসভায় তিনি বলেন, ‘আমি এখানকার ছেলে। আমি এখানকারই ভোটার। আমার সঙ্গে নন্দীগ্রামবাসীর সম্পর্ক অনেকদিনের পুরনো। আর ভোট এলেই তৃণমূল নেত্রীর মনে পড়ে নন্দীগ্রামের কথা।’ তিনি বলেন, ‘মাঠ চেনা, প্লেয়ার পুরনো, ঝাণ্ডা নতুন, প্রতীক পদ্মফুল।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি ভুল চণ্ডীপাঠ করেন, সরস্বতী পুজোর মন্ত্র ভুল বলেন। বলবেন কী করে? তিনি তো কোনও মন্ত্রই জানেন না। তিনি তো রাজনীতি করার জন্য ও–সব কথা বলেন।’
আরও পড়ুন: মমতাকে দেখে মিমির চোখে জল
পরে নন্দীগ্রামে প্রচারে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে প্রথম মুখ খোলেন শুভেন্দু। বলেন, ‘তিনি আহত হয়েছেন। এটা তাঁর একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করা উচিত নয়। কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেরই কোনও মন্তব্য করা ঠিক নয়। তাই এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’ এদিন নন্দীগ্রামে তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘খেলা হবে’ স্লোগান নিয়ে তীব্র আক্রমণ শানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। বলেন, ‘দিদি কোন খেলা খেলতে চাইছেন? আমি তাঁর কাছে জানতে চাই, কার কাছে ভোট চাইছেন তিনি? কোন মেয়েকে ভোট দিতে বলছেন তিনি? আমি জানতে চাই, ৮০ বছরের বৃদ্ধাকে কারা মারধর করেছে দিদি? কারা বিজেপি কর্মীদের খুন করে গাছে ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালাতে চেয়েছে দিদি? কেন এই রাজ্যে দুর্গা ও সরস্বতী পুজোর পর প্রতিমা বিসর্জন নিয়ে এত রকম টালবাহানা বা নিয়ন্ত্রণ করা হয়?’
নন্দীগ্রামে মমতার দুর্ঘটনায় পড়া নিয়ে মুখ খুলেছেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। হাওড়ার চামরাইলে বিজেপির এক কর্মিসভায় তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। তদন্ত হলেই সকলের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে, ওই ঘটনার পেছনে সত্যিই কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে, নাকি পুরোটাই নাটক!’ রাজীবের ইঙ্গিত অস্পষ্ট থাকেনি জনতার কাছে। তাঁরাও সমস্বরে তদন্তের দাবি জানান। রাজীব এদিন রাজ্য সরকারকেও আক্রমণ করে বলেন, ‘তৃণমূল সরকার যদি গরিব মানুষের সরকার হয়, তা হলে এতদিন কেন তাঁদের কথা চিন্তা করেনি? পিকের দলকে এনে কী করে কোটি কোটি টাকা তারা খরচ করছে? মুখ্যমন্ত্রী তো এখন হেলিকপ্টার ছাড়া চলাফেরাই করতে পারেন না। সেই হেলিকপ্টারের পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা কী অবলীলায় খরচ করছে। কোত্থেকে আসছে এত টাকা?’
আরও পড়ুন: ভেনিস নগরী নির্মাণের গল্প