1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

নারদকাণ্ডে তোলপাড় পশ্চিমবাংলা, আপাতত জেলেই সুব্রত, ফিরহাদ–সহ ৪ নেতা

  • Update Time : সোমবার, ১৭ মে, ২০২১
  • ৩৬৩ Time View

বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:

জামিন পেয়েও ছাড়া পেলেন না সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং মদন মিত্র। সোমবার সন্ধ্যায় সিবিআই ওই চার নেতার জেল হেফাজত চেয়ে যে আর্জি জানিয়েছিল, তা খারিজ করে ব্যাঙ্কশাল কোর্ট তাঁদের জামিন মঞ্জুর করে। কিন্তু নিম্ন আদালতের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। এদিন বেশি রাতে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নিম্ন আদালতের ওই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেয়, এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বুধবার। এর অর্থ, ওই চার হেভিওয়েট নেতাকে বুধবার পর্যন্ত জেল হেফাজতেই থাকতে হচ্ছে।

বুধবার এই চার হেভিওয়েট নেতাকে গ্রেফতার করা নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় হয় কলকাতা–সহ গোটা পশ্চিমবাংলাই। এদিন সকালে নারদকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশাল কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আচমকাই সিবিআই হানা দেয় রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম এবং তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের বাড়িতে। হানা দেওয়া হয় প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতেও। এদিনই হাইকোর্টে চার্জশিট দেওয়ার কথা ছিল সিবিআইয়ের। সে কথা মাথায় রেখেই চারজনকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় নিজাম প্যালেসে সিবিআই দফতরে। তার পর তাদের গ্রেফতার করা হয়।
তাদের গ্রেফতার হওয়ার খবর শুনেই ফিরহাদ হাকিমের বাড়ি যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে সোজা চলে যান নিজাম প্যালেসে। সিবিআই দফতরে গিয়ে তিনি তাঁদের গ্রেফতার করার প্রতিবাদ করেন। জানান, এই গ্রেফতারি পুরোপুরি বেআইনি। তাঁদের গ্রেফতার করতে হলে আগে তাঁকে গ্রেফতার করতে হবে। কিন্তু তাঁর আবেদনে কর্ণপাত করেনি সিবিআই। সেখানেই টানা ছ’ঘণ্টা ছিলেন তিনি। এই সময় মুখ খোলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, এই গ্রেফতারি বেআইনি ও অসাংবিধানিক। কারণ, রাজ্যের মন্ত্রী বা বিধায়ককে গ্রেফতার করতে হলে আগে তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হত সিবিআইকে। কিন্তু সিবিআই তাঁর কাছ থেকে কোনও অনুমতি নেয়নি। কিন্তু এই ঘটনায় চুপ করে ছিলেন না রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও। তিনি অধ্যক্ষের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিধানসভায় চিঠি পাঠিয়েছেন। বিমানবাবুর এই মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। দলের নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, বিধানসভার অধ্যক্ষ হিসেবে তাঁর নিরপেক্ষ থাকা উচিত। কিন্তু তিনি তৃণমূল বিধায়কের পরিচয় ভুলতে পারছেন না।

এর পর সিবিআইকে পাল্টা আক্রমণ করে তৃণমূলও। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘বিধানসভা ভোটে হারের পর বিজেপি মরিয়া হয়ে এ রকম আচরণ করছে। মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর নামও তো এফআইআর–এ আছে। তা হলে তাঁদের গ্রেফতার করা হল না কেন? তারা বিজেপি নেতা বলে? শঙ্কুদেব পণ্ডা তো এজেন্ট হিসেবে কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন। তিনি ছাড় পেলেন কেন?’ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন। তৃণমূলের তরফে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে তাঁদের গ্রেফতার করার অভিযোগ তোলা হয়। যদিও সিপিএম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘নারদকাণ্ডে অভিযুক্তরা বিধানসভায় বিতর্ক চলাকালীন টাকা নেননি। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাতে বা তাঁদের হেফাজতে নিতে বিধানসভার অধ্যক্ষের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে এই তদন্তে প্রত্যেককেই গ্রেফতার করা উচিত ছিল সিবিআইয়ের।’ যদিও সিপিএম, সিপিআই এবং কংগ্রেস সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে মত দিয়ে তৃণমূলের পাশেই দাঁড়িয়েছে। তারা কাঠগড়ায় তুলেছে বিজেপিকেই।
এর পরই মুখ খোলেন স্বয়ং ম্যাথু স্যামুয়েল। তিনিই নারদ–স্ট্রিং অপারেশন চালিয়েছিলেন। এদিন এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘চারজনকে গ্রেফতার করায় আমি খুশি। তবে আরও একজন তো ছিল। শুভেন্দু অধিকারী। তাঁকে গ্রেফতার করা হল না কেন?’ তবে মুকুল রায়ের কথা তিনি বলেননি। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে তিনি তৎকালীন তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রীদের হাতে টাকা তুলে দিয়েছিলেন। সেই ছবিও তিনি গোপন ক্যামেরায় তুলে রেখেছিলেন। তার পর ২০১৬ সালে ওই রেকর্ডিং তিনি প্রকাশ্যে আনেন। ওই ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় গোটা রাজ্যেই। কলকাতা হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্তের কাজ শুরু করে সিবিআই।

এদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজাম প্যালেসে যাওয়ার পরই কলকাতা জুড়ে শুরু হয়ে যায় তৃণমূলের বিক্ষোভ। শুধু তাই নয়, কোভিডের কঠোর বিধিনিষেধ অমান্য করেই এই প্রতিবাদ–বিক্ষোভ চলতে থাকে। কোথাও পুলিশ কড়া কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ ওঠে। প্রথমে চেতলায়, পরে নিজাম প্যালেসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূল কর্মীরা। সেই সময় নিজাম প্যালেস ঘিরেছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। তখন বিক্ষোভের নামে তৃণমূল কর্মীরা নিজাম প্যালেসের ভেতরে ইট–পাটকেল ছুড়তে থাকে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি এই অভিযোগও ওঠে, সেই সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। ফলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা পুলিশকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করেন, যদি পুলিশ তৃণমূল কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ না করে, তা হলে তারাই ব্যবস্থা নেবে। এর পরই পুলিশ তৃণমূল কর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ক্রমে এই বিক্ষোভ–প্রতিবাদ গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কাঁথি, পাঁশকুড়া, ঝাড়গ্রাম, আসানসোল, বর্ধমান, বীরভূম, মালদা, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার, শিলিগুড়িতে তৃণমূল কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।

এমনকী, তৃণমূল কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান কলকাতায় রাজভবনের সামনেও। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় মুখ খোলেন। তিনি বলেন, ‘রাজ্য জুড়ে অরাজকতা চলছে। পুলিশ নীরব দর্শকের মতো আচরণ করছে। এমন পরিস্থিতি দেখে আমি আশঙ্কিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিধিনিয়ম এবং দেশের আইন মেনে চলার অনুরোধ করব। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশকে সমস্ত রকম পদক্ষেপ করতে হবে।’ এর পর সরাসরি তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আশা করি এই ধরনের সাংবিধানিক ব্যর্থতার পরিণাম আপনি জানেন।’ এর পরই সতর্ক হয় শাসক দল। দলের তরফে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কোভিড বিধি মেনে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করুন। আমরা আইনের পথেই ঘটনার মোকাবিলা করব।’ এমনকী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছ’ঘণ্টা পর নিজাম প্যালেস থেকে বেরিয়ে আসেন। বলেন, ‘আইনি পথেই ঘটনার মোকাবিলা করা হবে।’

এর পর গ্রেফতার হওয়া চার নেতাকে নিয়ে ভার্চুয়াল শুনানি শুরু হয় ব্যাঙ্কশাল আদালতে। বিকেল সাড়ে চারটে পর্যন্ত সওয়াল–জবাব চলে। সন্ধে সাড়ে চারটে নাগাদ বিশেষ আদালতের বিচারক ব্যক্তিগত ৫০ হাজার টাকা বন্ডে চারজনের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু এই রায়ে খুশি হয়নি সিবিআই। তারা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। তারা হাইকোর্টকে জানিয়ে দেয়, এই রাজ্যে এ রকম আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং বিক্ষোভের মাঝে নিরপেক্ষ ভাবে তদন্তের কাজ করা সম্ভব নয়। তাই এই তদন্ত অন্য রাজ্যে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আবেদনও করা হয় সিবিআইয়ের তরফে। সেই সঙ্গে চার নেতার জামিন খারিজ করার আবেদনও জানায়। এর পরই নড়েচড়ে বসে হাইকোর্ট। বেশি রাতে নিম্ন আদালতের দেওয়া চার নেতার জামিনের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়। বুধবার শুনানি ফের শুনানি হবে এই মামলার। ততদিন পর্যন্ত জেল হেফাজতেই থাকতে হবে চার নেতাকে।

অন্যদিকে, রাতের খবর, চার প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রীর জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ জারি হওয়ার পরই নিজাম প্যালেসের বাইরে ফের বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন তৃণমূল কর্মীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে। বিশাল কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছে পুলিশ বাহিনীও। প্রেসিডেন্সি জেলের বাইরেও করোনা বিধি উপেক্ষা করেই বহু তৃণমূল কর্মী জমায়েত হয়েছেন। তাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। শারীরিক পরীক্ষার পর চার নেতাকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..