বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:চলে গেলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী পূর্বা দাম। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি বার্ধক্যজনিক অসুখে ভুগছিলেন বলে তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। শনিবার সকালে দক্ষিণ কলকাতায় নিজের বাসভবনে ঘুমের মধ্যেই তিনি প্রয়াত হন। বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তার পরিবারে রয়েছেন স্বামী অরুণ দাম এবং একমাত্র মেয়ে। কিছুদিন আগে পূর্বা দামের জামাতা প্রয়াত হন।
পূর্বা দামের প্রয়াণে সংস্কৃতির পাশাপাশি সাহিত্য জগতেও শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বনামধন্য বুদ্ধদেব গুহ বলেছেন, ‘এখন তো আমাদের সকলেরই চলে যাওয়ার সময়। দিন ঘনিয়ে আসছে যেন। প্রায়ই কারও না–কারও মৃত্যু সংবাদ পাচ্ছি। বিষণ্ণ হচ্ছি।’ পূর্বা দামের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে আমার কতদিনের স্মৃতি! তাঁর গলার সঙ্গে সুচিত্রাদির গলার খুব মিল ছিল। ঋতুর (বুদ্ধদেব গুহর স্ত্রী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী প্রয়াত ঋতু গুহ) সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল তাঁর।’ বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী প্রমিতা মল্লিক বলেছেন, ‘পূর্বাদি তখনও পূর্বা দাম হননি, যখন তিনি পূর্বা সিংহ ছিলেন, তখন থেকেই তাঁকে চিনতাম। রবীন্দ্রনাথের দর্শন এবং গান এমন ভাবে আত্মস্থ করেছিলেন যে, তাঁর গান সরাসরি শ্রোতাদের মনের গহনে গিয়ে ঘা মারত। এমন নিরহঙ্কারী এবং সহজ শিল্পী খুব কমই দেখেছি। তাঁর মৃত্যুতে রবীন্দ্রসঙ্গীত জগতে একটা যুগের অবসান হল।’ পূর্বা দামের প্রয়ানে শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
পূর্বা দামের জন্ম কলকাতায় ১৯৩৫ সালে। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে তাঁর উত্থান গত শতকের সাতের দশকে। তাঁর শিক্ষয়িত্রী ছিলেন সুচিত্রা মিত্র। সুচিত্রা মিত্রের প্রতিষ্ঠান ‘রবিতীর্থ’–এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। নিজের গায়কিতে সূচিত্রা মিত্রের ধারাকে আজবীন অনুসরণ করে গিয়েছেন। আর, তিনি প্রয়াত হলেন যেদিন, ঘটনাচক্রে সেদিনই ছিল সুচিত্রা মিত্রের জন্মদিন। অনেকেই এই ঘটনাকে অদ্ভুত সমাপতন বলে উল্লেখ করেছেন। পূর্বা দাম নিজেও মনে করতেন, সুচিত্রা মিত্রের হাত ধরেই তাঁর পথ চলা। তিনি না থাকলে গায়িকা হিসেবে তিনি হয়তো প্রতিষ্ঠিত হতে পারতেন না। গত শতকেই আটের দশকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে তিনি শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১৩ সালে পশ্চিমবাংলার সরকার তাঁকে সঙ্গীত সম্মানে সম্মানিত করে।