বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:কেন্দ্রের কৃষি বিল নিয়ে বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আন্দোলন শুরু করেছে তৃণমূল। আর সেই বিষয়টি নিয়েই শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর দল তৃণমূলকেই কটাক্ষ করলেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র। এদিন তিনি কলকাতায় দলের রাজ্য দফতরে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে রীতিমতো তোপ দেগে বলেন, ‘আসল কথা হল, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভাবের ঘরে চুরি করতে চাইছেন। রাজ্যের শাসক দল বাংলায় কোনও শিল্প বা কৃষি, কিছুই চায় না। তারা চায় শুধুই কাটমানি। তাই কৃষি বা শিল্প সব ক্ষেত্রেই বাংলা অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় ধারাবাহিক ভাবে পিছিয়েই পড়ছে।’ এদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর কথা বলার সময় পাশে ছিলেন রাহুল সিনহা, লকেট চট্টোপাধ্যায়, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
কৃষি বিলের পক্ষে সওয়াল করে এদিন কলকাতায় তিনি তৃণমূলকেই পাল্টা নিশানা করেন। কোনও রকম রাখঢাক না করেই তিনি বলেন, ‘দু’বছর হল সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি যোজনা চালু হয়ে গিয়েছে। বাংলা–সহ ৬ রাজ্য, যে রাজ্যগুলিতে বিজেপি বিরোধী দলগুলি ক্ষমতায় রয়েছে, সেই রাজ্যগুলি ছাড়া সারা দেশের বাকি সব রাজ্যের কৃষকরা এই যোজনার সমস্ত সুযোগ ও সুবিধা পেয়েছেন। কিন্তু, যেহেতু এখান থেকে কাটমানি পাওয়া যাবে না, তাই মুখ্যমন্ত্রী এই রাজ্যে ওই যোজনা চালু হতে দেননি। আজ দু’বছর পর তাঁর মনে হল এই যোজনা চালু হওয়া দরকার। শুধু তাই নয়, এখন আবার নতুন আবদার, কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি কৃষককে টাকা দিতে পারবে না। দিতে হবে নাকি রাজ্যের হাতে। আবদার দেখুন। এই যোজনার টাকা থেকেও তৃণমূল এখন কাটমানি খেতে চাইছে!’
এখানেই তিনি থেমে থাকেননি। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করে বলেছেন, ‘দু’বছর ধরে বাংলার ৭৩ লক্ষ কৃষককে প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি যোজনার সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার কৃষকরা আজ তাঁর কাছে এই প্রশ্ন করলে তিনি কী উত্তর দেবেন?’ এদিন ‘কৃষক–আত্মহত্যা’ নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেন সম্বিত। তিনি বলেন, ‘অন্য রাজ্যে কৃষক মৃত্যুর খবর শুনলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সরব হন। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হল, রাজ্যে যখন কোনও কৃষক আত্মহত্যা করেন, তখন তাঁর মুখে কোনও কথা শোনা যায় না। রাজ্যের মানুষ জানতে চান, তখন কেন তিনি চুপ করে থাকেন?’
পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, ‘এখন হাতের কাছে কিছু না পেয়ে কৃষি বিল পেয়েছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী জেনে রাখুন, রাজ্যের ক্ষমতায় এবার পালাবদল হবেই। ক্ষমতায় আসছে বিজেপি। এটা সকলেই বুঝতে পেরেছেন। তৃণমূলও বুঝতে পেরে গিয়েছে। তাই কৃষি বিলকে তাস করতে চাইছে। সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলতে চাইছে।’ কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি বিলকে সমর্থন করে তিনি বলেন, ‘এবার কৃষকরা যে কোনও জায়গায় যে কোনও মূল্যে কৃষিজ ফসল বিক্রি করতে পারবেন। কিসান মাণ্ডিতেও কোনও কর দিতে হবে না। তা ছাড়া কৃষকের জমি কৃষকের হাতেই থাকবে। কোনও কর্পোরেট সংস্থা কৃষকের জমিতে হাত দিতে পারবে না।’ তাঁর দাবি, কৃষি বিলকে হাতিয়ার করলেও কোনও রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারবে না তৃণমূল।