বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা : বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আর বিজেপির সেই অভিযোগ এবং তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ ঘিরে সরগরম পশ্চিমবাংলার রাজনীতি। যদিও ঘটনা নিয়ে রাজ্য পুলিশ, সরকার এবং তৃণমূল নেতাদের ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।
এক টুইট বার্তায় রাজ্যপাল বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে শাসক দলের হার্মাদরা যে ভাবে বিজেপি সভাপতির কনভয়ে হামলা চালিয়েছে, তা অরাজকতা এবং বিশৃঙ্খলারই নজির। আমি এর তীব্র নিন্দা করি। এমন আশঙ্কা আমার ছিল। তাই সকালেই আমি মুখ্যসচিব এবং ডিজিপিকে সতর্ক করেছিলাম। তার পরও এই ঘটনা ঘটায় মনে হচ্ছে, বাংলা থেকে আইনের শাসন লোপাট হয়ে গিয়েছে।’ ডায়মন্ড হারবারে কর্মিসভা ছিল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি (জগৎপ্রকাশ) নাড্ডার। বৃহস্পতিবার সেখানে যাওয়ার পথে তাঁর কনভয় লক্ষ্য করে ব্যাপক ইটবৃষ্টি হয়। ইটের আঘাতে বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতা ও সংবাদ মাধ্যমের গাড়ির কাচ ভাঙে। কম–বেশি আহত হন মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয়–সহ বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতা। এমনকী, আহতের তালিকায় রয়েছেন কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী এবং সাংবাদিকও। যদিও রাজ্য পুলিশের দাবি, নাড্ডার কনভয়ে নাকি হামলাই হয়নি! টুইট করে পুলিশ দাবি করেছে, ‘বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা নিরাপদেই ডায়মন্ড হারবারে পৌঁছেছেন। তাঁর কনভয়ে কোনও হামলার ঘটনা ঘটেনি।’
অন্যদিকে, রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘তিনি যখন যাচ্ছিলেন, তখন গাড়ি থেকে নানা রকম ভিডিও করে ইচ্ছাকৃত ভাবে একটা প্ররোচনা তৈরি করা হচ্ছিল। পরে যে সব ঘটনা ঘটেছে, তা পরিকল্পনা মাফিক ঘটানো হয়েছে।’ আবার ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আজ বিজেপির জে পি নাড্ডা ডায়মন্ড হারবারে গিয়ে গাড্ডায় পড়েছে। তা আমি কী করতে পারি? সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের দায়িত্ব তো আমার নয়!’ এ ভাবেই পুলিশ, সরকার এবং শাসক দলের নেতাদের কথার মধ্যে তারতম্য রাজনৈতিক চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে বাংলায়। এদিকে, জে পি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনাকে ‘ছোট্ট ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তিনি এ কথাও বলেছেন, ‘কোনও দিন চিফ মিনিস্টার চলে আসছে, কোনও দিন হোম মিনিস্টার চলে আসছে, কোনও দিন চাড্ডা, নাড্ডা, ফাড্ডা, গাড্ডা, ভাড্ডা চলে আসছে। একা প্রোগ্রাম করবে, আর কেউ করবে না। আর যেদিন করবে, লোক যদি না আসে, তা হলে নিজে সাজিয়ে রাখবে কী করে ন্যাশনাল নিউজে ভালো করে দেখায় যে, দেখো আমাকে মেরেছে।’
এদিকে, বুলেটপ্রুফ গাড়িতে ছিলেন বলে জে পি নাড্ডার কোনও রকম শারীরিক ক্ষতি হয়নি। ডায়মন্ড হারবারে পৌঁছে তিনি বলেন, ‘বাংলায় এই গুন্ডারাজ এবং অরাজকতা বেশিদিন চলবে না। পদ্ম ফুটবেই এই মাটিতে।’ কর্মিসভায় বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে আসার পথে যে দৃশ্য দেখলাম, তাতে স্পষ্ট বাংলায় আইনের শাসন বলে আর কিছুই নেই। আমি সাধারণত জঙ্গলরাজ কথাটা কোথাও ব্যবহার করি না। কিন্তু, আপনারাই দেখুন, কৈলাসজি, মুকুলদা, রাহুলদার গাড়ির অবস্থা দেখুন। আমি নিজে বুলেটপ্রুফ গাড়িতে ছিলাম। তাই বেঁচে গিয়েছি। আজ আমাদের এবং আমাদের সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সকলের গাড়িতেই হামলা চালানো হয়েছে। আমি চাই, এখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক।’ তিনি বলেন, ‘মমতার জমানাতেই বাংলার সংস্কৃতির অধঃপতন ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথ, না অরবিন্দ— কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুই–তুকারির ভাষা শিখিয়েছিলেন?’
জে পি নাড্ডার কনভয়ে হামলার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি নেতারা। বিশেষ করে রাজ্য পুলিশের টুইটের পরই মুকুল রায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বলেন, ‘আজ যা হয়েছে, এর পর অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা উচিত।’ তিনি এ কথাও বলেন, ‘যে সব ঘটনা রাজ্য জুড়ে ঘটে চলেছে, তাতে পরিষ্কার, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি না হলে রাজ্যে নিরপেক্ষ ভাবে নির্বাচন করানো অসম্ভব।’ ওই ঘটনার পরই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লেখেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘নাড্ডার কর্মসূচি ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যথেষ্ট ফাঁক ছিল। শুধু তাই নয়, রাজ্য পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্যে গাফিলতি করেছে।’