বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:করোনা আবহে লকডাউন পর্ব জীবন ও জীবিকার প্রশ্নে সাধারণ মানুষকে তীব্র অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। গোটা ভারতেই বেকারত্ব বাড়ছে হু–হু করে। কর্মহীন মানুষ কী করে পরিবার সামলাবেন, এমন প্রশ্ন এখন সারা দেশের আনাচে–কানাচেই কান পাতলে শোনা যাচ্ছে। যদিও ভারত সরকার হতাশ না হওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে বারবার অনুরোধ করে যাচ্ছে। আগামিদিনে নতুন করে কর্মসংস্থানের উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকী, ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে ভাষণেও তিনি সে কথাও বলেছেন।
যদিও কেন্দ্রীয় সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসেও তেমন উৎসাহিত হতে পারছেন না কাজ হারানো মানুষ। কারণ, প্রতিদিনই চাকরি হারানোর খবর আসছে দেশের বিভিন্ন সেক্টর থেকে। এমনতাবস্থায় পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, সারা দেশে যখন মানুষের চাকরি চলে যাচ্ছে, তখন বাংলাই একমাত্র ব্যতিক্রম। এই রাজ্যে লকডাউন পরিস্থিতিতেও চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, এখানে তেমন ভাবে চাকরি চলে যাওয়ার খবরও নেই। এ ব্যাপারে একটি হিসেব দিয়ে দিন দুয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী এ কথাও বলেন, সারা দেশে যখন বেকারত্বের হার ২৬ শতাংশ বেড়েছে, সেখানে পশ্চিমবাংলায় বেকারত্বের হার নাকি ৪০ শতাংশ কমেছে।
আর মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি নিয়েই শনিবার তীব্র আক্রমণ শানালেন লোকসভায় কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেতা তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরি। শনিবার দেশের স্বাধীনতা দিবসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দেন। বলেন, ‘এখনই আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত। কারণ, তিনি এই রাজ্য থেকে বেকারত্ব দূর করে দিয়েছেন। এই লকডাউনের মধ্যে এমন কাজের নজির সারা পৃথিবীতেই নেই।’ তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রীর দাবি যদি সত্য হয়, সারা পৃথিবীতে তিনি একটা ইতিহাস তৈরি করবেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দাবি যে সত্য নয়, এদিন তিনি তা জোর গলায় বলেন।
এখানেই থেমে যাননি অধীর। তিনি আরও বলেন, ‘সারা পৃথিবীকেই বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে এই করোনা ভাইরাস। অসংখ্য মানুষের কাজ চলে গিয়েছে। তাঁরা নিজেদের জীবনে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গিয়েছেন। এটা কোনও নির্দিষ্ট একটি দেশের ঘটনা নয়। বহু দেশেই ঘটেছে। এই সময়ে গোটা পৃথিবীতেই বেকারত্ব মারাত্মক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। সেখানে পশ্চিমবাংলায় বেকারত্ব কী করে কমল, মুখ্যমন্ত্রীর উচিত তা সকলকে বোঝানো। এটা তো একটা জাদুই। এ বিষয়ে তিনি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে পারেন। তা হলে সবাই বুঝতে পারবেন, কোন জাদুতে পশ্চিমবাংলায় বেকারত্ব কমে গিয়েছে!’ মুখ্যমন্ত্রীকে রীতিমতো কটাক্ষ করে অধীর চৌধুরি বলেন, ‘ওই গবেষণাপত্র প্রকাশ করলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেল পুরস্কার পাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না।’