বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:করোনা পরিস্থিতিতে পশ্চিমবাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো কী করে সম্পন্ন করবে, তা নিয়ে চিন্তায় রাজ্যের বড় পুজো কমিটিগুলি। ছোট পুজো কমিটিগুলির অবস্থা তো আরও সঙ্গীন। তবু পুজো হবে বাংলায়। তাই ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় বাঁশ পড়ে গিয়েছে মাটিতে। ইতিউতি কিছু তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার কল্পতরু হয়ে হাজির হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘোষণা করেছেন, এ বছর রাজ্যের প্রতিটি পুজো কমিটিকে ‘স্বল্প দান’ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা করে সাহায্য দেবে রাজ্য সরকার।
২০১৮ সাল পর্যন্ত পুজো কমিটিগুলিকে ১০ হাজার টাকা করে সাহায্য করত রাজ্য। ২০১৯ সালে তা এক লাফে ১৫০ শতাংশ বেড়ে হয়ে যায় ২৫ হাজার টাকা। আর এবার নিজেরই অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন তিনি। তবে এ বছর কতগুলি পুজো কমিটিকে এই সাহায্য দেওয়া হবে, সে কথা ঘোষণা করেননি মুখ্যমন্ত্রী। গত বছর দেওয়া হয়েছিল ২৮ হাজার পুজো কমিটিকে। যদি এ বছর সেই সংখ্যাটাই বজায় থাকে, তা হলে এই সাহায্য করতে গিয়ে রাজ্য সরকারের খরচ হবে ১৪০ কোটি টাকা। তবে করোনা পরিস্থিতি এবং আমফানে রাজ্যের বিশাল ক্ষয়ক্ষতির পর বিভিন্ন সময় মুখ্যমন্ত্রী নিজেই রাজ্যের আর্থিক দুরবস্থার কথা বারবার বলেছেন। সেই সময় এত টাকা খয়রাতি করার প্রয়োজন ছিল কিনা, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এই টাকা কার? মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত? নিশ্চয়ই নয়। এই টাকা তো সরকারের। কিন্তু সরকারের কাছে এই টাকা আসবে কোত্থেকে? সরকার এই টাকা পায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। তা হলে এই টাকা সাধারণ মানুষেরই। কখনও মানুষের টাকাই কেন্দ্রের হাত দিয়েও আসে। সব টাকাই উন্নয়নের কাজে খরচ করার কথা সরকারের। কিন্তু রাজ্যের উন্নয়নের টাকা দিয়ে এ ভাবে খয়রাতি করছে সরকার।’ শুধু এ কথাতেই থেমে যাননি তিনি। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, ‘তবে পুজোর জন্য খরচ করছেন না মুখ্যমন্ত্রী। মানুষের কাছ থেকে পাওয়া এই টাকা দিয়ে তিনি আসলে নিজের দলের ক্যাডার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড তৈরি করেছেন। এটা নিয়ে একটা বড় দুর্নীতি হতে চলেছে। যেমন হয়েছিল ‘সবুজ সাথী’র ক্ষেত্রে। তা ছাড়া এই টাকা তো সব পুজো পাবে না। পাবে তৃণমূলের পেটোয়া ক্লাবগুলিই।’
অন্যদিকে, কোনও রকম রাখঢাক না করে সরাসরি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা জাতীয় কংগ্রেসের সংসদীয় দলনেতা অধীর চৌধুরি বলেছেন, ‘হিন্দু ভোট পেতে এখন বিজেপির সঙ্গে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কে বেশি হিন্দু, তার প্রমাণ দিতে বিজেপির পাশাপাশি তিনিও জোর কদমে নেমে পড়েছেন মাঠে। কিন্তু প্রশ্ন হল, সরকারের টাকা দিয়ে তিনি হিন্দু ভোট কিনতে চাইছেন কোন যুক্তিতে?’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্গাপুজো হল সর্বজনীন। সেই পুজোকে সরকারি স্পনসর্ড পুজো বানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আসলে তিনি ভয় পেয়ে গিয়েছেন। তাঁর মনে হচ্ছে, এবার বুঝি তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতেই হবে। তাই সাধারণ মানুষের টাকা দিয়ে রাজনীতি করছেন। কিন্তু মানুষ অত বোকা নয়। নিশ্চয় তাঁরাও সব বুঝতে পারছেন।
’আবার সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী এই সাহায্যের মধ্যে অন্য ছবি দেখতে পেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই টাকা পুজো বা উৎসবের জন্য দেওয়া হয়নি। এই টাকা দেওয়া হয়েছে নিজের প্রচারের জন্য। ভোটের আগে সততার প্রতীক লিখে প্রচার করতেই পুজো কমিটিগুলোকে দাদন দেওয়া হয়েছে। এই করোনা পরিস্থিতিতে এই ঘটনাকে রাজ্যের মানুষ কোনও ভাবেই ভালো চোখে দেখবেন না। তাঁরা ঘটনার বিরোধিতা করবেনই।’ অনেকে আবার এ ভাবে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে সরকার ক্লাবগুলির অসামাজিক কাজকর্মকে সরাসরি প্রশ্রয় দিচ্ছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন।