1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan Shanto : Rakibul Hasan Shanto
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

পৃথিবীটা আজ বড় সন্দেহজনক হয়ে গিয়েছে

  • Update Time : শনিবার, ১৩ জুন, ২০২০
  • ৩৩৪ Time View

উপমন্যু রায়

সেদিন এক বৃদ্ধা, যিনি গত শতকের ৫০টা বছর দেখেছেন, আর এই শতকে ২০ বছর, তিনি আচমকাই করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আমাকে সতর্ক করতে গিয়ে বললেন, ‘বুঝলি দাদুভাই, পৃথিবীটা এখন সন্দেহজনক হয়ে গিয়েছে! একটা অদ্ভুত সময় তোরা পার হচ্ছিস। সাবধানে থাকিস।’
তিনি আমার এক বন্ধুর ঠাকুমা। বয়সের ভারে শরীর অনেকটাই নুয়ে পড়েছেন। তবে জ্ঞান আছে এখনও টনটনে। দীর্ঘ সময় পৃথিবীটাকে দেখেছেন। এখনও দেখছেন। আর সেই অভিজ্ঞতার নিরিখে আমাকে যে কথাটা সেদিন তিনি বলে দিলেন, বলা বাহুল্য, তার জন্য আমি খুব একটা প্রস্তুত ছিলাম না।
পরে কথাটা বারবার আমার মনে ধাক্কা দিয়েছে। আমায় ভাবিয়েছে। এখনও ভাবাচ্ছে। মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, সত্যিই কি আজ পৃথিবীটা সন্দেহজনক হয়ে গিয়েছে? যদি হয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে তার পরিণাম কী হতে পারে? এই অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার উপায়ই বা কী?

অবশ্য এ কথা ঠিক, এই সময়টা ঠিক নেই। এটা করোনা–সময়। দীর্ঘ লকডাউন কাটিয়ে অর্থনীতির দাবিতে অনেক দেশ এখন বিধিনিষেধ কিছু কম বা বেশি শিথিল করেছে। বলা যায়, করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, আমাদের সভ্যতা আজ শাঁখের করাতে আটকে গিয়েছে। লকডাউন না করলে করোনা–রাক্ষস গিলে খাবে, আবার লকডাউন দীর্ঘ করলে খিদে নামে আর এক দানব আমাদের পিষে ফেলবে।
কিন্তু একটু যদি ভেবে দেখি, তা হলে হয়তো বুঝতে পারব, আমাদের সময়টার ক্ষতি কিন্তু তারও আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি ছেলেবেলায়ও দেখেছি, মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ কতটা জাগ্রত ছিল! দেখেছি, অপরের সম্পর্কে ধারণাটা প্রথমেই খুব খারাপ পোষণ করতাম না আমরা। অজানা মানুষ সম্পর্কে সীমাহীন কৌতূহল থাকত। আর থাকত বুক ভরা আবেগ। থাকত অন্যান্য মানুষের জন্য বুক ভরা শুভকামনা।
আর আজ—! একুশ শতকে পৌঁছনোর পর কবে থেকে যে আমরা এতটা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়লাম, নিজেরাও বুঝতে পারিনি। অন্যকে তাচ্ছিল্য করা, অচেনা অপরকে প্রথমেই সন্দেহ এবং খারাপ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচারে প্রণোদিত হওয়া, সুযোগ পেলে অন্যকে মাড়িয়ে যাওয়া, আর সবসময় নিজের সাফল্য নিয়েই বিভোর থাকাটা পৃথিবীকে কখন যে অনেকটাই বদলে দিয়েছে, তা আমরা বুঝতেও পারিনি।
বোধ হয় সেই সময়টা এসে গিয়েছিল এই করোনা পরিস্থিতির অনেকটা আগেই।

আর এরই মধ্যে এই ২০২০–তে সারা পৃথিবী জুড়ে চলে এলো অস্বাভাবিক এক ভাইরাস। লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু, প্রায় কোটি মানুষের সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা আমাদের সকলের জীবনযাত্রাকেই ভয়ানক এলোমেলো করে দিয়েছে। এখানে উঁচু বা নীচু, সফল বা অসফল কারও ভেদ নেই। অনেকটাই যেন সাম্যবাদী এই করোনা বা কোভিড–১৯ ভাইরাস। কাউকে সে রেয়াত করে না। ‘আলালের ঘরে দুলাল’ থেকে ফুটপাথের অসহায়, সকলেই তার কাছে সমান।
আর মৃত্যু হলে তো কথাই নেই, প্লাস্টিকে মুড়ে সতর্ক ভাবে শেষকৃত্য। যাতে কোনও ভাবে ওই দেহ থেকে ফের সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। আমাদের ব্যক্তিগত গৌরবের, আমাদের ব্যক্তিগত দম্ভের কোনও মূল্যই ওই ভাইরাস দেয় না। ঠিক এই জায়গাটাকেই একটু অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে আমার ইতিবাচকই মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, আমাদের এমন পরিণতিই খুলে দিতে পারে একটা নতুন সম্ভাবনার পথ।
কিন্তু কী সেই পথ?‌
আত্মবিশ্লেষণ! কেন না, মৃত্যু মিছিল তো এখনও শেষ হয়নি! আমেরিকা বা ইউরোপের দেশগুলির কথা বাদ দিলেও ব্রাজিল, কলম্বিয়া বা পেরুতে মৃত্যুর হুঙ্কার এখনও যথেষ্ট জলদগম্ভীর। আফ্রিকার দেশগুলির অবস্থাও ভালো নয়। খুব একটা আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি নয় পশ্চিম এশিয়া বা ভারতীয় উপমহাদেশেরও। এই যখন অবস্থা, তখন কোন সভ্যতার জন্য আজ আমরা এত অহঙ্কার দেখাতে পারি?

সত্যিই আজ ভাবতে হচ্ছে, আমাদের এই পাঁচ হাজার বছরের তথাকথিত সভ্যতা, যার খাঁজে খাঁজে লুকিয়ে রয়েছে হাজরো এক ফাঁকি, তাকে নিয়ে এত গৌরব কেন? পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে প্রাণের সঞ্চার, তার পর আচমকাই এই সভ্যতার জাঁকিয়ে বসে পড়ার মাঝে ইতিহাস তৈরি করতে গিয়ে আমরা তো শুধু অঙ্ক মেলানোরই চেষ্টা করে গিয়েছি! কী সুন্দর ভাবেই না ফাঁকগুলো বুজিয়ে দিয়ে সকলকে বলতে চেয়েছি, এই দ্যাখো, এই আমাদের আধুনিক শিক্ষিত ও উন্নত সভ্যতা।
তার পরিণাম তো আজকের এই স্বার্থপর দৈত্যের বাগান। যেখানে হঠাৎই বসন্ত আসা বন্ধ করে দিয়েছে। অস্কার ওয়াইল্ডের লেখাটা মনে পড়ে? আশাবাদী ছিলেন তিনি। খুব আশাবাদী ছিলেন। তাই বলেছিলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। হয়েছে। স্বার্থপর দৈত্য আত্ম–আবিষ্কার করতে পেরেছে। —আমরা কি পারব না?
প্রশ্নটা কঠিন। উত্তরটা বোধ হয় আরও কঠিন। তবু বলি, পারতেই হবে। ধর্ম, জাতপাত, দ্বেষ ভুলে আমাদের বুঝতে হবে, আমরা একা এই পৃথিবীতে বাঁচতে পারব না। আমরা একা চলতে পারব না।
অথচ আমাদের সামনেই রয়েছে আগামীর পথ। সেই পথে চলতে হবে পাশাপাশি। আর তা আমাদেরই।
চলতে চলতে যেদিন চিলির সান্টিয়াগো থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে কোনও গ্রামের কারও জীবনসংগ্রামের কথা আমরা অনায়াসে মনে করতে পারব, নামিবিয়ার উইন্ডহোকে কোনও শিশুর কান্নার কারণ বুঝতে পারব, অস্ট্রিয়ার ইনসব্রুকে কোনও নিঃসঙ্গ বৃদ্ধার যন্ত্রণা বুঝতে পারব, প্যারিস থেকে বুখারেস্ট, মস্কো থেকে টোকিও, মেলবোর্ন থেকে বুয়েনস এয়ার্স, ঢাকা থেকে কলকাতা, বেঙ্গালুরু থেকে তেহরান, বেইরুট থেকে রাবাত —সব মানুষের গলায় শোনা যাবে মানুষেরই জীবনের কথা, সত্যি বলছি, সেদিন গোটা সভ্যতাটাই খুঁজে পাবে আনন্দ–ঐশ্বর্যের নিখুঁত ঠিকানা।

সেই দিনটা কি আজ এসে যায়নি? নতুন করে ভাবার সময় যে এসে গিয়েছে, সে কথা কি এই অসহনীয় করোনা–সময় আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে না? নাকি এখনও আমিই শ্রেষ্ঠ, আমিই মহান, অবশিষ্ট পৃথিবী মূর্খ, এই অর্থহীন আত্মঘাতী শ্লাঘায় ডুবে যেতে চাইব? এখনও কি নিজের সাফল্য প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে চোরাবালিকেই ঘর তৈরি করার জমি হিসেবে চিহ্নিত করে যেতে থাকব?
কিন্তু, আর কতদিন? আর ‘কতটা কান পাতলে তবে কান্না’ শুনতে পাব আমরা? কেন এখনও বলতে পারব না, ‘বন্ধু, তুমি কেঁদো না, আমারও কান্না আছে’? কেন চিৎকার করে বলতে পারব না, ওই যে সামনে যে পথ চলে গিয়েছে অনন্তের দিকে, বন্ধু চলো, আজ আমরা একসঙ্গে সেই পথ চলি। দেখো বন্ধু, একদিন নিশ্চয়ই পৌঁছে যাব সেই নিশ্চিন্তের বিন্দুতে। মনে রেখো, মাঝের এই সময়টুকু আমরা একা নই। তোমার–আমার সুখ–দুঃখ, হাসি–কান্না সব মিলেমিশে যাবে দিন–রাত্রি বা গোধূলির রঙে।

সত্যি বলছি, পরিষ্কার বুঝতে পারছি, পৃথিবীটা সত্যিই বড় সন্দেহজনক হয়ে গিয়েছে। তবু বলি, গিয়েছে নয়, ওটা হোক গিয়েছিল। যাতে আমরা বলতে পারি, একদিন পৃথিবীটা সন্দেহজনক হয়ে গিয়েছিল। আজ ফের আমরা সবাই মিলে সেই সন্দেহ থেকে মুক্ত হতে পেরেছি। আজ আমরা সকলেই বুক ভরে সবুজ গাছগুলির কাছ থেকে শ্বাস নিতে পারছি। আজ পৃথিবীটা অনেক বেশি সুন্দর। এবং, আন্তরিক।‌

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..