নিজস্ব প্রতিবেদক: রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পাঠাও-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া টাইরেস হাসপিল ফাহিমের সহকারী ছিলেন। তার কাছ থেকে ফাহিম বড় অঙ্কের অর্থ পেতেন বলে ধারণা করছে মার্কিন গোয়েন্দারা।
বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়েছে, গত ১৭ জুলাই শুক্রবার তাকে গ্রেফতারের পর নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান রডনি হ্যারিসন বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি ভুক্তভোগীর (ফাহিম) আর্থিক ও ব্যক্তিগত বিষয়গুলোর তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে অভিযুক্তের কাছে ভুক্তভোগী বড় অঙ্কের অর্থ পেতেন।’
এদিকে নিউইয়র্কের পুলিশ টাইরেস হাসপিলকে গ্রেফতার করার পর ফাহিম সালেহ হত্যা সম্পর্কে খুঁটিনাটি কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়। পুলিশ প্রথমে ধারণা প্রকাশ করেছিল, পেশাদার খুনিরা এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা বলছে, তদন্তকারীদের কয়েকজনের সন্দেহ, হাসপিল গোয়েন্দাদের দিকভ্রান্ত করতে এ রকম একটি ধারণা দিতে চাইছিলেন যে, এই হত্যাকান্ডটি পেশাদার খুনিদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) ফাহিম সালেহর বোন ম্যানহাটনের অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে প্রথম মরদেহ দেখতে পান। এরপর প্রাথমিক তদন্ত শেষে ধারণা করা হয়, তাকে সোমবারই হত্যা করা হয়। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের গোয়েন্দা প্রধান রডনি হ্যারিসনকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদ সংস্থা সিএনএন জানাচ্ছে, সোমবার (১৩ জুলাই) দুপুরে সালেহকে হত্যা করার আগে হাসপিল তাকে বৈদ্যুতিক টেজার গান (যার সাহায্যে মানুষকে সাময়িকভাবে নিশ্চল করা যায়) দিয়ে নিশ্চল করেন। পরে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন।
এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস এবং নিউইয়র্ক পোস্টের খবর অনুযায়ী, ফাহিমকে খুন করার পর গাড়ি ভাড়া করে ম্যানহাটনের একটি দোকানে যান হাসপিল, যেখান থেকে তিনি অ্যাপার্টমেন্ট পরিষ্কার করার জিনিসপত্র কেনেন। এই সময় হাসপিল ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া দেন। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, পরের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) হাসপিল ফাহিম সালেহর অ্যাপার্টমেন্টে যান হত্যার আলামত মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে। পুলিশ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস আরও জানাচ্ছে, মঙ্গলবার দুপুরে ফাহিম সালেহর বোন যখন অ্যাপার্টমেন্টে যাচ্ছিলেন তখন হত্যাকারী মরদেহ টুকরো টুকরো করছিলেন। ফাহিম সালেহর বোন উপরে উঠে আসার আগে পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যান।
নিউইয়র্ক পোস্ট তাদের সূত্র উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, বাড়ি ভাড়া নেওয়ার অ্যাপ এয়ারবিএনবির মাধ্যমে বুধবার (১৫ জুলাই) নিউইয়র্কের ক্রসবি স্ট্রিটের একটি বাসায় ওঠেন হাসপিল। ওই লেনদেনও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছিলেন তিনি, যার সূত্র ধরে তদন্তকারীরা হাসপিলের খোঁজ পান। ফাহিম সালেহর ওপর ব্যবহৃত টেজারটিও হাসপিল নিজের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনেন বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। হাসপিলের গ্রেফতারের পর থেকে তার ব্রুকলিনের অ্যাপার্টমেন্ট এবং তাকে যেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই অ্যাপার্টমেন্টে পুলিশ তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে খবর প্রকাশ করেছে এনবিসি নিউইয়র্ক।
মঙ্গলবার ফাহিম সালেহর লাশ পাওয়ার পর পুলিশকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছিল, অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তা ক্যামেরায় দেখা যায় যে, কালো স্যুট এবং কালো মাস্ক পরা একজন ব্যক্তির সঙ্গে একই লিফটে প্রবেশ করেন ফাহিম সালেহ। লিফট ফাহিম সালেহর অ্যাপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়ালে দুজনেই সেখান থেকে বের হয়ে যান। এরপর ফাহিম সালেহ তার অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করেন। তখন সেই ব্যক্তি ফাহিম সালেহকে অনুসরণ করে। পুলিশ বলছে, এরপর দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএনএন-এর খবর অনুযায়ী, অভিযুক্ত হাসপিল ফাহিম সালেহর অর্থ আত্মসাৎ করার পরও তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিয়ে তাকে তা শোধ করার সুযোগ দিয়েছিলেন ফাহিম সালেহ।