সাংবাদিক নির্যাতন, ব্যবসায়ী লোকজন টার্গেট করে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করেও মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো এসআই আবু তাহের ভূঁইয়ার কাছে এগুলো স্বাভাবিক ব্যাপার।
বনানীর বউ বাজার কড়াইল বস্তির মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রক বাবা কাশেম ১৬টি মাদক মামলার আসামি। একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৫ এপ্রিল ২০১৮ বনানীর কড়াইল বস্তি থেকে কাশেমকে আটক করেন বনানী থানার এসআই আবু তাহের। পরে মাত্র ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই আবু তাহের ভূইয়া বলেন, ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে। আমি এমন কিছু করিনি।’
সূত্রে জানা গেছে, বনানী থানার সাবেক এ পুলিশ কর্মকর্তার ক্ষমতার কাছে এলাকার অনেকেই অসহায় ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, কড়াইল বস্তিতে ঘর বেচা-কেনায় চাঁদা দিতে হতো তাকে। এছাড়া বস্তির ঘর দখলও করতেন তিনি। অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার। বনানী থানা এলাকায় পুলিশের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন তিনি। তার সিন্ডিকেটে ছিলেন, এএসআই ওমর ফারুক ও কনস্টেবল সহিদ। তারা বনানী থানা এলাকার অলিগলি থেকে নিরীহ সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করে মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময় ছেড়ে দেন। যারা চাহিদামত টাকা দিতে পারতেন না তাঁদেরকে ইয়াবা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানোটা নিত্যদিনের ঘটনা ছিল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, একসময়ে কড়াইল বস্তির বাসিন্দা রাজু বর্তমানে গ্রামের বাড়ি জামালপুরে থাকেন। তার বাড়ি দখল ও তাকে এলাকাছাড়া করতে পুলিশ ও প্রভাবশালীরা নানাভাবে হয়রানি করেছেন তাকে। পেন্ডিং মামলার আসামি করে বনানী থানার তৎকালীন এসআই আবু তাহের ভূইয়া গ্রেপ্তারও করেছিলেন রাজুকে। তাহের তখন কড়াইল বিট ইনচার্জ ছিলেন। বস্তিতে রাজুর বসবাসের বাড়ির রাস্তা বের করে দেওয়ার নামে তার কাছ থেকে এসআই তাহের অবৈধভাবে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজুর সঙ্গে ফোনে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
কথপোকথনের একপর্যায়ে রাজু আরও জানান, বেলতলা ভাঙাওয়াল বস্তি ও বউবাজার বস্তিতে তার কয়েকটি বাড়ি ছিল। তিন বছর আগে একটি দোতলা আধাপাকা বাড়ি ১৬ লাখ টাকায় তিনশ টাকার স্ট্যাম্প করে দিদার নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন তিনি। এটি সরকারি জায়গা হওয়ায় রেজিস্ট্রি বা দলিল করার কোনো সুযোগ ছিল না। যে কারণে স্ট্যাম্পের ওপর ভিত্তি করেই বস্তির বাড়ি বা ঘর বেচাকেনা হয়। বাড়িটির পাশেই আরও একটি টিনের বাড়ি ছিল তার। সেখানে ঘর সংখ্যা ১৫টি। ভাড়াটেদের পাশাপাশি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাসও করতেন সেখানে। এসব ঘরের বাসিন্দাদের বের হওয়ার রাস্তা দিদারের কাছে বিক্রি করা বাড়ির পূর্ব পাশে। দিদার বাড়িটি কেনার পরই পুলিশের সহায়তায় ওই রাস্তা বন্ধ করে দেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জুনায়েদ ও তার সহযোগীরা। রাজুর অভিযোগ- রাস্তা বন্ধে সহায়তা করেছিলেন এসআই আবু তাহের ভূইয়া। পরে রাস্তা বের করে দেওয়ার নামে তার কাছে আবু তাহের ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। রাজু রাস্তা পাওয়ার প্রত্যাশায় নগদ ২০ হাজার টাকা দেন আবু তাহেরকে। পরে আরও ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি। এই টাকা না দেওয়ায় রাস্তা আর পাননি রাজু। বাড়িটির দখল নিতে এসআই আবু তাহেরকে হাত করেন জুনায়েদ। আবু তাহের নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন রাজুকে, যাতে তিনি বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন। শুধু তাই-ই নয়, রাজুকে বাড়ি ছেড়ে দিতে হুমকিও দেওয়া হয়। একপর্যায়ে বাড়িটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন রাজু। বছর দুই-এক আগে দুই লাখ টাকায় ১৫টি ঘর জুনায়েদ নিজের নামে স্ট্যাম্প করে নেন রাজুর কাছ থেকে।
অভিযোগের বিষয়ে এসআই আবু তাহের ভূঁইয়া বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে তিনি বনানী থানা থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি হয়েছেন। রাজু নামে তিনি কাউকে চেনেন না। রাস্তা বের করে দেওয়ার নামে কারোর কাছ থেকে তিনি টাকা নেননি। পেন্ডিং মামলায় গ্রেপ্তারের বিষয়ও তার মনে নেই। জুনায়েদকে তিনি চেনেন। তবে বাড়ি কেনায় জুনায়েদকে তিনি কোনো প্রকার সহায়তা করেননি বলে দাবি করেন। বলেন, ‘এতদিন পর আমার বিরুদ্ধে সব মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’