কলকাতা সংবাদদাতা:বাংলায় কোভিড–১৯ ভাইরাস সংক্রমণে প্রায় প্রতিদিনই আগের দিনের রেকর্ড ভেঙে যাচ্ছে। শনিবার শেষ ২৪ ঘণ্টার যে বুলেটিন প্রকাশ করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ, তাতে এই ছবিটা আরও একবার পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এদিন সংক্রমিত হয়েছেন ২ হাজার ৯৪৯ জন। পাশাপাশি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ২ হাজার ৬৪ জন। এখনও পর্যন্ত সংক্রমিতের এই সংখ্যাই সর্বোচ্চ। গোটা রাজ্যে যে ভাবে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন, সেই তুলনায় পাল্লা দিয়ে সুস্থও হয়ে উঠছেন বহু মানুষ। কোভিড চিত্রে আপাতত রাজ্যের ক্ষেত্রে এটাই একটা ইতিবাচক দিক। অন্যদিকে, এদিন করোনা সংক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন রাজ্যের ৫১ জন মানুষ।
সম্প্রতি রাজ্যে দ্রুত করোনা পরীক্ষার জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জানিয়েছিলেন, এর ফলে সারা রাজ্যে সংক্রমণ পরীক্ষার সংখ্যা বেশ খানিকটা বাড়ানো সম্ভব হবে। তাঁর কথাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। মানুষের শরীরে করোনা নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে সেই যন্ত্রই এখন ব্যবহার করছে আইসিএমআর। ফলে রাজ্য জুড়ে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এখন দিনে গড় পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজারে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা রাজ্যে করোনা পরীক্ষা হয়েছে ২৫ হাজার ১৪৮ জনের। এই পরীক্ষার ফলে সংক্রমিতের সংখ্যাও স্বাভাবিক কারণেই অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। করোনা সময়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লক্ষ ৭৯ হাজার ৬৫৭টি।
দেখা যাচ্ছে, এদিন রাজ্যে যে ২ হাজার ৯৪৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কলকাতা মহানগরীরই রয়েছেন ৬৮৪ জন। এ ক্ষেত্রে উত্তর ২৪ পরগনার স্থান রয়েছে কলকাতার ঠিক পরেই। এই জেলায় এদিন সংক্রমিত হয়েছেন ৬৫৩ জন। এ ছাড়া দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২৩২ জন, হাওড়ায় ২১৭ জন এবং হুগলিতে সংক্রমিত হয়েছেন ১৮৫ জন। এদিনই পূর্ব মেদিনীপুরে ১৪১ জন, পশ্চিম বর্ধমানে ৭০ জন, পূর্ব বর্ধমানে ৫৪ জনের নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আবার জঙ্গলমহলের বাঁকুড়ায় ২৯ জন, পশ্চিম মেদিনীপুরে ২১ জন, ঝাড়গ্রামে ৫ জন ও পুরুলিয়ায় ৩ জন সংক্রমিত হয়েছেন। উত্তর বাংলার জেলাগুলির মধ্যে মালদায় সংক্রমিতের সংখ্যা ১২২ জন, জলপাইগুড়িতে ৮৭ জন, দার্জিলিংয়ে ৭৬ জন, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৫৭ জন, কোচবিহারে ৪০ জন। শেষ ২৪ ঘণ্টায় প্রতিটি জেলা থেকেই সংক্রমিত ধরা পড়েছেন। শনিবার রাজ্যে সংক্রমিতের হার হয়েছে ১১.৭৩ শতাংশ।
ফলে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৬১৫ জন। তবে এই মুহূর্তে কোভিড–১৯ ভাইরাস সক্রিয় রয়েছে ২৫ হাজার ৪৮৬ জনের শরীরে। পাশাপাশি রাজ্যে ৯২ হাজার ৬১৫ জন সংক্রমিতের মধ্যে মোট ৬৫ হাজার ১২৪ জনই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। ফলে রাজ্যে সুস্থতার হার দাঁড়িয়েছে ৭০.৩২ শতাংশ। আর রাজ্যে করোনা সংক্রমণে এখনও পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা হয়েছে ২০০৫ জন। করোনা–কালে একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু সংখ্যা ছিল ৬১ জন। ৫ অগস্ট এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে তাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন। তার পর থেকে সংখ্যাটা একটু একটু করে কমছে।
শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণে যে ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ২০ জনই কলকাতার। এ ছাড়া উত্তর ২৪ পরগনার রয়েছেন ১৯ জন। করোনায় কলকাতায় মৃত্যুর মোট সংখ্যা দাঁড়াল ৯২৭ জন। উত্তর ২৪ পরগনায় করোনায় মৃত্যুর মোট সংখ্যা ৪৬৩ জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এদিন করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, এদিন কোচবিহার, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম এবং পুরুলিয়া থেকে কোভিড সংক্রমণে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।