বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:সারা ভারতে বড় ধরনের নাশকতার ছক কষেছিল আল কায়দা। কিন্তু এনআইএ–র (জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা) তৎপরতায় সেই ছক বানচাল হয়ে যায়। দেশের দুই জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ৯ জন আল কায়দা জঙ্গিকে গ্রেফতার করে তারা। এই ৯ জনের মধ্যে ৩ জনকে ধরা হয়েছে কেরলের এর্নাকুলাম থেকে। বাকি ৬ জন ধরা পড়েছে পশ্চিমবাংলার মুর্শিদাবাদে। যদিও ৯ জনই বাংলার বাসিন্দা। এই ঘটনায় গোটা দেশেই চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। শোরগোল পড়ে গিয়েছে বাংলার রাজনীতিতেও। বিরোধী দলগুলি রীতিমতো তোপ দাগতে শুরু করেছে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে।
এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত জঙ্গিরা বেশির ভাগই অল্প বয়সি। কেউ কলেজ পড়ুয়া, কেউ বা দর্জির কাজ করে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এদের মগজ ধোলাই করেছিল আল কায়দার মূল জঙ্গিরা। দিল্লি–সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা চালানোর জন্য এদের উদ্বুদ্ধ এবং তৈরি করা হচ্ছিল। ধৃতদের কাছ থেকে দেশি ও বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ধারাল অস্ত্রশস্ত্র, অস্ত্রবর্ম, ডিজিটাল ডিভাইস, জেহাদি বক্তৃতার সিডি–কাগজপত্র, বাড়িতে বিস্ফোরক তৈরির নিয়মাবলি ও কাগজ প্রভৃতি উদ্ধার করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ থেকে যারা ধরা পড়েছে, তারা হল নাজমুস সাকিব, লিউ ইয়েন আহমেদ, আতিতুর রহমান, আবু সুফিয়ান এবং মইনুল মণ্ডল। এরা সবাই মুর্শিদাবাদেরই বাসিন্দা। কেরল থেকে যারা ধরা পড়েছে, তারাও মুর্শিদাবাদেরই বাসিন্দা। তারা হল মুর্শিদ হাসান, ইয়াকুব বিশ্বাস এবং মোশারফ হোসেন।
এই ঘটনার পরই রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে নিশানা করে বিরোধী দলগুলি। প্রথম মুখ খোলে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা জাতীয় কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেতা অধীর চৌধুরি বলেন, ‘এই রাজ্য থেকে জঙ্গিদের ধরল এনআইএ। অথচ পুলিশ তাদের কথা জানতেই পারল না। এ থেকে বোঝা যায়, রাজ্যের পুলিশ কতখানি দক্ষ! আসলে, রাজ্যের পুলিশ তো সারাদিন ব্যস্ত থাকে তৃণমূল নেতাদের নিরাপত্তা দিতে আর তাদের সুবিধে–অসুবিধে দেখতে। তাদের আর সময় কোথায় যে, রাজ্যে কারা জঙ্গি দলে ভিড়ছে, তাদের খোঁজ রাখার।’
এর পরই মুখ খোলে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও সরাসরি নিশানা করেন রাজ্য সরকারকে। তিনি বলেন, ‘বাংলা ও কেরল সরকারই ইচ্ছাকৃত ভাবে জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছে। তাদের কাজে সহায়তা করছে। এটাই তাদের রাজনৈতিক রেসিপি।’ তিনি বলেন, ‘রাজ্যের পুলিশ জঙ্গিদের ধরতে পারে না। কিন্তু ‘বিজেপি করার অপরাধে’ সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করতে পারে। বিজেপি কর্মীদের ধরে নিয়ে গিয়ে কখনও গাঁজা কেস দিচ্ছে, কখনও গরু পাচারের কেস দিচ্ছে, কখনও দিচ্ছে মহিলা ঘটিত মামলা। আর জঙ্গিরা স্বাভাবিক ভাবে সারা রাজ্যে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেন, ‘রাজ্যের তৃণমূল সরকার ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির কারণে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এখন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, এই রাজ্য ক্রমশ জঙ্গিদের আঁতুর ঘরে পরিণত হচ্ছে।’ বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। তবে কংগ্রেস বা বিজেপি মুখ খুললেও বাম দলগুলি বিষয়টি নিয়ে এখনও মুখ খোলেনি। অন্যদিকে, কংগ্রেস বা বিজেপির সমালোচনার জবাবে এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।