বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:প্রদীপ ভট্টাচার্য নন, সোমেন মিত্রের মৃত্যুর পর বাংলায় অধীর চৌধুরির ওপরই প্রদেশের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। আর সেই দায়িত্ব নেওয়ার পরই কলকাতায় রীতিমতো গর্জে উঠলেন অধীর। বলে দিলেন, ‘তৃণমূল বা বিজেপিকে বাংলায় আমরা এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দেব না। সর্বভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আমরা স্বীয় লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চাই।’ পাশাপাশি তিনি এদিন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে ‘স্বৈরাচারী’ বলে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে সিপিএম–সহ বামপন্থী দলগুলির সঙ্গে কংগ্রেসের জোট অক্ষুণ্ণ থাকবে বলেও জানিয়ে দেন।
উল্লেখ্য, সোমেন মিত্রের আগে রাজ্যে তিনিই ছিলেন প্রদেশ সভাপতির দায়িত্বে। তার আগে থেকেই তিনি রাজ্যে যথেষ্ট পরিচিত ছিলেন ‘তৃণমূল–বিরোধী’ হিসেবে। তবে সেবার প্রদেশ সভাপতি হিসেবে তেমন সাফল্য দেখাতে পারেননি। বরং, তাঁর সঙ্গে সহমত হতে না পেরে অনেকে কংগ্রেস ছেড়েও চলে যান। বৃহস্পতিবার সমস্ত অভিমান ভুলে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে যাওয়া প্রত্যেককে ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানান। তাঁর সেই আহ্বানকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে প্রথমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘এখন করোনা পরিস্থিতি রয়েছে। তাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হচ্ছে সকলকে। তবে এই পরিস্থিতি কেটে গেলেই সারা রাজ্যে স্বৈরাচারী তৃণমূলের বিরুদ্ধে জবরদস্ত আন্দোলন শুরু করবে কংগ্রেস।’
সিপিএম–সহ বামফ্রন্টের সমস্ত দলের সঙ্গেই কংগ্রেস জোট অক্ষুণ্ণ রাখবে বলে এদিন পরিষ্কার জানিয়ে দেন। জানান, ২০২১ সালে কংগ্রেস বামেদের সঙ্গে জোট করেই তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। বুধবার রাতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে অধীর চৌধুরির নাম ঘোষিত হওয়ার পরই ফোন করে তাঁকে অভিনন্দন জানান মহম্মদ সেলিম–সহ অনেক সিপিএম নেতাই। অধীর বলেন, ‘সিপিএমের সঙ্গে আমরা কখনও সমঝোতা হারাতে চাইনি। গত বিধানসভা ভোটের পর সিপিএমের মনে হয়েছিল, কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলতে গিয়ে তাদের ফল খারাপ হয়েছে। তাই তারা একলা চলতে চেয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের অবস্থান একই ছিল। সিপিএম আবার কংগ্রেসের সঙ্গে নতুন করে রাজনৈতিক আন্দোলন করছে। তাতে সমঝোতা আরও দৃঢ় হচ্ছে। আমরা চাই, এই সমঝোতাকে নির্বাচনেও নিয়ে যেতে। যাতে বাংলায় স্বৈরাচারী তৃণমূলের বিরুদ্ধে জবরদস্ত আন্দোলনে নামা যায়।’ তিনি এ কথাও জানান, বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের আলোচনা শুরু হবে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, কংগ্রেস এবং বামেদের জোট হলে এবং তারা যদি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন শুরু করে, তা হলে শাসক দল তৃণমূলই লাভবান হবে। কারণ, এতদিন বিরোধী ভোটগুলি সব বিজেপির পক্ষেই চলে যাচ্ছিল। তাই বিগত কয়েকটি নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপি ভালো ফল করেছে। কিন্তু কংগ্রেস এবং বামেরা যদি একত্রিত ভাবে তাদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারে, তা হলে বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যাবে, যার ফায়দা তুলবে তৃণমূলই। সূত্রের খবর, তৃণমূলের পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের মতও তাই। কংগ্রেস ও বামেদের জোট প্রচেষ্টাকে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন তিনি।
প্রদীপ ভট্টাচার্য প্রদেশ সভাপতি হতে না পারায় কংগ্রেসে ফের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। বলেন, ‘বুধবার রাতে আমাদের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী আমাকে ফোন করে এই দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশ আমি মাথা পেতে গ্রহণ করেছি।’ এখন রাজ্যে যে অবস্থায় কংগ্রেস রয়েছে, তার মধ্যে এমন দায়িত্ব নেওয়াটা যে একটা চ্যালেঞ্জ, তা তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। কংগ্রেসের অনুগত সৈনিক হিসেবে সেই চ্যালেঞ্জ যে তিনি নিয়েছেন, তা এদিন পরিষ্কার বলে দেন। তিনি বলেন, ‘সোমেন মিত্রের মৃত্যুর পর প্রদেশের দায়িত্ব তো কাউকে নিতে হতই। এটা জরুরিও হয়ে পড়েছিল। তাই আমাকে এই দায়িত্ব নিতে হয়েছে।’