বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা : মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে অমিত শাহের সভায় যোগ দিতে যাওয়ার ঠিক আগে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি দেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই চিঠিতে তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কারণ বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে এতদিন যে ভাবে সাধারণ মানুষের আশীর্বাদ পেয়ে এসেছেন, তা থেকে যাতে তিনি বঞ্চিত না হল, সেই অনুরোধও জানিয়েছেন রাজ্যবাসীর কাছে।
সেই খোলা চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি সত্যিই খুব সৌভাগ্যবান। কারণ, মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসা আমি পেয়েছি। তাঁরা আমাকে ভালবেসে বারবারই তাঁদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। তাঁদের এই ভালবাসাই আমাকে আজ সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, একজন মন্ত্রী হিসেবেও তাঁদের জন্য কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি ধন্য। কিন্তু, একটা অপ্রিয় সত্য কথা হল, সরকারের স্থবিরতা খুব বড় একটি সমস্যা। আজ বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের রাজ্য সেই সমস্যার শিকার। পরিকাঠামো উন্নয়নের মধ্য দিয়েই এই সমস্যাকে দূর করতে হয়। আমাদের রাজ্যেও যেত। কিন্তু এই সরকার তা করেনি। করতে চায়ওনি। এটা খুবই দুঃখজনক। আর সেই কারণেই আমরা বারবার ব্যর্থ হচ্ছি।
‘আমাদের প্রিয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ এখন একটা কঠিন সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। সেখানেই রাজ্যবাসীকে একটা ঠিক পথ বেছে নিতে হবে। যার তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পড়বে গোটা বাংলায়। বর্তমান শাসক দল তৈরির পিছনে নীচুতলার কর্মীদের অবদানই সব থেকে বেশি। নীচুতলার কর্মীরাই একটু একটু করে দল তৈরি করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, যাঁরা দল তৈরি করেছিলেন, তাঁরা পরে আর দলে প্রাধান্য পাননি। আজ তাই মানুষের মন পেতে ‘দুয়ারে সরকার’–এর মতো প্রকল্প নিতে হচ্ছে। এর মানে তো এই যে, এতদিন মানুষের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব ছিল বিশাল। তাই মানুষের কাছে যেতে পারেনি সরকার।
‘সেই কারণে আজ আমাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনেক ভাবনাচিন্তা করেই ৫০ বছর বয়সে আমি জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করতে চলেছি। তাই আমি দল থেকে পদত্যাগ করেছি। এ কথা আজ স্বীকার করে নিতে হবে, তৃণমূলের মধ্যে পচন ধরতে শুরু করেছে। যে তৃণমূলের জন্য আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছি, যে দলটিকে দু’দশক ধরে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন সাধারণ কর্মীরা, সেই দল আজ সাধারণ কর্মীদের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে। অথচ সোনার বাংলা তৈরি করাই ছিল দলের সাধারণ কর্মীদের লক্ষ্য। তাঁরাই সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মা, মাটি, মানুষের কাজ করে গিয়েছেন। যে সব মানুষ এই দলকে তৈরি করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, বলা বাহুল্য, আজ তাঁরাই ব্রাত্য, অপমানিত।
‘রক্ত, ঘাম ঝরিয়ে যে দলকে আমরা গড়ে তুলেছি, সেই দল আজ আর নেই। সেই এখন আর আদর্শ মেনে চলে না। আমাদের আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে সেই দলই। জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হলেও সেই দলের কাছে জনগণের রায়ের কোনও মর্যাদা নেই। জনগণের রায়ের সঙ্গে সেই দলই আজ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এখন রাজ্য এবং দেশের উন্নয়নের বিষয়টিতে দলের লক্ষ্য নেই। বরং ব্যক্তি ও পরিবারতন্ত্রই একমাত্র দল পরিচালনার হাতিয়ার এবং মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।’