1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

বাংলার রাজনীতিতে ইন্দ্রপতন, প্রয়াত সোমেন মিত্র

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০২০
  • ২০৮ Time View

কলকাতা সংবাদদাতা:এই করোনা পরিস্থিতিতে এই সেদিনও তিনি কোভিড মোকাবিলায় কেন্দ্রের ব্যর্থতা নিয়ে তোপ দেগেছিলেন। এমনকী, রাজ্যে রেশন দুর্নীতি নিয়ে ওঠা অভিযোগেও রাজ্য সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন আগে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন। হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছিলেন। তাঁর ছেলেও সে কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু বুধবার রাতেই অবস্থা বদলে যায়। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। ভারতীয় সময় রাত পৌনে দুটো নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

বাংলার রাজনীতিতে এক সময় ‘প্রিয়, সুব্রত, সোমেন’ একসঙ্গে উচ্চারিত হত। এই ত্রয়ীর একজন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি কয়েক বছর আগে মারা যান। সুব্রত মুখোপাধ্যায় এখন রাজ্যের মন্ত্রী। আর সোমেন মিত্র ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। রাজনৈতিক জীবনের সূচনায় তিনি কংগ্রেস নেতা গনিখান চৌধুরীর শিষ্য হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ১৯৭২ সালে প্রথমবার শিয়ালদা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হন। যদিও ১৯৭৭ সালে ওই কেন্দ্র থেকে বিজয়ী হন জনতা পার্টির বিনয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর ফের ১৯৮২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত শিয়ালদা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে টানা কংগ্রেস বিধায়ক ছিলেন। তাঁর সভাপতি থাকার সময়ই মতবিরোধ হয় প্রদেশ এবং যুব কংগ্রেসের। কংগ্রেস ছাড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গড়ে তোলেন তৃণমূল কংগ্রেস। ক্রমে সেই তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় আসে।

এক সময় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে মতপার্থক্যে জড়ান সোমেন মিত্রও। এর জেরে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে ২০০৮ সালে প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস গড়ে তোলেন। তার পরই ঘটে চাঞ্চল্যকর পরিবর্তন। রীতিমতো খবর সৃষ্টি করে ২০০৯ সালে তিনি যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেন। ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদও হন। তবে কেন্দ্রীয় রাজনীতি নিয়ে তিনি তেমন আগ্রহী ছিলেন না। তাই সাংসদ হিসেবে তাঁকে তেমন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। তাঁর স্ত্রী শিখা মিত্রও তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করে বিধায়ক হয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গেও একসময় মতপার্থক্য শুরু হয় সোমেন মিত্রের। ২০১৪ সালে ফের কংগ্রেসে ফিরে আসেন। শুধু তাই নয়, ফের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও হন। আমৃত্যু এই পদে ছিলেন।

রাজ্য রাজনীতিতে যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী নেতা ছিলেন সোমেন। উত্তর কলকাতার মানুষের কাছে তিনি ‘ছোড়দা’ নামেই বেশি পরিচিত। আমহার্স্ট স্ট্রিটে তাঁর কালীপুজো ‘সোমেন মিত্রের পুজো’ নামে বিখ্যাত। কয়েক সপ্তাহ আগে এবার করোনা পরিস্থিতিতে এই পুজো কী ভাবে হবে, তা নিয়ে বৈঠকও হয়ে গিয়েছিল। তার পরই পুজোর প্রাণপুরুষ চলে গেলেন। প্রতি বছর পুজোর দিন সারা রাত বসে থাকতেন মণ্ডপে। পুজো শেষ হলে প্রসাদ খেয়ে যেতেন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে। এবারও হয়তো আমহার্স্ট স্ট্রিটে পুজো হবে। কিন্তু সকলের প্রিয় ‘ছোড়দা’ আর সেই পুজোয় থাকবেন না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বেলভিউ ক্লিনিক থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যালয় বিধান ভবনে। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ শায়িত থাকে তাঁর দেহ। রাজ্য কংগ্রেসের বহু নেতা ও কর্মী তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। তার পর সেখান থেকে তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজ্যের বিধানসভা ভবনে। কিন্তু সেখানে তাঁর দেহ নিয়ে আসতে একটু দেরি হয়। ফলে উপস্থিত হলেও তাঁর মৃতদেহে মালা দিতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে তাঁর কাজ ছিল। তাই তিনি তাঁর দেহ পৌঁছনোর আগেই চলে যান। তবে বিধানসভা ভবনে রাজ্য সরকারের অনেক মন্ত্রী ও শাসক দলের নেতারা মালা দেন সোমেন মিত্রের মৃতদেহে। বিধানসভা ভবন থেকে ৩ নম্বর লোয়ার রডন স্ট্রিটে তাঁর বাড়িতে দেহ নিয়ে যাওয়া হয়।

তার পর শিয়ালদার এ কে পয়েন্টে তাঁর আর এক বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় সোমেন মিত্রের শববাহী গাড়ি। সেখান থেকে আমহার্স্ট স্ট্রিটের সেই বিখ্যাত ৪৫–এ। যেখান থেকে রাজ্য রাজনীতিতে উত্থান সোমেন মিত্রের। এক সময় এই ৪৫ আমহার্স্ট স্ট্রিটে রাজ্য রাজনীতির সমস্ত ঢেউ এসে আছড়ে পড়ত। সোমেন মিত্রের আদিবাড়ি এখানেই। এখনও মাঝে মাঝেই চলে আসতেন এখানে। এখানেই হয় তাঁর সেই বিখ্যাত কালীপুজো। এখানে বেশ কিছুক্ষণ শায়িত থাকে তাঁর পার্থিব দেহ। এই ৪৫ আমহার্স্ট স্ট্রিট থেকেই অন্তিম গন্তব্য নিমতলা মহাশ্মশানের দিকে তাঁর দেহ নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। বিকেলে নিমতলা মহাশ্মশানেই পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায় সোমেন মিত্রের নশ্বর দেহ।

সোমেন মিত্রের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন শুধু বাংলা নয়, সারা ভারতের বিখ্যাত রাজনীতিকরা। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ই–মেল করে সোমেন মিত্রের স্ত্রী শিখা মিত্রকে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ভারতের রাজনীতিতে সোমেন মিত্র একটা বিশেষ উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। দলমত নির্বিশেষে সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন।’ শোক প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘বিধায়ক, সাংসদ এবং দু’বারের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে তিনি রাজ্য রাজনীতিতে স্থায়ী ছাপ রেখে গিয়েছেন। দৃঢ় চরিত্রের মানুষ ছিলেন।’ কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর টুইটে লিখেছেন, ‘একজন প্রবীণ ও শ্রদ্ধেয় নেতা ছিলেন তিনি। তাঁর অভাব অনুভূত হবে।’

শোক প্রকাশ করেছেন বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘রাজ্যের রাজনীতিতে তাঁর অবদান কোনও দিন অস্বীকার করা যাবে না। সোমেন মিত্রর মৃত্যুতে আমি স্তব্ধ। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে তাঁর পরামর্শে চরম উপকৃত হয়েছি।’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘সোমেন মিত্রর মৃত্যুর খবরে আমি স্তম্ভিত। তাঁর পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা জানাই।’ টুইট করে শোক প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। তিনি লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের মৃত্যুতে আমি শোকাহত।’ কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ রাহুল গান্ধী টুইটে লিখেছেন, ‘এই কঠিন সময়ে সোমেন মিত্রের পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি আমার ভালবাসা ও সমবেদনা রইল। তাঁকে সবসময় আমরা শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সঙ্গে স্মরণ করব।’

সোমেন মিত্রের বন্ধু হিসেবে পরিচিত বর্তমানে রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘সোমেনের সঙ্গে আমার পরিচয় তো আজকের নয়, বহুদিনের। কত ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে তাঁর সঙ্গে। আজ যে ভাবে তিনি চলে গেলেন, তার পর আর কী বলব! এক–এক করে সকলেই যেন চলে যাচ্ছেন।’ রাজ্য কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক গৌরব গগই বলেছেন, ‘আমার হৃদয় বিদীর্ণ। বাংলার লক্ষ লক্ষ জীবন বদলে দিয়েছেন সোমেনদা।’ শোক প্রকাশ করেছেন একদা সোমেন অনুগামী অধীর চৌধুরিও। কংগ্রেসের সংসদীয় দলনেতা বলেছেন, ‘সোমেন মিত্র আর নেই, এটা ভাবতেই পারছি না। বাংলার একটা অধ্যায় সমাপ্ত হল। সংগ্রাম করে, প্রতিকূলতার মোকাবিলা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমার রাজনৈতিক অভিভাবক ছিলেন তিনি। আমাকে জনপ্রতিনিধি করার মূল কারিগর ছিলেন সোমেনদাই।’‌

সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘ছোটবেলা থেকে রাজ্যের যে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার নাম শুনেছি, তাঁদের মধ্যে অন্যতম সোমেন মিত্র। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকলেও তাঁর সঙ্গে আমার শ্রদ্ধার সম্পর্ক ছিল।’ তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কলকাতার প্রধান পুরপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিম, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজা, সাধন পান্ডে, নির্মল মাজি প্রমুখ।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..